ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বিএসএমএমইউর

শোকের মাসে মুজিব পাঠ, বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে নিয়ে বাস্তব চর্চা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৩১ আগস্ট ২০১৭

শোকের মাসে মুজিব পাঠ, বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে নিয়ে বাস্তব চর্চা

মোরসালিন মিজান ॥ আগস্টের যে শোক, না, শেষ হবার নয়। পিতা হারানোর শোক শেষ হবে না কোনদিন। মাসের পুরোটাজুড়ে তাই বিষাদ ছুঁয়ে ছিল। কথা কবিতা গানে বেদনার বিস্তার ঘটেছে। বাঙালীর মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতাও। তবে প্রচলিত আনুষ্ঠানিকতা থেকে একটু দূরেই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার মহানায়কের নামে যে প্রতিষ্ঠানের নাম, সেখানে শোকই শেষ কথা নয়। ছিল সচেতন নানা উদ্যোগ। মাসব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে ব্যতিক্রমী মুজিব পাঠ ও চর্চার আয়োজন করা হয়। বহুবিধ পাঠ ও চর্চা বলে বঙ্গবন্ধু তাঁর দেশের তাঁর জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সেই সেবার মানসিকতা আর মহান আত্মত্যাগের ইতিহাস দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছিল বিশেষ কর্মসূচী। ‘রোগীর সোবায় হই আরও যত্নবান’ স্লোগানে চলা কর্মসূচী বুধবার শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে প্রবেশ করতেই দৃশ্যমান হন জাতির জনক। নিচতলার বিশাল দেয়ালে ততোধিক বিশাল বঙ্গবন্ধু। মহান নেতার অনন্য সাধারণ ম্যুরালটি গড়েছেন খ্যাতিমান শিল্পী হামিদুজ্জামান। ২০ বাই ১০ ফিট মাপের ম্যুরালে রাজনীতির কবি। অপেক্ষাকৃত সৌম্যশান্ত চেহারা। সাদা রং দেয়ালে সিমেন্টের রিলিফ ওয়ার্ক। শান্তির কপোত ওড়িয়ে দিয়েছেন শেখ মুজিব। চোখ একবার সেদিকে গেলে সরতে চায় না। আগস্টের প্রথম দিন এখানে এই প্রতিকৃতির সামনে মিলিত হন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফুল দিয়ে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শুরুটা হয় এভাবেই। একইদিন ডি ব্লকের সামনে নার্সিং সেবার মানোন্নয়ন ও সকল ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ডে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরদিন সান্ধ্যকালীন রাউন্ড সুনিশ্চিত করতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংলাপের আয়োজন করা হয়। এর পর থেকে আরও জোরদার হয় সান্ধ্যকালীন রাউন্ড। দারুণ উপকৃত হন রোগীরা। আলাদা করে বলতে হবে ১৫ আগস্টের কর্মসূচীর কথা। ‘রোগীর সেবায় হই আরও যতœবান’ স্লোগানের বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় এদিন। কালো পোশাক আর কালো ব্যাজ ধারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চিকিৎসক কর্মচারী সকলেই কাজে মনোযোগ দেন। সরকারী ছুটির দিনে বিনা খরচে দেয়া হয় উন্নত চিকিৎসা সেবা। অবশ্য বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়াই বড় কথা নয়। এদিন দেশের বিখ্যাত সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আউটডোরে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় প্রতিটি বিভাগের প্রধান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সশরীরে উপস্থিত থেকে রোগী দেখেন। অন্য সময় সাধারণ রোগীরা তাদের দেখা পান না। পান না বললেই চলে। অথচ বঙ্গবন্ধুর ভালবাসাবোধ সেবার মানসিকতা নিজেদের মধ্যে ধারণ করতেই কেমন বদলে যায় দৃশ্যটা। সেদিন অন্য ব্যস্ততা ঝেরে ফেলে ক্যাম্পে যোগ দেন সকল ডাক্তার। উপাচার্য