ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীর হাট গুলোতে আগে এসে গেছে কোরবানির পশু

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২৯ আগস্ট ২০১৭

রাজধানীর হাট গুলোতে আগে এসে গেছে কোরবানির পশু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে রাজধানীতে পশুবোঝাই ট্রাক আসছে। নৌপথেও আসছে ট্রলার বোঝাই কোরবানির পশু। রাজধানীর হাটগুলোয় এবার কিছুটা আগেই আনা হয়েছে কোরবানির পশু। কারও কারও মতে, দেশের বেশকিছু অঞ্চলে বন্যার কারণে গো-খাদ্যের ঘাটতি থাকায় হাটে গরু নিয়ে এসেছে খামারিরা। আবার অনেকের ধারণা, ভারতীয় গরু এলে দাম কমে যেতে পারে এবং হাটে স্থান সঙ্কট হতে পারে, এমন আশঙ্কায় কয়েকদিন আগেই গরু আনা হয়েছে। তাই গরু ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বাঁধছেন বিক্রি জমবে এবার। সেভাবে ক্রেতারা না গেলেও দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ ছিল প্রতিটি হাট। অনেকে কেবল গরু দেখে পছন্দ করছেন, অনেকে রয়েছেন দাম কমার অপেক্ষায়। সোমবার রাজধানীর কয়েকটি হাট ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, এবার তারা ১৫টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছে। এসবের মধ্যে ৯টি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আর ছয়টি দরপত্র ছাড় দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে সাতটি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আর স্থায়ী হাট হিসেবে গাবতলী হাটেও ব্যাপক পশু এসেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে ট্রাক ও ভ্যানে করে গত শুক্রবার থেকে রাজধানীর প্রায় সব হাটে গরু আনা শুরু হয়েছে। ট্রলারেও আসছে গরু। এবার হাটে দেশী গরু বেশি আসছে। রাজধানীর আশপাশ থেকেও অনেক খামারি গরু নিয়ে আসছে। সোমবার রাজধানীর সর্ববৃহৎ গাবতলী গরুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে পশুবাহী ট্রাক ঢুকছে হাটে। দিন-রাত একটির পর একটি ট্রাক এসে থামছে। মহাসড়কেও পশুবাহী ট্রাকের সারি। হাটের সীমানা ছেড়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছেয়ে গেছে গরুতে। তবে এবার পানিপ্রবাহ ভাল থাকায় সড়কপথের পাশাপাশি নৌপথেও পশু আসছে রাজধানীতে। ঢাকার চারপাশের নদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রলারে আনা হচ্ছেÑ পশু। আমিনবাজারের পাশে তুরাগ নদীর তীরে গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক গরুভর্তি ট্রলার এসে থামছে। সদরঘাট, কামরাঙ্গীরচর, আশুলিয়ায়ও এমন চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আরিচা ও মাওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রলারে পশু এনে সেখান থেকে ট্রাক দিয়েও ঢাকায় আনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ পশু। গাবতলী পশুর হাটের সভাপতি মজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, গাবতলীতে দিনের বেলা প্রতি ঘণ্টায় ১০-১২টি পশুবাহী ট্রাক আসছে। তবে রাতে এ সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। গরুর পাশাপাশি ট্রাকে মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। গাবতলী গরুর হাটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা রহমত আলীর জানান, এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু আসছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের গরুর পরিমাণ বেশি। ভারতীয় গরু এখনও হাটে আনা শুরু হয়নি। ভারতীয় গরু এলে দাম কমতে পারে। ক্রেতারাও দাম কমার আশায় গরু ক্রয় করছেন না। খুব কম গরু বিক্রি হয়েছে এখন পর্যন্ত। গাবতলী গরুর হাটে নিজের খামারের ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ী মফিজুল ফরাজি। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেছে। এর মধ্যেও গরুগুলোর যতœআত্তির ত্রুটি করিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাজারের অবস্থা ভাল নয়। সবাই কেবল দেখছেন আর দরদাম করেই ফিরে যাচ্ছেন। বেচাবিক্রির পরিমাণ খুব কম। এর মাঝে ভারতীয় গরু ঢুকলে আমাদের পথে বসতে হবে। সোমবার দুপুরে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাঁচ শতাধিক গরু রয়েছে। গত শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব গরু নিয়ে এসেছে ব্যবসায়ীরা। হাটে স্থানীয় লোকজন ঘুরে ঘুরে গরু দেখা শুরু করলেও বেচাবিক্রি নেই। গত তিনদিনে ১২টি গরু বিক্রি হয়েছে। ঝিনাইদহের হরিণাকু- থেকে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন হাফিজুল ইসলাম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এ পর্যন্ত একটি গরু এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। একই এলাকার গরু ব্যবসায়ী মোসলেহ উদ্দিন জানান, তিনি নিজ খামারের সাতটি গরু এনেছেন। বন্যার কারণে গরুর খাদ্যের কিছুটা অভাব থাকায় তিনি আগেই গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, মাঝারি আকারের ওই গরুগুলো ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হবে বলে। তবে ভারতীয় গরু এলে লোকসান হতে পারে। ওই হাটে আসা একাধিক গরু ব্যবসায়ী জানান, গতবারের চেয়ে এবার দাম একটু কম। গত বছর তারা যে গরু এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন, এ বছর তা ৮০ হাজার টাকা দর উঠছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী ইশতেহার উদ্দিন। তিনি বলেন, এ হাটে কয়েক বছর নিয়মিত আসি। শনিবার সন্ধ্যায় হাটে এসেছি। এখনও গরু বিক্রি হয়নি। আশা করছি, বুধবার থেকে বিক্রি শুরু হবে। টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে সাতটি গরু নিয়ে এসেছেন আব্দুল হালিম। তিনি জানান, তার সব গরু দেশী। মাঝারি আকারের এসব গরু ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন তিনি। আফতাবনগর হাটে কয়েক হাজার গরু এসেছে। সেখানে দেশী গরু বেশি। ছোট গরু ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকার মধ্যে আর মাঝারি গরু ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দর চাওয়া হচ্ছে। এ হাটেও বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মেরাদিয়া হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ শরীফ বলেন, আশা করছি, হাজার দশেক গরু আসবে আমাদের হাটে। সোমবার পর্যন্ত আড়াই হাজারের মতো গরু উঠেছে। জানালেন, এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। বুধবার থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
×