ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিন॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩১ আগস্ট ২০১৭

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ দিন॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত খুনীদের ফেরত দেয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই অনুরোধ করেন। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস বৈঠক করেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, মানবিক বিবেচনায় আমরা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি এবং এটি আমাদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। এজন্য মিয়ানমারের প্রতি প্রবল চাপ বাড়ানোর জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রেস সচিব বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কোন রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে কিনা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ রয়েছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এলিস ওয়েলস সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা আমাদের ভূমি ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেব না। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মৃত্যুদ-ে দ-িত বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রত্যাবাসনে তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন খাতে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। বেসরকারী খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সকল খাত বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দেশের গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম খোলাখুলিভাবে সরকারের সমালোচনা করছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোন হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে ৭৫০টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসরকারী খাতে ৪৪টি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি। এর মধ্যে ২৪টির কার্যক্রম চলছে।’ নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো সকল ক্ষেত্রে দেশের নারী সমাজ উচ্চ পদে রয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের মাত্র ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে দু’দেশের বাণিজ্য এখন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের আরএমজি পণ্যের বৃহত্তম বাজার। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন। এলিস ওয়েলসের ঢাকা সফরের বিষয়ে বুধবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার পদ্মা অতিথি ভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে এবং বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন এলিস ওয়েলস। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছের যার মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) তারিক সিদ্দিকী, জ্বালানি উপদেষ্টা ডক্টর তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, জ্বালানি ও আঞ্চলিক বিষয়াদি। ঢাকায় অবস্থানকালে ওয়েলস রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস বুধবার কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সেখানে তিনি ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা বিষয়ে আলোচনা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দেবেন। আগামীকাল শুক্রবার কলম্বোতে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকও যোগ দিচ্ছেন। চার দিন ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বন্ধ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা এবং আমেরিকান শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার) ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, কনস্যুলার সেকশন, পাবলিক এ্যাফেয়ার্স সেকশন, আর্চার কে ব্লাড আমেরিকান সেন্টার লাইব্রেরি এবং স্টুডেন্ট এ্যাডভাইজিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। ঈদ-উল-আযহা এবং আমেরিকান শ্রমিক দিবস যথাক্রমে বাংলাদেশ এবং আমেরিকার জাতীয় ছুটির দিন। বুধবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে দূতাবাস বন্ধ থাকলেও আমেরিকান নাগরিকদের জন্য জরুরী সেবা প্রদান করা হবে। এজন্য তারা ৫৫৬৬-২০০০ নম্বরে ফোন করে কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে চাইতে পারেন বলে জানানো হয়েছে।
×