ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাখ লাখ মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত মিনার মাঠ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৩০ আগস্ট ২০১৭

লাখ লাখ মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত মিনার মাঠ

আজাদ সুলায়মান ॥ মিনার মাঠ এখন লাখ লাখ হজযাত্রীর পদচারণায় মুখরিত। পবিত্র হজ পালন করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মক্কা থেকে মিনায় তশরীফ এনেছেন। মক্কার পবিত্র কাবা শরীফ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মিনা। বিশ লাখেরও বেশি মুসল্লি ইতোমধ্যে নির্বিঘেœ পৌঁছে গেছেন মিনায়। আল্লাহর মেহমানরা পায়ে হেঁটে ও গাড়িতে করে মিনায় আসেন। এখানে বাংলাদেশের হজযাত্রীরা এবাদত বন্দেগীতে মশগুল রয়েছেন। তারা মিনার মাঠে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ফজরের নামাজ শেষে রওনা হবেন আরাফাতের ময়দানে। ইসলামের পরিভাষায়- আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাকেই হজ বলে। এ বছর মীনায় হজযাত্রীদের সহায়তার জন্য ২৪/৬২ নম্বর তাঁবুতে পাঁচ দিন বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হবে। বাংলাদেশের সব মেহমানকে এখানেই যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে মক্কা হজ কাউন্সিল অফিস ও হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম। শরীয়ত মোতাবেক, মিনার মাঠে পৌঁছার মাধ্যমেই হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু। পবিত্র হজের অংশ হিসেবে আল্লাহর মেহমানরা পাঁচ দিন মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, মক্কা ও মিনায় অবস্থান করবেন। মিনার মাঠে আসার আগে মঙ্গলবার সকালেই প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ নিজ মোয়াল্লেম কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়- নিজ নিজ তাঁবুর নম্বরসংবলিত কার্ড। কেউ হারিয়ে গেলে ওই কার্ড দেখেই শনাক্ত করা হয়। সেজন্য সার্বক্ষণিক এটা গলায় ঝুলিয়ে অথবা হাতের কব্জিতে রাখতে হয়। মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় পাঁচ দিন অবস্থান করতে হয়। সেজন্য নিজ নিজ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়েই তারা মিনার মাঠে আসেন। মিনার লক্ষাধিক খিত্তায় (তাঁবু) তাদের সবাইকে একত্রে কাটাতে হবে পাঁচ দিনই। বাংলাদেশী সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীরা ৭ ও ৮ নম্বর মোয়াল্লেমের অধীনে থাকবেন। তবে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে আসা হজযাত্রীরা থাকবেন বিভিন্ন মোয়াল্লেমের নামে বরাদ্দকৃত খিত্তায়। মক্কা হজ কাউন্সিল সূত্র জানায়, মিনায় হজযাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় শুধু দক্ষিণ এশিয়ার হজযাত্রীদের জন্য ১ থেকে শুরু করে ১৩৭ নম্বর পর্যন্ত মোয়াল্লেম আছেন। মিনার তাঁবু বরাদ্দ হয় জামারাত ও রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে। মোয়াল্লেমকে অতিরিক্ত ফি দিলে জামারাতের (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) কাছে তাঁবু পাওয়া যায়। তেমনিভাবে আফ্রিকা, স্থানীয় সৌদি, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ থেকে আসা হজযাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা জোন। মিনায় এমন সাতটি জোন রয়েছে। এখানেও ভিআইপি হজযাত্রীরা নিজ নিজ সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করার সুযোগ পান। যারা অসুস্থ তারা নিজস্ব গাড়িতেই মিনার একটি বিশেষ প্রান্তে অবস্থান করছেন। মিনার মাঠ থেকে মক্কার বাসিন্দা মইন উদ্দিন নামের এক হজযাত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের উদ্দেশে মঙ্গলবার মক্কা শরিফ থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন। তাদের