ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৩০ আগস্ট ২০১৭

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র হজ ও কোরবানিতে উত্তাল জিলহজ মাসের আজ ৭ম তারিখ। মজনু হাজীদের লাব্বায়েক ধ্বনিতে উন্মাতাল পবিত্র মক্কা নগরী। আমরা জানি, মানুষ স্বভাব প্রেমিক। সে চায় কোন একটা বিষয়কে অবলম্বন করে তার ভালবাসার চর্চা ও অনুশীলন করতে। আল্লাহ্র প্রতি যারা ভালবাসা পোষণ করেন, তারা যেন কোন একটা পবিত্র বস্তুকে অবলম্বন করে তা প্রদর্শন করতে পারে সেজন্য মহান আল্লাহ দুনিয়াতে তার কতিপয় ‘শাআয়ির’ বা নিদর্শন সৃষ্টি করে রেখেছেন। কুরআনুল কারীমের বহু জায়গায় মক্কা শরীফের বিভিন্ন স্থান বা পবিত্র পাহাড়-পর্বতকে শাআয়িরুল্লাহ বা আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ইবরাহীমপত্মী মা হাজেরার (আ) পদভারে ধন্য সাফা ও মারওয়া পাহাড়কে আল্লাহ তার নিজের নিদর্শন বলে বর্ণনা করেছেন। দুনিয়ার মধ্যে আল্লাহ তায়ালাকে অনুভব করার জন্য তার যেসব কুদরতি নিদর্শন বান্দার জন্য রয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় পুতঃপবিত্রতম অবিনাশী নিদর্শন হলো কালো গিলাফে ঢাকা খানায়ে কাবা। এ পবিত্র বায়তুল্লাহকেন্দ্রিক আমরা হজ পালন করি, জিয়ারতে যাই, ওমরা পালন করি। আর তার দিকে মুখ করে দুনিয়ার অসংখ্য মুু’মিন মুসলমান আল্লাহর নামে প্রতি মুহূর্তে অযুত-কোটি রুকু-সিজদা করে যাচ্ছে। কিন্তু অজ্ঞতা ও উদাসীনতাবশত আমরা অনেকে খানায়ে কাবার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে জানি না। কখনও আমাদের আচরণগুলো হয়ে থাকে অমর্যাদা প্রদর্শনের শামিল। অথচ গোটা দুনিয়াজুড়ে প্রতিনিয়ত তাওহীদ বা আল্লাহপাকের একাত্মবাদের খুশবু ছড়িয়ে পড়ে থাকে এ পবিত্র ঘর হতে। শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগায়’ লিখেছেন : পবিত্র কাবাগৃহ হচ্ছে আল্লাহ পাকের বিশেষ নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব বায়তুল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য তাজীম ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন উম্মতের প্রতিটি সদস্যের জন্যই অপরিহার্য কর্তব্য। আর সর্বোত্তম সময়ে, সর্বোত্তম অবস্থায় কা’বামুখী হয়ে দাঁড়ানোই হলো সর্বোত্তম শ্রদ্ধা নিবেদন ও যথার্থ সম্মান প্রদর্শন। কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর আরেকটি হিকমত এই যে, এর ফলে নামাজীর অন্তরে জন্মলাভ করে খুশু-খুযু তথা একাগ্রচিত্ততা। হৃদয় ডুবে থাকে এক অপূর্বভাব তন্ময়তায়। যেন গোলাম তার মেহেরবান মুনিবের সামনে বিনয়াবনত অবস্থায় দাঁড়িয়ে মনের আর্জি ও কাকুতি পেশ করছে। উপরিউক্ত হিকমতের কারণেই এটা নামাজের অপরিহার্য শর্তরূপে বর্ণিত হয়েছে (খ: ১ পৃ: ৩৬)। পবিত্র খানায়ে কাবা যাকে বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর নামে অভিহিত করছি তা হচ্ছে ইসলামী উম্মাহর কিবলা বা সম্মুখস্থিত পবিত্রতম বস্তু। ইসলামের দ্ব্যর্থহীন ও সুস্পষ্ট নির্দেশ এই যে, দেশ, জাতি, ভাষা ও বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল কলেমা বিশ্বাসী মুসলমান বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দাঁড়াবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে। কালো গিলাফে আবৃত সেই বায়তুল্লাহ, যা নির্মিত হয়েছে শুধু লা-শরীক আল্লাহর একক ইবাদতের উদ্দেশ্যে। কোরানে বর্ণিত হয়েছে : (আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে) মানব জাতির জন্য যে ঘর সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছে সেটা হলো মক্কায় অবস্থিত ঘর। সকলের জন্য বরকতময় এবং বিশ্ব জাহানের হিদায়তস্বরূপ। (সূরা আল-ইমরান : ৯৬)। তাওহীদ ও একত্মবাদের চিরন্তন প্রতীক হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ্ ও হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ্র সুমহান ত্যাগ ও কোরবানির পুণ্যস্মৃতি বহনকারী সেই বায়তুল্লাহ যা আল্লাহর পথের সৈনিকদের মন জাগিয়ে তোলে মহান প্রতিপালকের নামে নিজের জানমাল কোরবানি করে দেয়ার অপূর্ব প্রেরণা। অফুরন্ত উদ্দীপনা। সেই সঙ্গে যোগায় সীমাহীন দুর্যোগ কিংবা প্রতিকূল ঝড়-ঝাপটার মুখে অটল-অবিচল থাকার সাহস ও হিম্মত। কোরানুল কারীমে বলা হয়েছে : আর (তখনকার কথা স্মরণ করুন) যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আ) কা’বা গৃহের ভিত উঠাচ্ছিলেন। (এবং বলেছিলেন) রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলীম- হে মহান প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ থেকে (এই বিনীত প্রচেষ্টা) কবুল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু জানেন এবং বোঝেন। হে মহান প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন। আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে আপনার অনুগত একটি ‘উম্মত’ সৃষ্টি করুন এবং আমাদের অবস্থার প্রতি কৃপা দৃষ্টি করুন। আর প্রকৃতপক্ষে আপনিই কৃপাময় ও দয়াবান। (সূরা বাকারা : ১২৭-১২৮)।
×