ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে আসামিদের অপরাধ স্বীকার ॥ প্রতিবাদ ও মানববন্ধন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ আগস্ট ২০১৭

আদালতে আসামিদের অপরাধ স্বীকার ॥ প্রতিবাদ ও মানববন্ধন

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৩০ আগস্ট ॥ মধুপুরে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে এলএলবির ছাত্রী রূপা প্রামাণিককে (২৩) গণধর্ষণের পর হত্যা করে চলন্ত বাস থেকে লাশ ফেলে দেয়ার কথা আদালতে স্বীকার করেছে অপর দুই আসামি। বুধবার বিকেলে আসামি গাড়িচালক হাবিবুর রহমান (৩০) পিতা শহিদুল ইসলাম, সুপারভাইজার ফজল আলী গেন্দু (৫৮) পিতা সুলতান আলী, উভয় সাং মির্জাপুর, সদর থানা ময়মনসিংহ। এদের টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত করা হয়। আদালতের বিচারক গোলাম কিবরিয়া তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এছাড়া এ মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে লিটন মিয়া একই আদালতে ১৬৪ ধারায় সাক্ষী স্বীকারোক্তির জবানবন্দী দিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোলাম কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, শামছুল আলমের কাছে পৃথকভাবে বাসের হেলপার শামীম (২৫) পিতা খোরশেদ আলম, গ্রাম নন্দীবাড়ি (পার্ট) থানা মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ, আকরাম (৩০) পিতা মৃত-কামাল হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম (১৯) পিতা-মৃত. এমদাদুল হক সুজা মিয়া, উভয় সাং-মির্জাপুর, সদর থানা ময়মনসিংহ। এরা টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা হতবিহবল হয়ে পড়েছেন। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু ও দ্রুতবিচার দাবি করেছেন। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ ফেরত চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছেন। নিহতের বড় ভাই হাফিজুল প্রামাণিক বলেন, বেওয়ারিশ হিসেবে আমার বোনকে দাফন করা হয়েছে। আমরা আদালতে আবেদন করেছি লাশ উত্তোলন করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার। আমার বাড়ির মানুষ লাশ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। আমার বোনের লাশ নিয়ে দ্রুতই বাড়ি যেতে চাই। এদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও আইনজীবীরা এ মামলার সঠিক বিচারের আশা করছেন। এ হত্যাকা-ের দ্রুতবিচারের দাবিতে বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের নিড়ালা মোড়ে তারা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, দুইদিনে এ মামলার গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামিই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এছাড়া নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ উত্তোলনের আবেদন করেছেন আদালতে। গত শুক্রবার রাতে লাশ উদ্ধারের পর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার মাহবুব আলম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি আমি নিজে দেখছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এ মামলার চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হবে। এছাড়া এ ঘটনায় আরও যদি কেউ জড়িত থাকে তদন্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। শাস্তির দাবিতে সিরাজগঞ্জ মানববন্ধন স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, গ্রামের একটি সাধারণ পরিবারের সংগ্রামী ও প্রতিভাবান মেয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের জাকিয়া সুলতানা রূপাকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সিরাজগঞ্জের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বুধবার দিনভর সিরাজগঞ্জে বন্ধুসভা ও তাড়াশে নাগরিক সমাজ মানববন্ধন কর্মসূচীসহ প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করেছে। এদিকে রূপার পরিবারেও চলছে শোকের মাতম। রূপার মা শোকে কাতর হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে তাড়াশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার মেধাবী জাকিয়া সুলতানা রূপার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তাড়াশে প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। এ সময় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বক্তারা বলেন, গ্রামের একটি সাধারণ পরিবারের সংগ্রামী অসাধারণ প্রতিভাবান মেয়ে জাকিয়া সুলতানা রূপার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেছেন রূপার মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার স্বপ্ন আঁতুর ঘরেই মরে গেছে। কিছু অমানুষ রূপার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পরিবর্তনের পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক রাজু, শিক্ষক রহমত উল্লাহ, সনাতন ধর্মীয় সংস্থার সভাপতি তপন কুমার গোস্বামী, তাড়াশ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী খন্দকার, সমকালের আতিকুল ইসলাম বুলবুল, জেলা বাসদ এর সমন্বয়ক নবকুমার কর্মকার, অধ্যাপক সাব্বির আহম্মেদ, সমাজ সেবিকা মোছা. রোকসানা খাতুন, মাই টিভির চলনবিল প্রতিনিধি সনাতন দাস, দৈনিক ইত্তেফাকের তাড়াশ সংবাদদাতা গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। রূপা হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সচেতন নাগরিক সমাজ বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী অব্যহত রাখার ঘোষণা দেন।
×