ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেচাকেনা এখনও পুরোদমে জমেনি বিক্রেতা দরে নানা অফার

কোরবানরি পশুতে ভরে গছেে রাজধানীর সব হাট

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩১ আগস্ট ২০১৭

 কোরবানরি পশুতে ভরে গছেে রাজধানীর সব হাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে পবত্রি ঈদ-উল-আযহা। মুসলমান সম্প্রদায়রে এ উৎসবরে মূল অনুষঙ্গ পশু কোরবান। আর তাই গরু-ছাগল, মহষি ও উটসহ কোরবানরি সব পশুর আগমনে জমে উঠতে শুরু করছেে রাজধানীর সবগুলো স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট। কানায় কানায় পরির্পূণ হাটগুলোতে পা ফলোর যনে জায়গা নইে। কোথাও কোথাও কাদায় ও গরুর র্বজ্যে মাখামাখ। বুধবার দনিরে শুরুতে খুব বশেি ক্রতোর দখো না মলিলওে বকিলেে চোখে পড়ছেে সইে চরিচনো দৃশ্য। সন্ধ্যার পর নগরীর অধকিাংশ হাটইে ক্রতোদরে ভড়ি ছলি চোখে পড়ার মতো। তবে বিক্রি নিয়ে খুব বশেি সন্তুষ্টরি কথা জানাতে পারলনে না বপোররিা। বক্রিি বাড়াতে দয়ো হচ্ছে একটি বড় গরুর সঙ্গে ছোট গরু একদম ফ্র। কোনটাতে দয়ো হচ্ছে ছাগল ফ্র। তারপরও ক্রতো টানতে পারছনে না বক্রিতোরা। ক্রতোরা বলছনে, বপোররিা আকাশচুম্বি দাম হাঁকাচ্ছনে। আবার বক্রিতোরা বলছনে, কনো দামও বলছনে না ক্রতোরা। সবাই দাম শুনছনে আর ঘুরে ফরিে দখেছনে। তারপরও ভাল বক্রিরি আশা দখেছনে বপোররিা। তবে এবার হাটে গরু বশেি আসায় দাম শষে র্পযন্ত কমতরি দকিে থাকতে পারে বলে মনে করছনে অনকেইে। দশেী গরুর পাশাপাশি রাজধানীতে ভারতীয় গরু আসার কথা জানয়িছেনে বপোররিা। তাই শষে র্পযন্ত কোরবানরি পশুর দাম কমবে না বাড়বে এটাই দখোর অপক্ষোয় রয়ছেনে নগরবাসী। জানা গছে, এবার রাজধানীর গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ২৪টি পশুর হাট বসছে। এ বছর কোরবানরি হাটে ভারতীয় গরুর আধপিত্য কাটয়িে দশেী গরুর জয়জয়কার। ছোট, মাঝারি,বড়সহ সব ধরনের দেশী গরু বাজারজুড়ে ছড়িয়ে আছে। ভারতীয় গরু আসবে না, সেজন্য গরুর দাম বেশি হবে এমন আশায় নিজ উদ্যোগে রাজধানীতে গরু নিয়ে এসেছেন অনেক খামারি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর হাটগুলোতে যে পরিমাণ গরু আসছে, তাতে সঙ্কট তো হবেই না; বরং প্রত্যাশার তুলনায় গরু বেশি। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন পশু হাট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ হাটেই গরু রাখার নির্দিষ্ট জায়গা পূরণ হয়ে গেছে। ফলে আশপাশের সড়ক ও খালি জায়গা দখল করছেন বেপারিরা। কোরবানির পশুতে ভরে গেছে সবগুলো হাট। তারপরও ট্রাকভর্তি গরু আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এছাড়া নদীপথে ট্রলারে করেও গরু-ছাগল ও মহিষ ঢুকছে রাজধানীতে। এদিকে এবার কোরবানির পশু বেশি উঠায় ইজারাদাররা খুশি থাকলেও বেপারিরা স্বস্তিতে নেই। বরং আমদানি বেশি হওয়ায় বিক্রি নিয়ে তারা কিছুটা চিন্তিত। রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশুতে কানায় কানায় পূর্ণ। কোন কোন হাট নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। অস্থায়ী হাট চলে এসেছে মূল সড়কে। গাবতলীর মূল হাট ছেড়ে ট্রাকস্ট্যান্ডসহ আশপাশের সড়কের পাশে গরু রাখা হয়েছে। গাবতলী হাটের প্রবেশমুখেই গরু বিক্রি করতে দেখা গেছে। রাজধানীর অন্যান্য অস্থায়ী হাটগুলোর সঙ্গে মিশে গেছে অবৈধ হাট। রাজধানীতে যেভাবে গরু আসছে তাতে অধিকাংশ হাট আরও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। অধিকাংশ হাট পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বলছেন, এ বছর বাজারের চরিত্র বোঝা যাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত গরুর দাম