ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যানজট তীব্র নয় ॥ সব পথেই ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৩০ আগস্ট ২০১৭

যানজট তীব্র নয় ॥ সব পথেই ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের একাধিক পয়েন্টে যানজট ছিল মঙ্গলবার। তবে তীব্র আকার ধারণ করেনি। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ মহাসড়কে পশুবাহী পরিবহনের চাপ বাড়ছে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি না হলেও স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙাচোরা সড়ক মেরামতের কাজ চলছে একেবারেই ধীরগতিতে। তাই পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি খুব একটা হচ্ছে না। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পাঁচটির বেশি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের অনেক বিলম্বে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে এখনও যাত্রীচাপ অস্বাভাবিক হয়নি। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে আসন্ন ঈদ-উল-আজহায় ঘরমুখো ও ঈদ শেষে রাজধানীমুখী মানুষের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার উভয় ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পারের অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্ব ছেড়ে গেছে বেশ কয়েকটি লঞ্চ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তা খারাপ হওয়ায় সড়কপথে এবার ভোগান্তির আশঙ্কা করা হলেও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাস্তাঘাট নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। তিনি বলেছেন, সড়ক-মহাসড়ক এখন চলাচলের উপযোগী। ফেরিঘাটে যানজট ॥ পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়। সঙ্কট নিরসনে চেষ্টা চললেও স্রোত প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারের বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির পর থেকেই নদীতে স্রোতের কারণে নৌপথে এ সমস্যার সৃষ্টির কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ কারণে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা। কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের স্বস্তি- মুজিবুল হক মঙ্গলবার দুপুরে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো ট্রেন যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ট্রেনের ভেতরের পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজ নেন। যাত্রীরা যাতে নিরাপত্তার সঙ্গে ট্রেনে উঠতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আরামদায়ক ও নিরাপদ হওয়ায় ট্রেনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে, বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা যায়। এ বছর সর্বোচ্চ ২ লাখ ৭০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন রেলওয়ের মাধ্যমে পরিবহন করা হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, সিডিউল বিপর্যয়ের কোন সম্ভাবনা নেই। আজকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩০টি ট্রেন কমলাপুর ছেড়েছে, তার মধ্যে ২টি ট্রেনের কিছু দেরি হয়েছে বলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের অবহিত করেন। নৌপথে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ টিকেট অব্যবস্থাপনা, কুলিদের হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, টিকেট কালোবাজারী, ইজারাদারদের দৌরাত্ম্যে ঈদযাত্রায় নৌপথের যাত্রীরা পদে পদে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। এবারের ঈদে সারাদেশের নৌপথের যাতায়াতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের ঈদ-উল-আজহায় ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন নৌপথ ব্যবহার করছে। কয়েক দিন ধরে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা ঢাকার সদরঘাট, বরিশাল নদীবন্দর, চাঁদপুর নদীবন্দর, নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর, মাওয়া ফেরিঘাট, পাটুরিয়া-দৌলদিয়া ফেরিঘাট, কুমিল্লা-গুপ্তছড়া, ভোলার মজুচৌধুরী ঘাট, কুতুবদিয়ার মগনমা ঘাটসহ প্রায় ৫০টি ঘাট, নদীবন্দর ও নৌরুটে যাত্রীসেবা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে। এতে দেখা গেছে, এসব ঘাটে কুলিরা যাত্রীদের লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে টানাটানি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়কে কেন্দ্র করে যাত্রী সাধারণের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় কোথাও কোথাও হাতাহাতি মারামারি পর্যন্ত রূপ নিচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রী সাধারণের ঘাটে খেয়া পারাপারে .