ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলন্ত বাসে দল বেঁধে ধর্ষণের পর কলেজ ছাত্রীকে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৩০ আগস্ট ২০১৭

চলন্ত বাসে দল বেঁধে ধর্ষণের পর কলেজ ছাত্রীকে হত্যা

বিডিনিউজ ॥ টাঙ্গাইলের মধুপুরে এক তরুণীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করার পর তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, চারদিন আগে চলন্ত বাসে দল বেঁধে ধর্ষণের পর ওই কলেজছাত্রীকে হত্যা করা হয়। ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে করে শুক্রবার রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয় ওই তরুণী। নিহত রূপা খাতুনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে। ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে পড়ালেখা করার পাশাপাশি একটি কোম্পানির প্রোমশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ জেলা সদরে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় ওই তরুণীর লাশ পাওয়ার পর হত্যার আলামত থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে মধুপুর পুলিশ। কিন্তু পরিচয় জানতে না পারায় ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়। ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, বাসের চালক ও সুপারভাইজারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের রোমহর্ষক বিবরণ পাওয়া গেছে। তিনি জানান, তাদের মধ্যে তিনজন ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার জন্য তাদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে। গণমাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে সোমবার রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। হাফিজুর বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে গত শুক্রবার বগুড়ায় যান তার বোন। পরীক্ষা শেষে এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) বাসে ওঠেন। ওই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান। আর ওই বাসেই রূপার ময়মনসিংহে পৌঁছানোর কথা ছিল। হাফিজুর আরও বলেন, সঠিক সময়ে রূপা ময়মনসিংহে না পৌঁছানোয় সহকর্মীরা তার মোবাইলে ফোন করেন। এক যুবক ফোনটি ধরে বলেন, ফোনের মালিক ভুল করে সেটি ফেলে গেছেন। এরপর সংযোগ কেটে দেন। এরপর থেকেই ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এদিকে শনিবার সকালেও রূপা কর্মস্থলে না যাওয়ায় তার অফিস থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের কাছ থেকে রূপার নিখোঁজ থাকার কথা জানতে পেরে আমরা ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। পরে মধুপুরে একটি লাশ পাওয়ার খবর মিডিয়ায় দেখে আমরা থানায় যাই। মধুপুরের ওসি শফিকুল বলেন, রূপার পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর সোমবার রাতেই বাসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন হাফিজুর। পরে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছোঁয়া পরিবহনের চালক, সুপারভাইজার, সহকারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায় তাদের কাছে। ছোঁয়া পরিবহনের বাসটিও জব্দ করা হয়। ওসি আরও জানান, লাশ উদ্ধারের পর আলামত দেখে সন্দেহ হওয়ার কারণে অপমৃত্যুর মামলা না করে প্রথম দিনই পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছিল। বাসের কর্মচারীদের গ্রেফতারের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেই সন্দেহেরই সত্যতা পান তারা। পুলিশ জানায়, ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হয়েছে। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, কালিহাতী থেকে মধুপুর পর্যন্ত রাস্তায় চলন্ত বাসে পর্যায়ক্রমে রেপ করা হয় মেয়েটিকে। মেয়েটি তাদের বলেছিল, সঙ্গে যা টাকা পয়সা আছে, তা নিয়ে যেন তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে, মাথা থেঁতলে তাকে হত্যা করে বাসের কর্মচারীরা লাশ রাস্তায় ফেলে চলে যায়। তিনজনকে আদালতে পাঠিয়ে বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখার কথা জানালেও গ্রেফতার ওই পাঁচজনের নাম প্রকাশ করেননি ওসি। তিনি বলেন, পরে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
×