ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তার সন্ধান মিললেও ব্যবসায়ীর খোঁজ নেই

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৩০ আগস্ট ২০১৭

নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তার সন্ধান মিললেও ব্যবসায়ীর খোঁজ নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তার হদিস মিললেও গুলশান থেকে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পাঁচ দিন পর সোমবার রাতে রাজধানীর পল্টন থেকে নিখোঁজ আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা শামীম আহমেদকে কে বা কারা চোখ বেঁধে মতিঝিলে রেখে যায়। শামীম আহমেদের ফোন পেয়ে এক আত্মীয় তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। নিখোঁজ এবং হদিস মেলার রহস্য জানতে ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। গত ২৩ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের খানা বাসমতি রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের এ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ অপহৃত হন বলে তার স্ত্রী শিল্পী আহমেদের দাবি। শিল্পী আহমেদ জানান, সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে অপরিচিত একটি মোবাইল নম্বর থেকে তার স্বামী তাকে ফোন করেন। মোবাইল ফোনে তার স্বামী তাকে জানান, তিনি মতিঝিলে আছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য একটি গাড়ি পাঠাতে বলা হয়। ঢাকায় থাকা এক নিকটাত্মীয় গাড়ি নিয়ে তার স্বামীকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। তার স্বামী ওই আত্মীয়র ঢাকার বাসায় রয়েছেন। তিনি ভাল আছেন। সুস্থ আছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মুহা. আশরাফুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী থানায় গিয়ে তার স্বামীর হদিস মেলার খবর জানান। সেই সঙ্গে তিনি তার স্বামীর অপহরণের বিষয়ে তারই দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির আর কোন কার্যক্রম না চালানোর কথা জানান। ঘটনার রহস্য জানতে ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইতোপূর্বে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, সাধারণত অপহরণের ঘটনার সময় যে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, শামীম আহমেদের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। তাই অপহরণের ঘটনাটি রহস্যজনক। অপহরণের সময় শামীম আহমেদ কোন চিৎকার বা চেঁচামেচি করেননি বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ ঘটনায় অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারাও এমনটাই জানিয়েছেন। ব্যাংক কর্মকর্তার হদিস মেলার বিষয়টিও রহস্যজনক। পুরো ঘটনার রহস্য জানার চেষ্টা চলছে। পল্টন মডেল থানার ওসি মোঃ মাহমুদুল হক জনকণ্ঠকে জানান, সোমবার রাতে মতিঝিলের আশপাশের কোন একটি জায়গায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া এবং উদ্ধারের ঘটনাটি জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী। ব্যাংক কর্মকর্তার নিখোঁজ ও উদ্ধারের ঘটনার নেপথ্য কারণ জানতে ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলশান থেকে রবিবার বিকেলে নিখোঁজ ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়েরও সন্ধান মেলেনি। ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়কেও অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক কর্মকর্তার মতো এ ব্যবসায়ী নিখোঁজের বিষয়টিও রহস্যজনক বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। গুলশান-১ নম্বরের ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে ওই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজ ব্যবসায়ী মেসার্স আরএমএম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি সিআইপি (কর্মাশিয়ালি ইম্পর্টেন্ট পার্সন)। পাশাপাশি বেলারুশের অনারারি কনসাল বলেও পুলিশ জানায়। গুলশান মডেল থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকী জানান, ুদ্ধ কুমার রায় ওই ব্যাংকে ঋণের বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন। ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পরই তাকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিরুদ্ধের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারদের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ব্যবসায়ীর গাড়িচালকের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, গাড়িতে ওঠার সময় দুজন লোক ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলছিল। কথা বলতে বলতে তাকে মাইক্রোবাসের কাছে নিয়ে আচমকা ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর দ্রুত গাড়িটি সেখান থেকে চলে যায়। অনিরুদ্ধ রায় গুলশানের ১৪০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িতে থাকেন। এ বিষয়ে অপহরণের অভিযোগ এনে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর পরিবার।
×