কণ্ঠে ছিল-মহান আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা শরীফে হাজির হবার ফজিলতের সেই দোয়া-লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক। শরীয়ত মোতাবেক-হজের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ফজর পর্যন্ত তারা অবস্থান করবেন মিনায়। সেখানে সারা জীবনের পুঞ্জীভূত গোনাহ মাফ ও মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকির-আজকার ও ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে সময় কাটাবেন। প্রতিদিন নিজ নিজ খিত্তায় (তাঁবু) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন জামাতের সঙ্গে। প্রতিটি খিত্তায় ১৫ থেকে ২০ জন হজযাত্রী একত্রে থাকার সুবিধা রয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) হজযাত্রীরা নিজ নিজ খিত্তায় ফজরের নামাজ আদায় শেষে- আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সাধারণত হজযাত্রীরা নিজস্ব মোয়াল্লেমের ব্যবস্থাপনায় পাঠানো বাসে মিনার মাঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে থাকেন। ফজর থেকে তাদের যাত্রা শুরু হয়। চলে দুপুর পর্যন্ত। হজযাত্রীরা খোদার প্রেমে উন্মাদের মতো ছোটেন আরাফাতে। তাঁদের সঙ্গে থাকে শুধু একটি ব্যাগ-যাতে রাখা হয় একটি কিছু অতীব জরুরী জিনিসপত্র। যেমন থালা বাসন, পানির মগ, ওষুধ ও অজু-গোসলের জন্য গামছা জাতীয় কাপড়-চোপড়। মূলত আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজের মূল কাজ। এদিন আরাফাতের ময়দানে এক আজানে জোহর ও আছরের (জুহরাইন) নামাজ আদায় করবেন। দুুপুরে আরাফাতের মসজিদে মিনারায় হজের খুতবা দেয়া হয়। তারপর সন্ধ্যায় মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে আবারও এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করবেন। সেখান থেকে তারা মিনার জামারায় (প্রতীকী) শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন। শুক্রবার ফজরের নামাজ শেষে আবার ফিরে আসবেন মিনায়। এদিন তিন ধরনের জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। তারপর পশু কোরবানি করে পুরুষরা মাথা মু-ন করবেন। এভাবেই ইহরাম খুলে হালাল হয়ে যাবেন তারা। সর্বশেষ ঐদিন যেকোন একটা সুবিধাজনক সময়ে তারা নিজ নিজ দায়িত্বে মিনা থেকে পবিত্র কাবা শরিফে ফরজ তাওয়াফ করে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন। হাজীদের জন্য এবারও মিনা থেকে মক্কা যাবার জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ ট্রেন। মক্কা শরিফ থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম ফোনে জনকণ্ঠকে জানান, এ বছর প্রায় বিশ লক্ষাধিক মুসলমান হজ পালন করছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশী রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজারেরও বেশি। তারা সবাই সুস্থ রয়েছেন। তবে এ পর্যন্ত ৩৫ জন হজযাত্রীর বিভিন্ন কারণে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। তিনি জানান, হজযাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য মক্কা, আরাফাত মুজদালিফা ও মিনা পর্যন্ত মনোরেল সেবা চালু আছে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার এ পথে রয়েছে নয়টি স্টেশন (আরাফাতে তিনটি, মুজদালিফায় তিনটি ও মিনায় তিনটি)। মিনায় যাদের তাঁবু রেলস্টেশনের কাছাকাছি পড়েছে তারা চাইলে রেলের টিকেট কিনতে পারেন। সৌদি ২৫০ রিয়াল দিয়ে মোয়াল্লেমের অফিস থেকে এ টিকেট পাওয়া যায়। এ টিকেট দিয়ে পুরো হজের পাঁচ দিন প্রয়োজনমতো যাওয়া-আসা করা যায়। এর বাইরে যারা অসুস্থ তাদের জন্য আরাফাত, মুজদালিফা, মিনায় রয়েছে ব্যক্তিগত যানবাহন রাখার স্থান। অসুস্থ বা মাজুর ব্যক্তিগণ আরাফাতের ময়দানে গাড়িতে শুয়ে বসেও হজের মূল ফরজ আদায় করতে পারেন।
×