৫০ পয়সার টোলের ক্ষেত্রে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত টোল আদায়ের মহোৎসব চলছে, টিকেট অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, টিকেট কালোবাজারী, লঞ্চের ডেকে চাদরের ব্যবসা চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও যাত্রীধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে কিছু কিছু লঞ্চ চলাচল করতে দেখা গেছে। লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট যাত্রীর প্রয়োজনের তুলনায় কম রাখা, এছাড়াও অন্য নিরাপত্তামূলকসামগ্রী যাত্রীর তুলনায় অধিকাংশ লঞ্চে ৫ শতাংশও পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু লঞ্চ তাদের শর্তপূরণ করেই যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানজটের কারণে যাত্রী সাধারণ নৌপথকে গুরুত্ব দিলেও সদরঘাটসহ দেশের বিভিন্ন লঞ্চঘাট ও বিভিন্ন নদীবন্দরে দেখা গেছে, কোন কোন লঞ্চ ১ থেকে ৩ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে। এবার প্রথম কাউন্টার সিস্টেমে টিকেট বিক্রির কথা থাকলেও স্থাপিত কাউন্টারগুলোতে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার নতুন নিয়মে টিকেট ছাড়া লঞ্চে আরোহনের সুযোগ না থাকায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। এছাড়াও পণ্যবাহী লঞ্চে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী বহন, পশুবাহী লঞ্চে যাত্রী বহন এবং যাত্রীবাহী লঞ্চে পশু বহনের কারণে যাত্রী নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে পড়ছে। রাস্তাঘাট নিয়ে চিন্তিত নই -কাদের সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক এখন চলাচলের উপযোগী অবস্থায় আছে দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদযাত্রায় রাস্তাঘাট নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত নন। তার বিশ্বাস, সড়কের অবস্থার কারণে এবার যানজট হবে না। তবে অন্য কোন কারণে যে যানজট হবে নাÑ সে নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারছেন না। ঘরমুখো যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মঙ্গলবার ঢাকার সায়েদাবাদ বাস-টার্মিনালে ভিজিলেন্স টিমের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি তো রাস্তাঘাট নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই, কারণ সারাদেশে মহাসড়ক এখন ভাল অবস্থায় আছে। যেগুলো বন্যার কারণে ও টানা বর্ষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেগুলো গতকালের মধ্যে চলাচল যোগ্য করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। এ মুহূর্তে আমি বলছি, আশ্বস্ত করছি, সারাদেশের রাস্তা যানজটের কারণ হবে না, রাস্তার জন্য কোথাও যানজট হবে না। রাস্তার জন্য যানজট হবে নাÑ এ দাবিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা না করার অনুরোধ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটাকে আবার কেউ ভিন্ন ব্যাখ্যা করবেন না। রাস্তা বা সড়কের জন্য যানজট হবে না; কিন্তু যানজট হবে না- এ নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না। পশুবাহী গাড়ি ধীরগতির কারণ হয় জানিয়ে কাদের বলেন, রাস্তার ওপর পশুবাহী ধীরগতির গাড়িগুলো মাঝে মাঝে আটকে যায়। আজ এখন পর্যন্ত কিছু কিছু জায়গায় ধীরগতি আছে, তবে কোথাও যানজটের ছবি নেই। মন্ত্রী বলেন, আজ থেকে রাশ বাড়বে রাস্তায়; এ অবস্থায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মালিকদের কাছে অনুরোধ করব, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেব, অতিরিক্ত ট্রিপের জন্য ওভার টেকিং ও ওভার স্পিড প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় পিরোজপুর রুটের দোলা পরিবহনকে ভিজিলেন্স টিম ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা অতিরিক্ত ভাড়া নেবে, তাদের কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হবে। ঈদের কারণে মহাসড়কে যানজট প্রবণ এলাকার চাপ মোকাবেলার প্রস্তুতি আছে জানিয়ে জানিয়ে কাদের বলেন, আজ একনেক মিটিংয়ে আমার চারটি এজেন্ডা আছে, যা মন্ত্রীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আমি রাস্তায় আছি, আমি রাস্তায় থাকব। এর আগে যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আট লেন মহাসড়কের পাশে কোরবানির পশুরহাটসংলগ্ন সড়ক ও যানজটপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। গরুর হাটের বিষয়ে দেয়া নির্দেশনা বেশিরভাগ জায়গায় মেনে চলা হচ্ছে- দাবি করে কাদের বলেন, কিছু কিছু জায়গায় নির্দেশমতো চলছে না, যেটা আমরা শনির আখড়ায় দেখেছি। তাদের আমরা ভেতরের দিকে চলে যেতে বাধ্য করেছি। রাস্তায় যাতে গরুর হাট কোনভাবেই না হয়, সে জন্য ভিজিলেন্স টিম রয়েছে। মন্ত্রী জানান, ঈদের আগে ও পরে ছয়দিন পণ্যবাহী যানবাহন সড়কে চলাচল করতে পারবে না। পচনশীল, গার্মেন্টস পণ্য, ওষুধ, পশুবাহী ট্রাকের আওতার বাইরে থাকবে। অন্য পণ্যবাহী পরিবহন ঠেকাতে সড়কে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক নজরদারি রাখবে। এ ব্যাপারে কোন আপোস নয়।
×