কামরুল হাসান খান, এএসএম জাকারিয়া, শহীদুল্লাহ সিকদার, মোঃ আব্দুল্লাহ-আল-হারুন, কর্নেল ওয়াহাব, মুহাম্মদ আবুল হাসনাত, একেএম সালেক, ফরিদ উদ্দিন, এস এম মুস্তফা জামান, জিলান মিয়া সরকারসহ সিনিয়র অনেক ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসাপত্র গ্রহণ করেন রোগীরা। এদিন অসংখ্য রোগী ভিড় করেন বহির্বিভাগে। জানা যায়, শুধু ওই দিন ৪ হাজার ৭৮৮ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। চলতি আগস্ট মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৪ দিনে ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৭ জন রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। এভাবে শোককে শক্তিতে পরিণত করার উদাহরণ সত্যি আশাবাদী করে তুলে। রোগীর সেবায় নার্সদেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে বিশেষ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সব সময় মুখে হাসি ধরে রাখার এবং নিজ হাতে রোগীকে ওষুধ খাওয়ানোর নির্দেশ দেয়া হয় সমাবেশ থেকে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ও পুরনো নার্সরাও নব উদ্যমে কাজ শুরু করেন বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে নিয়ে বাস্তব চর্চার অংশ হিসেবে ২২ আগস্ট ‘কারাগারের রোজনামচা’র ওপর বক্তৃতামালার আয়োজন করা হয়। বইটি পাঠ করে তার ওপর আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে অধ্যাপক ডাঃ হারিসুল হকের সঞ্চালনায় পাঠ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ডাঃ তাজভীর আহমেদ, ডাঃ বৃষ্টি দাস, ডাঃ গুলজার, ডাঃ মিতা এবং ডাঃ ইসরাত। নবীনদের এই বলা, আলোচনা, প্রশ্ন ও উত্তরে দারুণ ফুটে ওঠেন জাতির জনক। চিকিৎসকদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অনবদ্য এই দিনলিপির ওপর মূল আলোচনা করেন এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। মুজিবকে আরও জানার স্বার্থে জানতে হয় ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেও। তাই ৮ আগস্ট বিশ্বাবদ্যিালয় উদযাপন করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। অতি সাধারণ বাঙালী নারী কীভাবে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকে আগলে রেখেছিলেন, সে ইতিহাস তুলে ধরেন বক্তারা। এভাবে নানা কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে বুধবার মাসব্যাপী কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। জাতির জনককে অনুপ্রেরণার উৎস করে আগামী দিনগুলোতে এমন আরও উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাঃ কামরুল হাসান খান। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, জাতির জনক আমাদের মাঝে আর নেই। কিন্তু তাঁর স্বপ্নগুলোতো রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের সকলকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। এমন চিন্তা থেকেই রোগীর প্রতি আরও যতœবান হওয়ার ব্রত গ্রহণ করি আমরা। তিনি বলেন, জাতির জনক আমাদের অনেক দিয়েছেন। দেখিয়েছেন, কীভাবে দেশকে দেশের মানুষকে ভালবাসতে হয়। মহান নেতার আত্মত্যাগ, নিজেকে উজার করে দেয়ার শিক্ষা নতুন প্রজন্মের ডাক্তারদের মধ্যে সঞ্চারিত করার চেষ্টা করছি আমরা। এ কারণে রোগীর সেবার মান আরও উন্নত হয়েছে। এ লক্ষ্যে আগস্টের পরও বিভিন্ন উদ্যোগ চলমান রাখার কথা জানান উপাচার্য। হ্যাঁ, আগস্টে অর্জিত শক্তি বছরের বাকি দিনগুলোতেও ধরে রাখতে হবে। ধরে রাখা গেলে শোকের মাসের কর্মসূচী আরও স্বার্থক হবে। উপকৃত হবেন রোগীরা।
×