ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আহমদ রফিকের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘নির্বাসিত নায়ক’

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৩০ আগস্ট ২০১৭

আহমদ রফিকের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘নির্বাসিত নায়ক’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুমাত্রিক এক জীবনের পথিক আহমদ রফিক। এই ভাষাসংগ্রামীর সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে রবীন্দ্র গবেষক। লেখক হিসেবে দীর্ঘ ছয় দশক ধরে কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প ও প্রবন্ধ লিখেও হয়েছেন পাঠক সমাদৃত। বর্ণাঢ্য সেই জীবনকথন এবার উঠে এলো সেলুলয়েডে। নির্মিত হলো তার জীবনভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘নির্বাসিত নায়ক’। ৩৫ মিনিট ব্যাপ্তির তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন জাঁ-নেসার ওসমান। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আহমদ রফিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ নির্বাসিত নায়ক অবলম্বনে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আহমদ রফিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাঁ-নেসার ওসমান। আহমদ রফিককে নিয়ে আলোচনা করেন লেখক আন্দালিব রাশদী ও প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাণ উপদেষ্টা ফরিদুর রহমান। সাহিত্যকর্ম ও সমাজভাবনায় আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রাখার কথা উল্লেখ করে আহমদ রফিক বলেন, স্বীকৃতি আর অর্থবিত্তের পেছনে ছুটিনি কখনও। আমি মার্কসবাদী মতবাদে বিশ্বাস করি। তাই জীবিকা অর্জনের শুরু থেকে লেখালেখির জীবন পর্যন্ত কোনদিন অর্থবিত্তের পেছনে ছুটিনি। আমার সহায় সম্পদ বলতেও কিছু নেই। আমাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হলো, এটা এক বিশেষ প্রাপ্তি। আমার আমিকে তুলে ধরতে এই ৩৫ মিনিটের চলচ্চিত্রই যথেষ্ট। এর বাইরে আরও কিছু যোগ হলে সেটা দর্শকের জন্য বিরক্তির কারণ হতো। সমাজের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা প্রসঙ্গে আহমদ রফিক বলেন, প্রগতিশীল সমাজের পক্ষে নিজ অবস্থান মেলে ধরার কারণে আমি কখনও নিভৃতচারী হইনি। সমাজ বদলের জন্য রাজপথে নেমেছি। রাজনীতির ক্ষেত্রে কখনও কখনও মেটা-ফিজিক্যাল চিন্তাভাবনা আমার মধ্যে এসে দাঁড়ায়। একাকিত্ববোধ বলুন আর নৈসর্গ্যবোধ আমাকে নিয়ত তাড়িত করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূজা পর্যায়ের গানের পাশাপাশি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, কবিতার বিদ্রোহী চেতনা, আর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লী ভগত সিংয়ের বিপ্লব তাকে উদ্বেলিত করে বলেও জানান তিনি। হায়দার আকবর খান রনো বলেন, আহমদ রফিক আজীবন রাজনীতি ও সমাজ সচেতন মানুষ। তার বয়স হয়েছে, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লড়াইয়ের তার মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষের প্রয়োজন সামান্যতম কমবে না। নির্মাতা জাঁ-নেসার ওসমান বলেন, আহমদ রফিকের মতো ব্যক্তিত্বকে সাধারণের কাছে তুলে ধরতেই এই চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য। নজরুল স্মরণে ‘তবু আমারে দেব না ভুলিতে’ শরীরী অস্তিত্ব না থাকলে তিনি অম্লান হয়ে আছেন আপন সৃষ্টিসম্ভারে। তার কালজয়ী গান-কবিতা কিংবা গল্প-উপন্যাস আজো ছুঁয়ে যায় বাঙালীর হৃদয়কে। সংগ্রামে বা সঙ্কটে যোগায় প্রেরণার উৎস। ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ঘুচিয়ে তার মানবতার বাণীর আশ্রয়ে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিতে জেগে ওঠে অন্তর। ৪১তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে সেই প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করা হলো মঙ্গলবার। শরত সন্ধ্যায় ‘তবু আমানের দেব না ভুলিতে’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। গান, কবিতা ও আলোচনায় সাজানো স্মরণের আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় একাডেমির সঙ্গীথ ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় জাতীয় কবি নজরুলকে নিবেদিত আলোচনার মাধ্যমে। এ পর্বে মুখ্য আলোচক ছিলেন ভাষাসংগ্রামী, রবীন্দ্র গবেষক ও লেখক আহমদ রফিক। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। আলোচনায় আহমদ রফিক বলেন, একজন প্রতিভাবান মানুষের মধ্যে বিচিত্রসত্তা বিরাজ করে। নজরুল তেমনি একজন। তার জীবনের তিনটি পর্ব যদি বিশ্লেষণ করতে যাই, তাহলে প্রথমভাগে তিনি জাতীয়তাবাদী, দ্বিতীয় ভাগে তিনি বিপ্লববাদী এবং তৃতীয়ত তিনি সাম্যবাদী। তিনি সাহিত্যকর্মে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন তথা সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে গেছেন।আলোচনা শেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের প্রেমের গান শোনার শিল্পীরা। সম্মেলক গানের সুরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। ‘মেঘের ডম্বুর ঘন বাঁজে’ ও ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’ শীর্ষক সঙ্গীত সঙ্গীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখার শিল্পী। এছাড়াও সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমি শিশুদল ও ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। সম্মেলক গানের পর আসে একক কণ্ঠে পরিবেশনা। ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই’ ও ‘আর কেন চাঁদনী রাতে মেঘ আসে কাঁদাতে’ শিরোনামের গান শোনান শারমীন সাথী ইসলাম। ইয়াকুব আলী খান পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি’ ও ‘আমি যেদিন রইব না গো’। এছাড়া একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সুজিত মোস্তাফা, খালিদ হোসেন ও শামীমা পারভীন শিমু। নজরুলের গজল ও শ্যামা সঙ্গীত পরিবেশন করেন শাহীন সামাদ। গানের মাঝে ছিল নজরুলের কবিতা আবৃত্তি পর্ব। ‘প্রতিভাষণ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন গোলাম সারোয়ার ও ‘অগ্রদূত’ আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ।
×