বেশি। কিন্তু যে হারে কোরবানির পশু রাজধানীতে আসছে তাতে শেষ পর্যন্ত দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকতে পারে বলে তারা জানান। গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, এ হাটে দেশী জাতের গরুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তবে ভারতের রাজস্থান, অসম, তামিলনাড়ু ও হরিয়ানা রাজ্য থেকেও কিছু গরু এসেছে। এসেছে ভারতীয় উটও। এ হাটের পরিচালনা কমিটি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার থেকে পুরোদমে জমে উঠবে বেচাকেনা। চলবে ঈদের আগের রাত অর্থাৎ শুক্রবার পর্যন্ত। গরুর বেপারিরা বলছেন, এবার ভারত থেকে কোরবানির পশু আমদানি কম হলেও দেশীয় গরু এসেছে অনেক। গাবতলী হাটে পাবনা থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন মনির হোসেন। স্বাস্থ্যবান একটি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতা দিতে রাজি ১ লাখ টাকা। এই পরিমাণ মূল্যে গরু বিক্রি করতে রাজি নন মনির হোসেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এলাকা থেকে লাখ টাকার বেশি দিয়ে কিনেছেন গরুটি। জানালেন, ঢাকায় আনতে ট্রাক ভাড়া গরু প্রতি তিন হাজার টাকা। আর বাড়িতে ১৫ দিন ও ঢাকায় কয়েক দিন রেখে আরও দুই হাজার টাকা খরচ। আরেক বেপারি বেলাল মিয়া জানান, ক্রেতারা দাম বলছেন অনেক কম। গত তিন বছর লস হয়েছে। এবার সেটা পুষিয়ে নেয়ার আশা করছেন এ বিক্রেতা। গরু কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানালেন, বিক্রেতারা লাগামহীন দাম হাঁকাচ্ছেন। কোনভাবেই দাম কমাচ্ছেন না বেপারিরা। তাই অপেক্ষায় আছি শেষ পর্যন্ত গরুর দাম কমে -কিনা! এ হাটে গরু বিক্রি করতে আসা কুষ্টিয়ার বেপারি মোহাম্মদ রইস জনকণ্ঠকে বলেন, এবার তিনি ৮টি গরু নিয়ে এসেছেন। প্রতিটি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। ইতোমধ্যে একটি গরু ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকিগুলো কম দামে বিক্রি করতে রাজি নন তিনি। এ বছর গরুর দাম বেশি হওয়ায় একটি মাঝারি সাইজের গরু কিনতে ক্রেতাকে গুণতে হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার থেকে লাখ টাকা। তবে মোটাতাজা একটি গরুর দাম প্রকারভেদে ২ থেকে ৩ লাখ টাকাও হাঁকাচ্ছেন বেপারিরা। এরমধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান গরুর দাম ৫ থেকে ১২ লাখ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। শরফুদ্দিন মুন্সি নামে এক ক্রেতা জনকণ্ঠকে জানান, কোন গরুর দাম ৭০ হাজার টাকা হলেও দ্বিগুণ টাকা চাইছেন বেপারিরা। গাবতলী হাটে আসা শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বড় আকারের দুইটি গরু কেনেন ৬ লাখ টাকা দিয়ে। এদিকে গাবতলী হাটে ছাগলের বিক্রিও হচ্ছে যথেষ্ট। ৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা দামের ছাগল পাওয়া যাচ্ছে এ হাটে। গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেল নানান অফার দিয়ে কোরবানির পশু বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতা তরিকুল জানান, দরদামে পোষালে গরুর সঙ্গে এই খাসি ফ্রি দেয়া হবে। আর ওই গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। তরিকুলের টার্গেট সাড়ে ৩ লাখ হলেই গরু ছেড়ে দেবেন। সঙ্গে ৩৫ হাজার টাকার ওই খাসি একদম ফ্রি। বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে রাজধানীর অন্যতম বড় কোরবানির গরুর হাট বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয় (আফতাবনগর)। বুধবার আফতাবনগর হাট ঘুরে জানা গেছে, এখনও হাট না জমার পাশাপাশি পশুর মূল্যও তুলনামূলকভাবে কম। বিক্রেতারা দাম কম হওয়ায় গরু ছাড়ছেন