ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর টেস্ট জিততে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৩০ আগস্ট ২০১৭

মিরপুর টেস্ট জিততে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর টেস্টে দুইদিন টানা দাপট দেখাল বাংলাদেশ। তৃতীয়দিনেই সেই দাপট শেষ! জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দুইদিন ধরে টিকিয়ে রেখে তৃতীয়দিনেই উল্টো চাপে পড়ে গেল মুশফিকবাহিনী। এখন তাই মিরপুর টেস্ট নিজেদের করে নিতে জাদুর অপেক্ষাতেই আছে বাংলাদেশ। যে স্পিনজাদু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে গত বছর অক্টোবরে দেখিয়েছিল মুশফিকবাহিনী। সেই জাদুর অপেক্ষা। তাহলেই তো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় বাংলাদেশের মুঠোয় ধরা দিয়ে দেবে। কিন্তু সবারই বোঝা হয়ে গেছে এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতে যাবে বাংলাদেশ তা বলা কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার যে জিততে আর লাগে ১৫৬ রান। হাতে আছে ৮ উইকেট। এরপরও আজই প্রথম টেস্ট নিশ্চিতভাবে শেষ হতে চলা দিনটিতে জিততে পারবে বাংলাদেশ? সেই প্রশ্নই এখন সবার মনে। দুই দলই চায় মিরপুর টেস্টটি জিতে নিতে। দুই দলেরই জয়ের সম্ভাবনাও আছে। বাংলাদেশের জিততে হলে অস্ট্রেলিয়ার হাতে থাকা ৮ উইকেট টার্গেট অতিক্রম করার আগেই তুলে নিতে হবে। এমন মুহূর্তে বাংলাদেশকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হওয়া সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচটি। সেটি অনুপ্রেরণাও দিচ্ছে। যে ম্যাচে বাংলাদেশ ২৭৩ রানের টাগেট দিয়েছিল। ইংলিশরা বিনা উইকেটে ১০০ করে ফেলার পরও হেরেছিল। স্পিনদ্যুতির সামনে পড়ে ৬৪ রানেই ১০ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। এক সেশনেই খেলাও খতম হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ও পেয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াও এ মুহূর্তে ২ উইকেটে ১০৯ রান করে তৃতীয়দিন শেষ করেছে। ওয়ানার (৭৫*) ও স্মিথ (২৫*) ব্যাট হাতে আছেন। তবে সবারই জানা বল যদি উইকেটে ঘুরে, চতুর্থদিনে যেটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, তাহলে অসিরা সহজেই ম্যাচ বের করে নিতে পারবে না। ওয়ার্নার ও স্মিথকে দ্রুত আউট করে দিলেই হয়ে গেল। চাপে পড়ে বাকিরাও স্পিনারদের সামনে আতঙ্কে ভুগবে। তখন সাকিব, মিরাজ, তাইজুলরা দ্রুত উইকেট নিয়ে ম্যাচও জিতিয়ে দিতে পারেন। ৫০তম টেস্ট খেলতে নামা দুই ব্যাটসম্যান সাকিবের ৮৪ ও তামিমের ৭১ রানে প্রথম ইনিংসে ২৬০ রান করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল আবার হাফসেঞ্চুরি করেন। তার ৭৮ রানের ইনিংসে ২২১ রান করে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল মনে করেন জেতার সম্ভাবনা আছে। এজন্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার ভাগ্য আবারও ধরা দিতে হবে। অসি পেসার এমন মুহূর্তেও বলতে পারছেন না অস্ট্রেলিয়াই জিতবে। তার ভাষ্য অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ভাল পজিশনে আছে। অসিদের আত্মবিশ্বাসও আছে। এখন দেখা যাক কোন দল জিতে। টেস্টের নিয়ন্ত্রণ এখন অস্ট্রেলিয়ার হাতে চলে গেছে। এই চলে যাওয়ার পেছনে সৌম্য ও ইমরুলের দায়ই বেশি। দুইজনই সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন। সৌম্য স্লিপে ছেড়েছেন ওয়ার্নারের ক্যাচ। ইমরুল শট লেগে ছেড়েছেন স্মিথের ক্যাচ। দুইজনই তখন মাত্র ব্যাট হাতে উইকেটে জমার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সৌম্য ও ইমরুল ক্যাচগুলো ধরতে পারেননি। তাতে যেন