ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লেবাননে নির্যাতনের শিকার মৃত্যুপথযাত্রী ফাতেমা এখন সিআরপিতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩০ আগস্ট ২০১৭

লেবাননে নির্যাতনের শিকার মৃত্যুপথযাত্রী ফাতেমা এখন সিআরপিতে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ লেবাননে যৌন নির্যাতনে ব্যর্থ হয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর দোতলা থেকে ফেলে দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে বাংলাদেশের এক গৃহকর্মীকে। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে গুরুতর আহত গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে (৩০) দেশে ফিরিয়ে আনার পর প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সাভার সিআরপি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে এখন প্রতিনিয়ত মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করে কাতরাচ্ছেন উজিরপুর উপজেলার জল্লা বাহেরঘাট গ্রামের মৃত বেল্লাল সরদারের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। এ ঘটনায় ফাতেমার একমাত্র পুত্র সাগর সরদার বাদী হয়ে বরিশাল মানব পাচার অপরাধ প্রতিরোধ দমন ট্রাইব্যুনালে প্রতারক তিন দালালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর দালালদের পক্ষালম্বন করে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল মামলা উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে প্রধান দালাল মেরিনা বেগম ফের কৌশলে পালিয়ে লেবানন যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। মামলার বাদী ১৩ বছরের কিশোর অসহায় সাগর সরদার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দালালদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ পুরো ক্ষতিপূরণ পেতে ও তার বিধবা মায়ের সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিধবা ফাতেমার উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার সকালে তার কাছে আত্মীয় হেনা বেগম জানান, গত ১০ জানুয়ারি ফাতেমাকে লেবাননের বৈরুত বিমানবন্দর থেকে দালাল মেরিনা তার বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বৈরুতের মিস্তার ফদর নামের এক মালিকের কাছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দেয় দালাল মেরিনা বেগম। সেখানে ওই মালিক ফাতেমাকে অনৈতিক কাজে রাজি করার জন্য প্রায়ই মারধর করত। তার কথামতো কাজ না করলে ফাতেমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়। এরই মধ্যে গত ১৩ মার্চ মিস্তার ফদর জোরপূর্বক ফাতেমার সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতে চাইলে ফাতেমা তাকে বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিস্তার ফদর দোতালা থেকে ফাতেমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এতে ফাতেমার মেরুদ-ের হাঁড় ও ডান হাত ভেঙ্গে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে লেবাননে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে দালাল মেরিনার যোগসাজশে মিস্তার ফদর বৈরুতের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ফাতেমাকে ভর্তি করেন। সেখানে টানা ২৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন ফাতেমা বেগম। ফাতেমার ভাই সহিদ বেপারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর ফাতেমার সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে লেবাননে অবস্থানরত দালাল মেরিনা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার পর সে জানায়, ফাতেমা তার মালিকের সঙ্গে দুবাইতে ঘুরতে গিয়েছে। এর কিছুদিন পর ফাতেমা অতিগোপনে তাদের ফোন করে জানায়, তার ফোন মেরিনা নিয়ে গিয়েছে। সে (ফাতেমা) খুব কষ্টে আছে। দালাল মেরিনা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে যে মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে সেই মালিক তার কথামতো কাজ না করায় তাকে খুব মারধর করছে। সহিদ বেপারী বলেন, এ ঘটনার পর দালাল মেরিনার স্বামী দেশে অবস্থানরত সোহরাব হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার বোন ফাতেমাকে দেশে ফেরত পাঠাতে বলি। পরে সোহরাব তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ফাতেমাকে দেশে ফেরত আনতে হলে বিমান ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। তার দাবি অনুযায়ী ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও ফাতেমাকে দেশে পাঠাতে নানা তালবাহানা শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে লেবাননে অবস্থানরত একই গ্রামের সুজন হাওলাদারের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি ফাতেমা মেরিনা ও মিস্তার ফদরের তত্ত্বাবধানে বৈরুতের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
×