ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে পদ্মার রুদ্ধমূর্তি

ভাঙ্গনের মুখে ১৫ গ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩০ আগস্ট ২০১৭

ভাঙ্গনের মুখে ১৫ গ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বাঘায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম। গ্রামগুলো হলো- চকরাজাপুর, কালিদাসখালী, লক্ষ্মীনগর, দিয়ারকাদিরপুর, করারী নওশারা, ফতেপুরপলাশী, জোতাসী, পলাশী ফতেপুর, উদপুর, দাদপুর, খামারচৌহদ্দি, গড়গড়ি, কামালদিয়াড়, আবদালপুর ও ইউসুফপুর। এসব গ্রামে রয়েছে সাত প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কয়েক শ’ বিঘা আম বাগান। এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত দুই বছরের ভাঙ্গনে চকরাজাপুর গ্রামটি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। গত বছর চকরাজাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি এর আগের বছর সরিয়ে কালিদাসখালীতে আনা হয়েছে। গত বছর এখানে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এবার নদী ভাঙতে ভাঙতে এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের প্রায় ২০০ গজের মধ্যে চলে এসেছে। এ ছাড়া ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে পলাশী ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাকা ভবন ও ওই ইউনিয়নের সাত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই গ্রামগুলোতে শত শত বিঘা জমিতে আমের বাগান করা হয়েছে। প্রতিদিনই ১০ থেকে ২০টি করে আম গাছ নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে। উপজেলার কলিগ্রামের আম বাগান মালিক আসাফুদ্দৌলা বলেন, কালিদাসখালী ও কলিগ্রামের মাঠে তারা প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে আম, ৮০ বিঘায় পেয়ারা ও ৭০ বিঘায় কুল চাষ করেছেন। এখন সবই নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। খালিদাসখালীর মাসুদ রানা বলেন, তাদের পাঁচ বিঘার আম বাগান রয়েছে। এই আম বাগানের এক-চতুর্থাংশ ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষ অন্যত্র বাড়িঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত। আম গাছ নদীর ভেতরে ভেঙ্গে পড়ছে। কেউ কেউ গাছের ডালপালা কেটে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কালিদাসখালী গ্রামের আবদুল মজিদ বলেন, তাদের তিন ভাইয়ের ঘর-ভিটা, সাত বিঘা আবাদি জমি, আম গাছ, নারকেল গাছ ও ১২০টি খেজুর গাছ নদীতে বিলীন হয়েছে। তাদের বাড়িঘর করার মতো আর জায়গা নেই। চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, অন্যের জমি ইজারা নিয়ে এবার বাড়ি করেছেন। এ বছরই চকরাজাপুরের অর্ধশত বাড়িঘর নদীতে ভেঙ্গে গেছে। প্রতিদিনই ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ফসলি জমি ও আম বাগানের ভাঙ্গনও অব্যাহত রয়েছে। এদিকে চকরাজাপুর ইউপির কাজ চলছে চেয়ারম্যান আজিজুল আযমের বাড়িতেই। এক বছর আগে নতুন এই ইউনিয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলার আলাইপুর ও পাকুড়িয়ায় তিনটি ‘টি গ্রোয়েন’ নির্মাণ করতে পারলেই নদীর প্রবাহ দক্ষিণে সরে যাবে। ‘টি গ্রোয়েন’ নির্মাণ করা হলেই ভাঙ্গন থেকে গ্রামগুলো বাঁচানো যেতে পারে। তবে রাজশাহীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘টি গ্রোয়েন’ এখন আর তারা করছেন না। তবে ড্রেজিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজনের উপকার হবে। কিশোরগঞ্জে অর্ধশতবাড়ি নদীগর্ভে মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে উপজেলার তিন ইউনিয়নের হাজারো পরিবার। ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে। আরও শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি যে কোন সময় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে। অপরদিকে নদের পানি বেড়ে সারাদেশের মতো পাকুন্দিয়ায়ও দেখা দিয়েছে অকাল বন্যা। ব্রহ্মহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে জাঙ্গালিয়া, চরফরাদি ও এগারসিন্দুর ইউনিয়নের নিচু এলাকা। বন্যায় অন্তত পাঁচ শতাধিক কৃষকের উঠতি ফসলি সবজি জমি এখন পানির নিচে। এতে কৃষকরা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ সোহরাব উদ্দিন সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাসাধ্য পুনঃবাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। সরজমিনে জানা গেছে, ব্রহ্মহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকুন্দিয়ার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকায় প্রতিদিন নতুন নতুন বসতি ভেঙ্গে চলে যাচ্ছে নদীর বুকে। ইতোমধ্যে শতাধিক পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। ভাঙ্গনের কারণে চরকাওনা ও চরফরাদি ইউনিয়নে চরটেকিসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হতে চলেছে। ভাঙ্গনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ওই এলাকাটি অচিরেই নদীগর্ভে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির কারণে বৃহ্মহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় নদের দুইকূল ছাপিয়ে কৃষি জমিতে পানি প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা তাদের জমিতে পাট, মরিচ, পটল, ঝিঙা, ধন্দুল, চিচিংগা, বেগুন, কাঁচকলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ফসল তোলার সময় ঘনিয়ে আসা মুহূর্তে বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। উঠতি ফসলি সবজি এখন ৩-৪ ফুট পানির নিচে। ফলে ফসল হারিয়ে ওই এলাকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ধারদেনা ও কৃষি ঋণ নিয়ে সবজি আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। ফসল হারানোর কারণে এখন কিভাবে ধারদেনা পরিশোধ করবেন, সে চিন্তায় প্রতিটি কৃষক অস্থির সময় পার করছেন। পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র দাস জানান, বন্যায় ১৮৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষি পুনঃবাসন করা হবে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
×