অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে। গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এ হিসাবে গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ বা ২০৩ কোটি টাকা। তবে পরিচালন মুনাফা কমলেও গেল অর্থবছরে নিট মুনাফা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। মূলত দেশ-বিদেশে সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা পুনর্মূল্যায়নে উল্লেখযোগ্য আয় হওয়ায় নিট মুনাফা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গত রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়মিত সভায় এই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সুষ্ঠু অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংরক্ষণ, প্রয়োজনের আলোকে ডলার ক্রয়-বিক্রয়, রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেয়া, রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংক ব্যবস্থা তথা বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়াসহ নানা ধরনের কর্মকা- করে থাকে। এছাড়া চাহিদার ভিত্তিতে সরকারকে ঋণ জোগান দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারকে দেয়া ওই ঋণের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদ আয় হয়।
এছাড়া অনিয়মের দায়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব কর্মকা-ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুনাফা বাড়ে বা কমে। দেশ-বিদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করে থাকে, তা পুনর্মূল্যায়ন করে প্রতিবছর নিট মুনাফার হিসাব করা হয়। তবে পুনর্মূল্যায়নকৃত আয় বণ্টনযোগ্য না হওয়ায় চূড়ান্ত হিসাবে তা বাদ দেয়া হয়। এতে সরকারকে মুনাফা ও কর্মকর্তাদের বোনাস দেয়া সম্ভব হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা পুনর্মূল্যায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য আয় হয়েছে। এর পরিমাণ ৬ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে নিট ক্ষতি হয়েছিল ৬১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এই ক্ষতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অনেক বেশি ছিল। সে সময় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৬৬১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য আয় হওয়ায় গেল অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিট মুনাফা বেড়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট মুনাফা হয়েছে ৭ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫৩ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছিল ২ হাজার ৬২২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যদিও এর আগে অধিকাংশ সময়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বড় অঙ্কের নিট মুনাফা করেছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট আয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। এ সময়ে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ৫০২ কোটি ও ২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। জানা গেছে, পরিচালনা পরিচালন মুনাফার মধ্যে ৪৫১ কোটি ৪ লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা করবে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণকারী এ সংস্থাটি। এবারও হিসাব বিবরণী প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, যা পুরোপুরিভাবে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিং রিপোর্টিং স্টান্ডার্ডের (আইএফআরএস) সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।