ম্যাচটি হাত থেকে ফসকে যাওয়ার সম্ভাবনাই তৈরি হয়ে গেছে। শুরুতেই ২ উইকেট ফেলে দেয়া গেলেও ‘নতুন জীবন’ পেয়ে ওয়ার্নার ও স্মিথ মিলে ৮১ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। যে জুটি এখন বাংলাদেশের আতঙ্কের জুটিও হয়ে উঠেছে। সৌম্য ও ইমরুল ক্যাচ মিসের সঙ্গে ব্যাটিংটাও করেছেন যাচ্ছেতাই। দলের প্রয়োজনে ব্যাটিংটাও করতে পারেননি। আবার ফিল্ডিংয়েও গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট নিতে পারেননি। দলে তাদের অবস্থান নিয়েই তাই প্রশ্ন উঠে গেছে। সৌম্য যদি ওয়ার্নারের ক্যাচটি ধরতে পারতেন তাহলে অপরাজিত ৭৫ রান করা দূরে থাক, তৃতীয়দিন শেষেও কাঁপতো অস্ট্রেলিয়া। আর ইমরুল যদি স্মিথের ক্যাচটি ধরতে পারতেন তাহলে টেস্টটি বাংলাদেশের মুঠোতেই থাকত। এ দুইজনের সঙ্গে ব্যাটসম্যানদেরও দায় ভালভাবেই আছে। দ্বিতীয়দিন ১ উইকেটে ৪৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ২৬০ রান করার পর অস্ট্রেলিয়া ২১৭ রান করায় দ্বিতীয়দিনেই ৮৮ রানের লিড নিয়েছিল মুশফিকবাহিনী। তৃতীয়দিনের সঙ্গে আরও ১৭৬ রান যোগ করতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তৃতীয়দিন সকালেই তাইজুল ও ইমরুল আউটের পর তামিম ও মুশফিক মিলে ব্যাটিংটা ভালই করছিলেন। কিন্তু যে তামিম এগিয়ে নিয়ে গেলেন তিনিই যেন পিছিয়েও দিলেন। লাঞ্চের পর বল ভালভাবেই টার্ন করা শুরু করে। বল লাফিয়েও উঠতে থাকে। একদিকে পেসার কামিন্স আঘাত করতে থাকেন। বাউন্স দিতে থাকেন। আরেকদিকে লিয়ন ও এ্যাগার মিলে স্পিনদ্যুতি দেখাতে থাকেন। কামিন্সের একটি উঠে আসা বলেই তামিম আউট হয়ে যান। ৫০তম টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি করেন তামিম। ৭৮ রানও করে ফেলেন। মনে করা হচ্ছিল তামিম সেঞ্চুরিও করে ফেলবেন। কিন্তু এরবেশি আর এগিয়ে যেতে পারেননি। ১৩৫ রানে যেই তামিম আউট হন যেন বাংলাদেশের কপালও পুড়ে। ততক্ষণে অবশ্য ১৭৮ রানের লিড নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ভাবা হচ্ছিল, মুশফিক, সাকিব, নাসির, মিরাজ তো আছেনই। ৩০০ রান বা তারবেশি রানের টার্গেট দিতে পারলেই তো হলো। কিন্তু সেটিই তো করা গেল না। তামিম আউটের পর যেন বাংলাদেশ ইনিংসের মেরুদ-ই ভেঙ্গে যায়। এরপর সাকিব দ্রুতই সাজঘরে ফেরায় ৩০০ রানের টার্গেট দেয়ার আশায় যেন হতাশা যুক্ত হতে থাকে। মুশফিক-সাব্বির মিলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন। তারা চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি। ১৮৬ রানে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুশফিক (৪১) রান আউট হন, এরপর নাসির, সাব্বির মুহূর্তেই সাজঘরে ফেরেন। দেখতে দেখতে ২২১ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। লিয়ন তো এদিন ৬ উইকেট শিকার করে নেন। টার্গেটও খুব বড় দেয়া যায়নি। আর তাই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরাও ধীরে চল নীতিতে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাই নেন। তাতে সাফল্য এ মুহূর্তে মিলেছে বোঝা যাচ্ছে। সেই সাফল্য বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ভুলেই মিলেছে। আর এই সাফল্যই অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের দিকেই এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তবে জিততে পারে বাংলাদেশও। যদি স্পিন ভেল্কি দেখানো যায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেমন ৬৪ রানেই ১০ উইকেট নিয়ে নিয়েছিলেন স্পিনাররা, তেমনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও আজ একইরকম স্পিনজাদু দেখিয়ে দিতে পারলেই হলো। সেই আশাতেই এখন আছে পুরোজাতি।
×