না। আবার ক্রেতারা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে কেনাবেচার অপেক্ষা করছেন দু’পক্ষই। নাটোরের গরু ব্যবসায়ী মোঃ উজ্জ্বল জানান, গত রবিবার ১১টি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন তিনি। চারদিনে একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। ক্রেতারা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। আবার যে দাম বলছেন, সে দামে ছেড়ে দিলে লোকসান হয়। সাদা রঙের একটি গরু দেখিয়ে উজ্জ্বল বলেন, এটির দাম ৩ লাখ টাকা চাচ্ছি। কিন্তু এখনও তেমন একটা দাম ওঠেনি। সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন কয়েকজন ক্রেতা। আবার কেউ কেউ দাম শুনে কোন কথা না বলেই চলে যাচ্ছেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে হাটে ঘুরছিলেন ক্রেতা আমানউল্লাহ। পছন্দমতো গরু দেখছেন, দাম শুনছেন। তিনি জনণ্ঠকে বলেন, গরু দেখছি, আজ কিনব না। দাম মনে হচ্ছে খুব একটা বেশি নয়। গতবারের মতোই। তবে বিক্রেতারা বেশি চাচ্ছেন। কোন কোন ব্যবসায়ী জানান, হাটে গরু কেনার পর হাসিল দেয়ার সময় প্রকৃত দামের সঙ্গে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। এ কারণে বাজারে গরুর দাম কমের একটা আওয়াজ আছে। ক্রেতারা মনে করছেন, গরুর দাম কম। তাই তারাও কম বলছেন। কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী হাসিবুর রহমান বলেন, গরু কেনার পর ক্রেতারা হাসিল কমাতে বিক্রেতাদের দাম কম বলতে বলেন। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনে হাসিল দিতে গিয়ে বলেন ৮০ হাজার টাকা। তারা আমাদের বলেন, আপনাদের সমস্যা কি? দাম কম বলবেন। এ কারণে বাজারে কম দামের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে। অন্যরা কিনতে এসে সেভাবেই দাম বলেন। হাট এখনও জমজমাট না হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের অনেকেই মনে করছেন, দাম কমার আশায় ক্রেতারা বসে আছেন। আগে কিনলে গরু রাখার জায়গা ও খাওয়ানোরও সমস্যা আছে। এসব কারণে সবাই শেষ মুহূর্তে কিনতে চায়। তবে বৃহস্পতিবার থেকে এ হাট জমে উঠবে বলে আশা করছেন তারা। চুয়াডাঙ্গার গরু ব্যবসায়ী আশরাফুল বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এ হাটে আসি। আসলে মানুষ শেষ মুহূর্তে কেনার অপেক্ষায় থাকেন। অনেকেই মনে করেন- বেশি গরু এলে দাম কমবে। বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, আসলে গরু কিনে রাখার জায়গার সমস্যা আছে, খাওয়ানোর সমস্যা আছে। আগে থেকে কিনলে দুর্বল হয়ে যায়। বৃহস্পতি-শুক্রবারের মধ্যে সবাই কিনে ফেলবেন। এদিকে এ হাটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। গরুর মালিক আলী হোসেনের দাবি এ হাটে সবচেয়ে বড় গরুটি তার। নেপালি প্রজাতির এই গরুটির নাম দিয়েছেন লাল বাহাদুর। বয়স তিন বছর দুই মাস। তবে ক্রেতাদের বলা দামে হতাশ গরুর মালিক। হাটের মূল রাস্তা ধরে একটু ভেতরে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল বিশাল একটি গরু। গরুটির মালিক নিয়ামত হোসেন জানালেন, তার এই গরুটির নাম নবাব। নিয়ে এসেছেন পাবনা থেকে। দাম হাঁকাচ্ছেন একদাম ১০ লাখ টাকা। তবে যিনি গরুটি কিনবেন তাকে বিনামূল্যে একটি ছাগল দেয়ার কথা জানালেন এই বেপারি। আফতাবনগর গরু হাটের ইজারাদার আব্দুর রহমান রুবেল বলেন, এই হাটে প্রতিবছর ৫০ হাজার গরু আসে। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার গরু এসেছে। গরু কম হওয়ার কারণে বেপারিরা এখন পর্যন্ত বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। এমনকি বাজারে ভারতীয় গরু আসেনি তেমন। শেষ পর্যন্ত গরু যদি হাটে না আসে, তাহলে এবার গরুর বাজার চড়া হবে।
×