ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌম্যর ধারাবাহিক ব্যর্থতা!

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৯ আগস্ট ২০১৭

সৌম্যর ধারাবাহিক ব্যর্থতা!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়ানডের ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রায় প্রতিষ্ঠিতই করে ফেলেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই ওয়ানডে ক্রিকেটেও ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ সৌম্য সরকার। টেস্ট ক্রিকেটে মূলত পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে তার সুযোগ হয়েছিল ৭ নম্বরে ব্যাটিংয়ের। কিন্তু গত ৫ টেস্টে নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গী হয়েছেন এ বাঁহাতি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চলমান টেস্টে তবুও সৌম্য সুযোগ করে নিয়েছেন মূলত গত মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে টানা তিন ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকানোর কারণে। কিন্তু আবারও টানা তিন ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যর্থতা দেখিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে দ্রুতই সাজঘরে ফিরে দলকে বিপদে ফেলেছেন। আর সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে একেবারে শেষবেলায় অবিবেচকের মতো বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। আর সেটা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার এ্যাশটন এ্যাগারও। ওয়ানডে ক্রিকেটে শুরুটা দুর্দান্ত ছিল সৌম্য সরকারের। কিন্তু সর্বশেষ ৫ ম্যাচে তার রান ছিল- ০. ২৮, ৩, ৩ ও ০। এ কারণে দলে এ ওপেনারের উপযুক্ততা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। কারণ বর্তমানে ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যে আছে বাংলাদেশ দল। নৈপুণ্যে সফল একটি দলের ওপেনার দ্রুত সাজঘরে ফিরলে প্রাথমিক যে বিপদের সৃষ্টি হয় সেটা পুরো ইনিংসেই বাড়তি চাপ ফেলে। কিন্তু সৌম্য গত ৫ ওয়ানডেতে সেটাই করেছেন। তবু দলের সাফল্যে তার এই ব্যর্থতা খুব বেশি আলোড়িত হয়নি। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১১ বছর পর টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। সেটাও ঘরের মাটিতে। গত অক্টোবরে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট বিজয়ের পর এখন প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচুতে টাইগারদের। অসিদেরও হারিয়ে দেয়ার এমনকি দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার প্রত্যয় ক্রিকেটারদের। সেই সিরিজের প্রথম টেস্টের দলেই সৌম্য ঠাঁই পেয়েছেন মূলত অতীত নৈপুণ্যের কারণে। তাছাড়া পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তিনি পারদর্শিতা প্রমাণ করেছেন আগেই। সে কারণে তামিমের সঙ্গী হয়েছেন সৌম্য এবং দীর্ঘদিন তামিমের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করা ইমরুল কায়েস নেমে গেছেন একধাপ নিচে। সৌম্য ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য দেখিয়েছেন এ বছর মার্চে ঐতিহাসিক শ্রীলঙ্কা সফরে। সেখানে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয় পায় বাংলাদেশ দল, জিতে যায় নিজেদের ইতিহাসে ১০০তম টেস্ট ম্যাচটি। দুই টেস্টের সিরিজে সৌম্য টানা তিনটি অর্ধশতক হাঁকান। তিনি গল টেস্টে ৭১ ও ৫৩ রান করার পর কলম্বোর ঐতিহাসিক টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেন ৬৩ রান। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়া করতে নামা দলের হয়ে নেমে আউট হয়ে যান মাত্র ১০ রানে। তবে সেটি ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হয়নি, টানা তিন ইনিংসে দুর্দান্ত অর্ধশতক হাঁকানোর কারণে। বিদেশের মাটিতেই দুরন্ত হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন সৌম্য। যদিও এ বছর ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন সবগুলো ম্যাচে। অথচ দল সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে গত বছর নিউজিল্যান্ড সফর, এরপর ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফরে ভালই হেসেছিল সৌম্যের ব্যাট। দীর্ঘ পরিসরে নিজেকে তামিমের যোগ্য উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবেই প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টের ৫ ইনিংসের মধ্যে ৪ বারই ৭ নম্বরে এবং একবার ৬ নম্বরে নেমেছিলেন। তবে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন বিবেচনা করে তাকে ইনিংস উদ্বোধনের সুযোগ করে দেয়া হয়। তারপর থেকে ভালই সফলতা পাচ্ছিলেন। এ কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চলমান টেস্টেও তার ব্যাট থেকে ভাল ইনিংসের প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু প্রথম ইনিংসে তিনিই বিপদের সূত্রপাত করেন মাত্র ৮ রানে বিদায় নিয়ে। যে পেস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে পারদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন সেই পেস বলের বিরুদ্ধেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তবে এরপরও দলগত নৈপুণ্যে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানের লিড নেয় অসিদের বিরুদ্ধে। সে কারণে অনেকটাই নির্ভার হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নামার সুযোগ পায় বাংলাদেশ দল। শুরুটা সবসময় ভালই করেন সৌম্য। এদিনও ভালই খেলছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন দিনের একেবারে শেষভাগে। এ্যাশটন এ্যাগারকে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন। উসমান খাজার হাতে বলটি জমা হওয়ার কারণে মাত্র ১৫ রানেই ঘটে যায় সৌম্যের ছোট্ট ইনিংসের অপমৃত্যু। নিজেকে আবার ব্যর্থ প্রমাণ করলেন তিনি। তামিমের সঙ্গে ৪৩ রানের সম্ভাবনাময় জুটির সমাপ্তি ঘটে। আবারও তাই যোদ্ধা হিসেবে সঙ্গীহীন তামিম থেকে গেছেন। বরাবরের মতো এবারও দ্রুতই ফিরে গেছেন সৌম্য।
×