ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন সমর্থন চাই

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৩০ আগস্ট ২০১৭

মার্কিন সমর্থন চাই

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনের কাছে রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াবে উভয়পক্ষ। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে ঢাকায় সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলসের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এলিস ওয়েলস আজ বুধবার বৈঠকে বসছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এলিস ওয়েলসের বৈঠক হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থন চান। বৈঠককালে চলমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন এলিস ওয়েলস। আবুল হাসান মাহমুদ আলী এলিসকে রাখাইন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং বাংলাদেশ সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটি জানান। এলিসকে জানানো হয়, রাখাইন প্রদেশের জন্য গঠিত কোফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনকে বাংলাদেশ সমর্থন করে। কোফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনকে মাথায় রেখে মিয়ানমার সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে ওয়েলসকে জানানো হয়। বৈঠকে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়াও উভয়পক্ষের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ, আঞ্চলিক সহযোগিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস মঙ্গলবার সকালে দুইদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পরেই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। এলিস ওয়েলসের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী ও আফগানিস্তান ও পাকিস্তানবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি এলিস ওয়েলস দুইদিনের সফরে মঙ্গলবার বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকা থাকাকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) তারিক সিদ্দিকী, জ্বালানি উপদেষ্টা ডক্টর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তার এই সফরে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, জ্বালানি ও আঞ্চলিক বিষয়াদি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। ঢাকায় অবস্থানকালে রাষ্ট্রদূত ওয়েলস ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রদূত ওয়েলস ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো সফর করবেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা বিষয়ে আলোচনা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উচ্চপদের কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দেবেন। সূত্র জানায়, আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর কলম্বোতে এলিস ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকও এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো দেশটির কোন শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকা সফরে এসেছেন। সে কারণে এই সফরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা। চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ঢাকা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নতুন করে আলোচনাও শুরু করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) নিয়ে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা এখনও পায়নি। সে কারণে এই ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গত জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। সে সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকা-ওয়াশিংটন উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সন্ত্রাস ও সহিংসতা দমন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক ইস্যুতে আলোচনা করেন তিনি। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেই বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রথম যারা ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম ট্রাম্পকে অভিনন্দন বার্তা পাঠায়। সেই অভিনন্দন বার্তায় ট্রাম্পের নেতৃত্ব গুণের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস আজ কলম্বোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপদেষ্টার দফতরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও জ্বালানি খাতে অগ্রগতির প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের সব সূচকে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তাকে অবহিত করেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলিস মনোযোগ সহকারে উপদেষ্টার কথা শোনেন। তিনি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের আগ্রহের কথা বলেন। বিশেষ করে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ রয়েছে বলে এলিস এ সময় উপদেষ্টাকে জানান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদারে আগ্রহী বলে এ বৈঠকে জানানো হয়। এলিসকে আবারও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান উপদেষ্টা।
×