ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩০ আগস্ট ২০১৭

ঈদের অর্থনীতি

ঈদ মানেই আনন্দ উৎসব। আর উৎসবের জন্য থাকে নানা আয়োজন। সেই আয়োজন পূর্ণ হয় নানা উপকরণে। এসব সংগ্রহে ব্যয় হয় অর্থ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মকান্ড বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিখাতের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে কর্মের পরিধি, বাড়ে উৎসবকে কেন্দ্র করে কেনাকাটা। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বড় উৎসব দুই ঈদ উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে ওঠে অর্থনীতি। কেনাকাটা, ভ্রমণ, বিনোদনসহ নানাখাতে মানুষের ব্যয় যায় বেড়ে। ফলে অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়। ঈদকে ঘিরে চাঙ্গা হতে থাকে দেশের অর্থনীতি। ঈদ-উল-আযহা তথা কোরবানি ঈদনির্ভর বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। ঈদের অর্থনীতিটা বাড়ছে প্রতিবছর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পর্যটন। যুক্ত হয়েছে ঈদ বোনাস। সব মিলিয়ে একটি ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে অর্থনীতিতে। ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক পেশারও ঘটছে বিস্তার। তাকে কেন্দ্র করে কোরবানির অর্থনীতিও বড় হচ্ছেই। যেখানে ঈদ-উল-ফিতরের অর্থনীতি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা, সেখানে ঈদ-উল-আযহার অর্থনীতির আকার প্রায় ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। টাকার লেনদেন বাড়ছে। নতুন নোটের সার্কুলেশন বাড়ছে। ফ্রিজ, টিভি প্রভৃতি পণ্যের বিক্রি বাড়ছে। আর এই ঈদের প্রধান দিক কোরবানির পশু বাবদ ব্যয় হয় বিপুল অর্থ। নির্বাচনের বছর হওয়ায় এ অর্থ ব্যয়ের হারও বাড়ছে। এতে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে বাড়তি প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশীয় ডেইরি, পোলট্রি, গৃহসামগ্রী, বুটিক, তাঁত, কামার, জুতা ইত্যাদি শিল্পে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন আসে। মানুষ উৎসবের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অনেক সামগ্রীও কিনে থাকে। মসলা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। সেইসঙ্গে এসবের বাড়ছে দামও। টাকার প্রবাহ বাড়ছে। শহর থেকে গ্রামমুখী হয় টাকা। অর্থনীতিতে এর একটা ইতিবাচক দিক হলো বণ্টন ব্যবস্থায় আসে পরিবর্তন। এতে টাকা পৌঁছে যায় অধিকাংশ মানুষের কাছে। আর নেতিবাচক দিক হলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। কোরবানির চামড়া ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের এ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক প্রায় আট শ’ কোটি টাকা ঋণ দেবে। যদিও এ খাতে বকেয়া ঋণ রয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ, যা আদায় হচ্ছে না। গত বছর দেশে পশু কোরবানি হয়েছে প্রায় এক কোটি পাঁচ লাখ। চলতি বছর দেশের বাজারে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এক কোটি পনেরো লাখ সাতান্ন হাজার পশু। এর সঙ্গে চাহিদা দশ শতাংশ বাড়তে পারে। দেশে গবাদিপশুর পালন বেড়েছে। এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে চুয়াল্লিশ লাখ সাতান্ন হাজার, ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা একাত্তর লাখ। পার্শ্ববর্তী ভারত ও মিয়ানমার থেকে এবার গরু আমদানি করা হচ্ছে। অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হবার ফলে দেশী অর্থ পাচার হ্রাস পেয়েছে। এবার প্রতি পিস চামড়ার দাম গড়ে এক হাজার টাকা ধরা হলে চামড়া কেনাবেচা বাবদ লেনদেন হবে পনেরো শ’ কোটি টাকা। তবে একটা বড় অংশ পাচার হয়ে যায়, আবার যথাযথ সংরক্ষণও করা যায় না। সংরক্ষণ ও পাচার রোধ কমাতে পারলে চামড়ার বাজারমূল্য আরও বাড়তে পারে। হাটে পশু কেনা-বেচায় পাঁচ শতাংশ হারে হাসিল বাবদ কোটি কোটি টাকা আসবে। আবার হাটের অবকাঠামো নির্মাণ, পরিবহন খরচ, বিক্রেতাদের থাকা-খাওয়া খরচ খাতেও ব্যয় হবে প্রচুর অর্থ। চাঙ্গা হয়ে উঠবে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য। কোরবানির পশু সাজাতে ব্যবহৃত উপকরণ খাতে ক্ষুদ্র শিল্পগুলো বিক্রি হবে দেড় কোটি টাকা। ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীদের পাঠানো নগদ ও হুন্ডি আকারে আসা অর্থ স্থানীয় বাজারে প্রবাহিত হবে। গ্রামীণ অর্থনীতি নানাভাবে হয়ে উঠবে চাঙ্গা। কোরবানি ঈদ একটা বৃহত্তর উৎসবে রূপ নিয়েছে। মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে। সেইসঙ্গে লেনদেনও। গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে অর্থ প্রবাহ ব্যাপক হচ্ছে। উৎসবমুখর মানুষের সত্যিকারের উৎসবে পরিণত হচ্ছে এ ঈদ। এবার বন্যাক্রান্ত মানুষের জীবনে ঈদের আনন্দে ভাটা পড়লেও তাদের জন্য ত্রাণ হিসেবে প্রচুর অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রীর সাহায্য খাতে ব্যাপক অর্থ প্রবাহ হবে। ক্রমশ বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি, সচল হচ্ছে জনজীবন।
×