ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গীদের

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২৯ আগস্ট ২০১৭

ঈদ ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গীদের

বাবুল হোসেন ও কামরুল এহসান চন্দন, ময়মনসিংহ থেকে ॥ জেলার ভালুকায় বোমা তৈরির সময় ঘটনাস্থলে নিহত নাটোরের মোহাম্মদ আলম প্রামাণিক (৪০) জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। আসন্ন ঈদে বড়ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বোমা ‘বিশেষজ্ঞ’ আলমের। এজন্য ভালুকার কাশর গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছিল বোমা তৈরির কারখানা। রবিবার আলম নিহত হওয়ার পর সোমবার সকালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বোমা ডিসপোজাল টিম ওই বাড়িতে প্রায় ৫ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাসের অভিযানে আবিষ্কার হয় জঙ্গীদের বোমা তৈরির এই কারখানা। বোমা বিস্ফোরণের পর থেকে এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে উদ্বেগ,আতঙ্ক। এদিকে ভালুকায় বোমা তৈরির কারখানার সন্ধ্যান পেয়েছে পুলিশ। বোমা বিস্ফোরণে নিহত নাটোরের আলম জেএমবির আত্মঘাতী দলের সদস্য বলে পুলিশ জানায়। পুলিশ এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেএমবির জঙ্গী আলমের স্ত্রী পারভীন ও তার দুই শিশু সন্তান এবং বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিন, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ সাতজনকে আটক করেছে। অভিযান শেষে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, প্রেসার কুকারসহ সাতটি শক্তিশালী বোমা ও বোমা তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হলে সোমবার বিকেলে ফের প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো কাশর গ্রাম। পুলিশ সুপার জানান, নাটোরের সদর উপজেলার তেলকুপি গ্রামের বোমা বিশেষজ্ঞ আলম গত রমজান মাস থেকে নিখোঁজ হয়। প্রথমে আলম কুষ্টিয়ায় আস্তানা গড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হানা দেয়ার আগেই কুষ্টিয়া থেকে সটকে পড়ে আলম। সেখান থেকে মাঝখানে প্রায় এক মাস ভালুকায় অবস্থান করার পর সর্বশেষ গত সাতদিন আগে কাশর গ্রামের আজিম উদ্দিনের বাসা ভাড়া নিয়েছিল আলম। আলম জেএমবির তালিকাভুক্ত সদস্য ও ওয়ান্টেড ছিল বলে প্রেসবিফ্রিংয়ে জানান পুলিশ সুপার। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেররিজমের বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ভালুকা কাশর গ্রামের ঘটনাস্থল আজিম উদ্দিনের বাসায় অভিযান শুরু করে। প্রায় ৫ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাসের এই অভিযানের শুরুতেই বাসা থেকে বের করে আনা হয় বোমার আঘাতে বিক্ষত মোহাম্মদ আলম প্রামাণিকের লাশ। বোমার আঘাতে আলমের দুই পা ও দুই হাতের কব্জি উড়ে গেছে। বিকৃত হয়ে গেছে তার মুখম-ল। রক্তে ভেসে গেছে পুরো শরীর। বিস্ফোরণে বসত ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ঘরের পাকা দেয়াল। আলমের লাশ বের করে আনার পর একের পর এক বের হতে থাকে প্রেসার কুকারসহ ভয়ঙ্কর সব বোমা। এর আগে সকাল থেকেই বাড়ির চারপাশে ভিড় জমায় নানা শ্রেণী পেশার শত শত উৎসুক মানুষ। ফায়ার বিগ্রেড ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবক’টি ইউনিট যোগ দেয় এই অভিযানে। একটি হ্যান্ড গ্রেনেড ও দুটি প্রেসার কুকার বোমাসহ উদ্ধার করা হয় সাতটি শক্তিশালী তাজা বোমা। বিকেল ৩টার দিকে অভিযান শেষে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, বোমা তৈরির এই কারখানা থেকে যে পরিমাণ বোমা, ডিভাইস ও সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে তা দিয়ে পুরো দেশ অস্থির করা সম্ভব। বোমা তৈরির এই নিরাপদ কারখানা থেকে জঙ্গীদের বোমা সরবরাহ করছিল এই আলম। প্রেসার কুকারের যে দুটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো হয়তবা কোন একটা টার্গেটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গী আলমের। রবিবার রাতের বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ডিআইজি ময়মনসিংহ রেঞ্জ নিবাস চন্দ্র মাঝি, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম ও এসএ নেওয়াজীসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী সন্তানদেরও আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে আলমের স্ত্রী জানায়, গত রমজান মাসে বাড়ি থেকে বের হয় আলম। প্রথমে কুষ্টিয়ায় আস্তানা গড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টের পেয়ে গেছে এমন খবর পেয়ে একরাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে চলে আসে আলম ভালুকায়। তবে ভালুকার এই জায়গাটি পুলিশের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। এই আস্তানা ছেড়ে সর্বশেষ কাশর গ্রামের আজিম উদ্দিনের বাসা ভাড়া নিয়েছিল বলে পুলিশকে জানায় স্ত্রী পারভীন। পারভীন আরও জানায়, জঙ্গী সদস্য আলম নিজে কখনও নামাজ রোজায় বিশ্বাস করত না। কথায় কথায় স্ত্রীকে ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি দিয়ে কাবু করে রাখত। আলম ৫ মাস আগেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর থেকে জানান, পরিবারের ওপর রাগ করে ৫ মাস আগে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় ভালুকায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত সদর উপজেলার চকআমহাটি এলাকার আলম প্রামাণিক (৩০)। এরপর থেকে তার আর কোন সন্ধান মেলেনি। ভালুকায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত হওয়ার পর খোঁজ নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ। নিহত আলম প্রামাণিক নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের পিয়ন ও চকআমহাটি এলাকার আবুল কালামের ছেলে। নিহত আলম প্রামাণিকের মরদেহ তার পরিবার গ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কিছুই বলেনি তার পরিবার। এদিকে, নিখোঁজ ছেলের সন্ধানের জন্য চলতি বছরের ৬ জুলাই নাটোর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে জঙ্গী আলম প্রামাণিকের পিতা আবুল কালাম। জিডির তদন্তও করে পুলিশ। কিন্তু আলমের কোন অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। জিডির বিষয়ে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, আলম প্রামাণিক নিখোঁজ হওয়ার পর তার পিতা থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে, সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে। তদন্ত করতে গিয়ে সে কোথায় অবস্থান করছে তার বিষয়ে কোন কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যার কারণে তাকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি।
×