ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংগ্রামী মাশা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩০ আগস্ট ২০১৭

সংগ্রামী মাশা

গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টেনিস কোর্টের আলোচিত নাম মারিয়া শারাপোভা। অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে টেনিস কোর্টে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। কোর্টের পারফর্মেন্স ছাড়াও বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগীদের মুগ্ধ-বিমোহিত করেছে তার রূপ-গুণ। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন টেনিস থেকে নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন মাশা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে কয়েক মাস আগেই কোর্টে ফিরেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নম্বর ওয়ান। সোমবার থেকে শুরু হওয়া মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্ম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। মারিয়া শারাপোভার ক্যারিয়ারের শুরুটা কিন্তু দুর্দান্ত। ২০০৪ সালে, তখন শারাপোভার বয়স মাত্র সতেরো। ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরক ঘটেছিল তার। সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জিতেই নজর কেড়েছিলেন টেনিসপ্রেমীদের। সেই যে শুরু। এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টেনিস কোর্টের পারফর্মেন্সে আর রূপ-সৌন্দর্য দিয়ে আলাদাভাবেই জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। পাঁচটি গ্র্যান্ডসøামসহ মোট ৩৫টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জিতেন শারাপোভা। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করে দীর্ঘদিন রাজত্বও করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে বিশ্বের জনপ্রিয় এবং শীর্ষ ধনী এ্যাথলেট হওয়ার তকমাটাও গায়ে মেখেছেন তার। কিন্তু হায়! এই শারাপোভাই বিশ্ব টেনিসে কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের জন্ম দেন। গত বছরের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চলার সময় করা ডোপ পরীক্ষায় তার দেহে নিষিদ্ধ উপাদান মেলডোনিয়াম পাওয়া যায়। ওয়ার্ল্ড এ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা) শারাপোভার নমুনা পরীক্ষা করে তার মেলডোনিয়াম নেয়ার প্রমাণ পায়। এরপর থেকেই প্রতিযোগিতামূলক টেনিস কোর্টের বাইরে অবস্থান করছেন মারিয়া শারাপোভা। তবে নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাও মন্দ কাটেনি না তার। মস্কোয় নিজের ক্যান্ডি ব্র্যান্ড সুগারপোভার প্রচারণা নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করেন। এই সময়ে পড়াশোনাও করেছেন রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্ল। টেনিস কোর্টের বাইরে ব্যবসা এমনকি মডেলিংয়েও আলাদা সুনাম রয়েছে শারাপোভার। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার করেন তিনি। তার নতুন রূপ লেখিকার। সেইসঙ্গে বক্সার হিসেবেও! তবে বইটা নিজের সম্পর্কেই লিখেছেন তিনি। যা আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে। এ বিষয়ে তার অভিমত হলো, ‘আমি একটি বই লিখছি, যা সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে। প্রথমে ইংরেজীতে পরবর্তীতে তা রাশিয়ান ভাষায় রূপান্তর করা হবে।’ শুধুই যে বই লিখছেন তা কিন্তু নয়; নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে মারিয়া শারাপোভা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে স্বল্পদীর্ঘ কোর্সও সম্পন্ন করেছেন। এই সময়টাতে শারাপোভা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বক্সার হিসেবেও। তিনি জানান, ‘আমি বক্সিংয়ে চেষ্টা করছি কারণ আমি নিজেকে ভাল ফর্মে রাখতে চাই। তাই কিছু বিশেষ লোক রয়েছে যাদের আমি আঘাত করতে চাই, সেক্ষেত্রে এই বক্সিং শেখাটা হবে অসাধারণ।’ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে স্টুটগার্ট ওপেন দিয়ে কোর্টে ফিরেন শারাপোভা। স্টুটগার্ট ওপেনে শুরুটা অবশ্য দারুণভাবেই করেছিলেন মাশা। কিন্তু বিতর্কের কারণে খেলতে পারেননি ফ্রেঞ্চ ওপেন। সেখানে তাকে খেলার অনুমতি দেয়নি ফ্রেঞ্চ টেনিস ফেডারেশন। এরপর সুযোগ পেয়েছিলেন উইম্বলডনে খেলার। কিন্তু তার বাদ সাধে চোট। ইনজুরির কারণে শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান এই তারকা। তবে ইউএস ওপেনেই কোর্টে নামেন তিনি। মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টে গত তিন বছর খেলেননি শারাপোভা। ২০১৪ সালে সর্বশেষ ফ্ল্যাশিং মিডোতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। সেবার টুর্নামেন্টের চতুর্থ রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়েন পাঁচটি গ্র্যান্ডসøামজয়ী এই টেনিস তারকা। তবে এবার অবশ্য নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েই প্রিয় কোর্টে ফেরার কথা জানান শারাপোভা। ভক্ত-অনুরাগীদেরও তার প্রতি বাড়তি প্রত্যাশা। সেরেনা উইলিয়ামস-ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার মতো তারকাদের অনুপস্থিতিতে মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের মূল আকর্ষণ এবার মারিয়া শারাপোভা। কেননা, নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর এই প্রথম মেজর কোন টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন তিনি। তবে শুরুতেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান এই তারকাকে। কেননা ইউএস ওপেনের প্রথম পর্বেই যে প্রতিপক্ষ হিসেবে সিমোনা হ্যালেপকে পাচ্ছেন শারাপোভা। নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন টেনিস কোর্টের বাহিরে ছিলেন শারাপোভা। অন্যদিকে অন্তঃসত্ত্বার কারণে টেনিস থেকে দূরে রয়েছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নম্বর ওয়ান সেরেনা উইলিয়ামস। সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে এখন পর্যন্ত কোর্টের বাইরে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। ইনজুরির কারণে কোর্ট থেকে ছিটকে পড়েন চেক প্রজাতন্ত্রের পেত্রা কেভিতোভাও। এই সুযোগটাই যেন কাজে লাগিয়েছেন সিমোনা হ্যালেপ। সাম্প্রতিক সময়টা টেনিস কোর্টে দুর্দান্ত কেটেছে তার। এখন পর্যন্ত যদিওবা গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জিততে পারেননি হ্যালেপ তারপরও বেশ কয়েকবারই সম্ভাবনা জাগিয়েছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখলের। সর্বশেষ গত রবিবার শীর্ষে উঠার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন রোমানিয়ার এই টেনিস তারকা। তাই মৌসুমের শেষ মেজর টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনে নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই কোর্টে নামার কথা জানান বর্তমানে র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নাম্বারে থাকা সিমোনা হ্যালেপ। বর্তমানে মহিলা এককে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে অবস্থান করছেন ক্যারোলিনা পিসকোভা। গত জুলাইয়ে জার্মান টেনিসের প্রতিভাবান তারকা এ্যাঞ্জেলিক কারবারকে হটিয়ে প্রথমবারের মতো এক নম্বর স্থানটি দখল করেন তিনি। তবে শীর্ষে উঠেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই চেক প্রজাতন্ত্রের এই টেনিস তারকা। বারবার তা হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন ২৫ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়। তার স্থানটি দখল করার জন্য মরিয়া সিমোনা হ্যালেপ। তিনবার শীর্ষে উঠার খুব কাছাকাছি গিয়েও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ডুবতে হলো রোমানিয়ার এই টেনিস তারকাকে। তারপরও হাল ছাড়ছেন না হ্যালেপ। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোমানিয়ার এই টেনিস তারকা মনে করেন যোগ্যতার বলেই শীর্ষে উঠবেন তিনি। ইউএস ওপেন শুরুর আগেই এক সাক্ষাতকারে সিমোনা হ্যালেপ বলেন, ‘তিনবার বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠার সুযোগ হারালাম। আমি মনে করি যথেষ্ট হয়েছে। এটা নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না। আমার মনে হয়, যদি না ভাবি তাহলেই আমি আরও বেশি স্বস্তি নিয়ে খেলতে পারব এবং আশা করি তা অর্জনও করতে পারব। তবে এটা সত্য কথা যে, আমি যদি যোগ্য হই তাহলে অবশ্যই তা আর্জন করতে পারব। আর না হলে তো আর কিছু করার নেই। ফ্রেঞ্চ ওপেনে তো সত্যিই শীর্ষে উঠার খুব কাছাকাছি উঠে গিয়েছিলাম। উইম্বলডনেও ঠিক তাই। তবে সিনসিনাতির ফাইনালের কথা আমি বলতে চাই না। কারণ এই ম্যাচের ফলাফল খুবই বাজে ছিল। আমার কাছে এটা খুবই চাপ মনে হয়। এবং এই চাপটা দেখা যায় অনেক সময় খুব গুরুত্বপুর্ণ মুহূর্তেই তৈরি হয়। তবে এখন সেটা আর নাই। কেননা এই মুহূর্তে পরিস্থিতিটা এমন যে সবারই শীর্ষে উঠার সুযোগ আছে।’
×