ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য মজুদ ও সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৯ আগস্ট ২০১৭

খাদ্য মজুদ ও সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর

তপন বিশ্বাস ॥ খাদ্য মজুদ ও সার্বিক পরিস্থিতি জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ট্যারিফ কমিয়ে দেয়ায় বেসরকারীভাবে এ পর্যন্ত সাড়ে নয় লাখ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়েছে। সরকারীভাবে সাড়ে আট লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ মেট্রিকটনের বেশি গুদামে ঢুকেছে। সমুদ্র সীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছে আড়াই লাখ টন। আরও কয়েক লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঢালাও আমদানি না করে চাহিদা বুঝে আমদানি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। এছাড়া উত্তরবঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ, কালভার্টে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে পানি আটকে বন্যাকে দীর্ঘায়িত করছে। এই বাঁধ খুলে দিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিতে বলেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই নির্দেশ দেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে দেশের খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবার হোসেন বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, দেশে চলমান বন্যায় জেলা প্রশাসকদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দেয়ার পর বর্তমানে সরকারের মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৫৩ মেট্রিকটন। এর মধ্যে চাল ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৬২ মেট্রিকটন এবং গম ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯১ মেট্রিকটন। তিনি বলেন, আমদানির মধ্যে এক লাখ মেট্রিকটন চাল ইতোমধ্যে দেশে ঢুকে গেছে। এছাড়া ৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিকটন চাল পথে আছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এই চাল দেশে ঢুকে যাবে। এতে মজুদ আট লাখে উন্নীত হবে। এছাড়া কম্বোডিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টন চাল আমদানি করা যাবে। ভিয়েতনাম থেকে মোট আড়াই লাখ টন চাল আমদানির মধ্যে এক লাখ টন দেশে এসেছে। বাকি দেড় লাখ টন আমাদের সমুদ্র সীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ভারত থেকেও চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া শীঘ্রই তিন লাখ টন গম আমদানির ট্রেন্ডার আহ্বান করা হবে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে দুই লাখ টন আমদানি করা হবে। চাল আমদানির ওপর থেকে ট্যারিফ ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করায় দেশে কী পরিমাণ চাল এসেছে এমন প্রশ্ন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। জবাবে খাদ্য সচিব বলেন, ট্যারিফ কমানোর পর ১ জুলাই থেকে রবিবার পর্যন্ত বেসরকারীভাবে দেশে মোট ৯ লাখ ৫৯ হাজার ২১৫ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য এসেছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ২০ হাজার ৩৩২ মেট্রিকটন গম এবং ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৩ মেট্রিকটন চাল আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। দেশের কোথাও চালের ঘাটতি নেই। দেশে বড় ধরনের বন্যা থাকলেও কোথাও চালের বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। দামও স্থিতিশীল রয়েছে। খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি ও দেশে খাদ্যের যোগান সম্পর্কে জেনে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ঢালাওভাবে চাল আমদানির প্রয়োজন নেই। বেশি আমদানি করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কৃষককেও বাঁচাতে হবে। আবার দেশের মানুষকেও বাঁচাতে হবে। তাই চাহিদা বুঝে চাল আমদানি করতে হবে। পরে দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। দেশের সার্বিক বন্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গে অনেকে অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ ও কালভার্টে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছে। কিন্তু এই মাছ শিকার করতে গিয়ে তারা পানি আটকিয়ে রাখছে। এতে বন্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ জাতীয় সকল বাঁধ তুলে দিতে হবে এবং কোথাও পানি সরবরাহে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা দূর করতে হবে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে তিনি বলেন, সকল জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিন। তারা যেন এগুলো ভালভাবে দেখে। ঈদে ছুটি বাড়ছে না কোরবানির ঈদের ছুটি বাড়বে কি না সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার, মন্ত্রিসভা বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। ফলে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের ছুটি বাড়াতে মন্ত্রিসভায় যে প্রস্তাব ওঠার গুঞ্জন ছিল সে বিষয়ে আপাতত কোন সিদ্ধান্ত হচ্ছে না বলেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামী ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হবে। আগামী ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর কোরবানির ঈদের সাধারণ ছুটি নির্ধারিত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে কোরবানির ঈদের আগে মন্ত্রিসভার শেষ নিয়মিত বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ছুটি নিয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত পাইনি, (মন্ত্রিসভা বৈঠকে) আলোচনাও হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত রোজার ঈদের ছুটি তিনদিন বাড়িয়ে ছয়দিন করার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন না করেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা তা আরও যুক্তিযুক্ত করে উপস্থাপনের নির্দেশনা দিয়ে ফেরত পাঠান। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট ঈদের ছুটি ছয়দিন করার সুপারিশ করে। সেক্ষেত্রে নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করার প্রস্তাব ছিল তাদের। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রোজার ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল পাঠালেও এখনও তা ফেরত আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন না মেলায় প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায়ও তোলা হয়নি। রোজার ঈদের ছুটি না বাড়লেও কোরবানির ঈদের ছুটি বাড়ছে বলে এই ঈদের আগে শেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকের দিকে অনেকেরই নজর ছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার ঈদের ছুটি আর বাড়ছে না বলেই আমরা ধারণা করছি। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঈদের বন্ধে কর্মস্থলে থাকতে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রমসহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন সরকারী কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ঈদের ছুটি আর বাড়ছে না বলেই আমরা মনে করছি। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই নির্বাহী আদেশে ঈদের ছুটি বাড়ানোর ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন ওই কর্মকর্তা। গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট ছুটি বাড়ানোর সুপারিশে বলেছিল, প্রধান ধর্মীয় উৎসবের ছুটি বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব হতে পারে। ছুটি ছয়দিন হলে যানবাহনের ওপর চাপ, যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে। ছুটি থেকে চাকরিজীবীদের কর্মস্থলে সানন্দে ফেরার প্রবণতা বাড়বে। অফিস খোলার দিন থেকে পুরোদমে অফিস চালু হবে। এতে অফিসের লিফট, গাড়িসহ ইউটিলিটি সার্ভিসের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হবে বলেও সুপারিশে বলা হয়।
×