ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

দাবাড়ু শিরিনের অভিলাষ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩০ আগস্ট ২০১৭

দাবাড়ু শিরিনের অভিলাষ

১৭ বছর ধরে খেলছেন মহিলাদের জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে। গত বছর কাক্সিক্ষত শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। রানারআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। তবে এবার আর কপাল পোড়েনি শারমীন সুলতানা শিরিনের। এবার ঠিকই নিজের করে নিতে পেরেছেন ‘ওয়ালটন জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে’র শিরোপাটা। চার বছর পর এই আসরের শিরোপা আবারও পুনরুদ্ধার করলেন এবং এ নিয়ে জাতীয় মহিলা দাবা আসরে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতলেন ফিদেমাস্টার শিরিন। এরআগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে। মজার ব্যাপার, ওই দু’বারই রানারআপ হয়েছিলেন শামীমা আক্তার লিজা, যিনি এবারও হয়েছেন রানারআপ। তবে লিজা গর্ব করতেই পারেনÑ তিনি এবার চ্যাম্পিয়ন শিরিনকে হারিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন হলেও শিরিনের জন্য বিষয়টি ‘গলায় কাঁটা বেধা’র মতোই খোঁচাবে নিশ্চয়ই। সোমবার প্রতিযোগিতার শেষদিনে শিরিন-লিজা দুজনেরই ছিল ‘মাস্ট উইন’ শেষ খেলা। ২৮ বছর বয়সী শিরিন হারলে এবং লিজা জিতলে লিজাই হয়ে যেতেন চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু লিজা নিজ খেলায় জিতলেও লাভ হয়নি। কেননা আহেলী সরকারকে ৩০ নম্বর চালে ঠিকই হারিয়ে শিরোপা জেতা নিশ্চিত করে ফেলেন শিরিন। ‘আত্মবিশ্বাস ছিল আহেলীকে হারাতে পারব। চেনা প্রতিপক্ষ। কোন চাপ না নিয়ে কেবল চেষ্টা করেছি নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার। চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুবই ভাল লাগছে।’ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আগে জনকণ্ঠকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এমনটাই বলেন ১৯৮৯ সালের ২৬ জানুয়ারি জন্ম নেয়া শিরিন। জাতীয় মহিলা দাবায় চ্যাম্পিয়ন হবার সুবাদে শিরিনসহ শীর্ষ পাঁচ দাবাড়ু যোগ্যতা অর্জন করেছেন জর্জিয়াতে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব অলিম্পিয়াড দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার। এই আসরে শিরিন অংশ নিয়ে আসছেন ২০১০ সাল থেকেই। মাঝে শুধু একবার অংশ নেয়া হয়নি (সালটা মনে করতে পারলেন না)। শিরিনের ভবিষ্যত লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম) হওয়া। এজন্য দরকার আরও তিনটি নর্ম অর্জন করা। এজন্য বেশি বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার কোন বিকল্প নেই বলে জানান ২০০১ সালে স্কুল দাবায় ও মহিলা উন্মুক্ত দাবায় রানার্সআপ, ২০০৭ ও ২০১০ সালে জাতীয় দাবায় রানার্সআপ শিরিন। দেশে এখন আইএম আছেন দু’জনÑ রানী হামিদ এবং শামীমা আক্তার লিজা। তাদের কাছ থেকে প্রায়ই দাবা বিষয়ক পরামর্শ নিয়ে থাকেন শিরিন। করেন দাবা নিয়ে শেয়ারিং। দাবায় উন্নতির জন্য প্রয়োজন ভাল কোচ। এ নিয়ে শিরিনের ভাষ্য, ‘আমাদের বিদেশী কোচের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে যে পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টার আছেন তারাই কোচ হিসেবে যথেষ্ট। আমরা তো প্রায়ই গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া ভাইয়ের কাছে (জিয়াউর রহমান) প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি। অনেক উপকৃতও হয়েছি।’ দেশের সব গ্র্যান্ডমাস্টার (নিয়াজ, জিয়া, রাজীব, রাকিব ও রিফাত) এবং বিদেশের গ্যারি ক্যাসপারভ, ভাসিলি ইভানচুক এবং জুডিথ পোলগারের খেলার গুণমুগ্ধ শিরিনের দাবা ফেডারেশনের কাছে তিনটি চাওয়া আছে, ‘ফেডারেশনের উচিত আরও বেশি করে দাবা টুর্নামেন্টের আয়োজন করা এবং দাবাড়ুদের কোচিং দেয়া। এতে করে নতুন-প্রতিভাবান দাবাড়ুরার তৈরি হবে। দাবা ফেডারেশনের দাবা কক্ষের ছোট আয়তন নিয়ে দাবাড়ুরা খুশি নয়। দাবা রুমের পরিসরটা যদি আরেকটু বড় হতো, তাহলে অনেক সুবিধা হতো সবার।’ ২০০৯ সালে এশিয়ান জোনাল দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় হওয়া শিরিন বিয়ে করেছেন ২০১৩ সালে। স্বামী মাসুম খান একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। তিনি সবসময়ই দাবা খেলতে অনুপ্রেরণা জোগান শিরিনকে। পৈত্রিক নিবাস বাগেরহাটে। বর্তমান নিবাস নারায়ণগঞ্জে। এখানেই শিরিনের জন্ম। বাবা মরহুম শাহ আলম। ২০০২ সালে তিনি মারা যান। মা মর্জিনা আলম, গৃহিণী। যখন ক্লাস সেভেনে পড়েন তখন মহিলা ক্রীড়া সংস্থা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার যৌথ উদ্যোগে দাবা কর্মশালার কার্যক্রমে শিরিন অংশ নেন অনেকটা শখের বশেই। এভাবেই দাবার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। ২০০০ সালে ‘টেলিগ্রাফ স্কুল দাবা দিয়ে’ ক্যারিয়ার শুরু করেন শিরিন (এটা আবার তার প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টও)। হয়েছিলেন রানার্সআপ। আগামীতে আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার স্বপ্ন কবে পূরণ হয় শিরিনের সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×