ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার কোরবানির হাট সুলতানগঞ্জ

একটি গরুর হাটের কাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৯ আগস্ট ২০১৭

একটি গরুর হাটের কাহিনী

সমুদ্র হক ॥ হাট ভরা গরু। হাট ছাড়িয়ে রাস্তার ধারেও অবস্থান। যত গরু তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ। দেশী গরু তো আছেই। দেশে প্রজননে বিদেশী গরু আছে। সঙ্গে আছে অতিথি গরু। এসেছে পার্শ¦বর্তী দেশ থেকে। ক্রেতা আছে। আবার ক্রেতা নেই। এক গরুর সঙ্গে অন্তত তিনজন মানুষ। গরুর মালিক, ব্যাপারী ও দালাল। কখনও দালালের সংখ্যা বেড়ে কয়েকগুণ হয়। এ দৃশ্য বগুড়ার একটি বড় হাট সুলতানগঞ্জের, যা বসেছিল সোমবার। হাট বিকেলে বসার কথা। তবে গরুর আগমন হতে থাকে দুপুর ১২টা থেকেই। গরু আসে ট্রাক, মিনিট্রাক, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রাকে। কিছু আসে হেঁটে। হাট চলে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত। গরু আগমনের সঙ্গে দালালরা প্রস্তুতি নেয় চাপাবাজির। হাটে গরুর ওপর চাপাবাজ দালালের চলমান ধারা বর্ণনা। কান ঝালাপালা। গরুর ওজন কত, কয়টি দাঁত, কয় মণ গোশত হবে ইত্যাদি মুখস্ত। দাম আগ্নেয়গিরির মতো গগনচুম্বী। মনে হবে দাম শুনে গরু হাসে, হাম্বা ডাকে। আম পাবলিক লাফিয়ে ওঠে। মাথায় হাত দিয়ে বসে। উচ্চবিত্তের ক্রেতারা উঁচু লম্বা নাদুসনুদুস হৃষ্টপিষ্ট গরু খোঁজে। এমন ক্রেতা-দালালের দৃষ্টিতে পড়ার সঙ্গেই গরুর লেজের সঙ্গে দালালের লেজ জুড়ে যায়। অন্য ক্রেতা সরিয়ে দিয়ে শুরু হয় গরুর ফ্যাশন শো। গরুর গলায় মালা। শিংয়ে জরি দিয়ে সাজানো। গরু ইতিউতি তাকিয়ে পরখ করে নেয়। দুষ্টু গরু সুযোগ খোঁজে কিভাবে শিংয়ের গুঁতো ও লেজ দিয়ে আঘাত করা যায়। কোন গরু এই ভিড়ের মধ্যেই মলত্যাগ ও প্রস্রাব করে। কখনও গোমূত্র ও গোবর গিয়ে পড়ে হাটুরে ও ক্রেতার গায়ে। গরুর হাটে গেছে অথচ পায়ে গোবর দলেনি বা গুঁতো খায়নি এমন হাটুরে কম। সাধারণ ক্রেতাদের কথা- বহু অঙ্কের টাকায় যারা গরু কিনছে তারা গরু নয়, টাকা কোরবানি দিচ্ছে! হাটবেলার শুরু থেকে মধ্যবেলা পর্যন্ত দাম উঠতেই থাকে। তারপর দামের ব্যারোমিটার নামে। ক্রেতাদের অনেকেই এ সুযোগটি খুঁজে নেয়। মাইকে কোরবানির হাটের প্রচার চলে শহরে ও শহরতলীতে। হাটে ব্যাপারী খামারিদের থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত থাকে। এবারের কোরবানির হাটে গরুর দাম নিত্যদিনই ওঠানামা করছে। অনেকের ধারণা, শেষবেলায় দাম কমবে যে কারণে হাটে যত ক্রেতা যায় তার তিনভাগের একভাগ গরু কেনে। বাকিরা ফিরে যায়। পথ নেয় আবার কোন হাটের দিকে। গরু পরখ করার এ পালা শেষ হয় ঈদের আগের দিনের হাটে। যিনি গরু কেনেন তাকে দাম মুখস্ত রাখতে হয়। বাড়ি পৌঁছবার আগে রাস্তায় জনে জনে দাম জানার কৌতূহলে দাম বলতে বলতে ক্রেতার মুখে ওঠে ফেনা। ক্রেতাসাধারণ গতবারের দামের সঙ্গে এবারের দাম মিলিয়ে দেখেন। হিসাব কষেন কতটা বেড়েছে-কমেছে। বগুড়া অঞ্চলে এবারের হাটগুলোতে খামারিদের গরু বেশি আসছে। গ্রামে গরু পালন বেড়েছে। কোরবানির ঈদের মাস ছয়েক আগে গ্রামের সচ্ছল কৃষক বাড়তি রোজগারে গরু পালন করে। হাটের পাশাপাশি গ্রামের খামারিদের কাছে ক্রেতারা যাচ্ছেন। সেখানেই গরু রেখে আসছেন। ঈদের আগে এসব গরু যাবে ক্রেতার জেলা শহরের বাড়িতে অথবা উপজেলায়। বগুড়ায় এবারর কোরবানির ঈদের হাটের সংখ্যা ৭৮। তবে ঈদের আগের দুদিনে এ সংখ্যা বেড়ে যাবে। এমনটি জানালেন কোরবানির হাটের সঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, বগুড়া অঞ্চলে গরুর খামারের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর ছিল ২৬ হাজার ৩৮টি। সেখানে গরু ছিল এক লাখ ৬২ হাজার ৮৮৭টি। এ বছর গরুর খামার বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার। সেখানে গরু পালন হয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার। এই গরুর বড় অংশটিই কোরবানির হাটে উঠেছে। এবারের কোরবানির হাটে দেশী গরুর চাহিদা বেশি। ব্যাপারীরা বলছেন, ওপার থেকে যে গরু আসছে তার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দিকে। উত্তরাঞ্চলের ক্রেতারা দেশী গরু বেশি কিনছে। মোটামুটি মাঝারি সাইজের গরুর দাম ৫৮ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বড় গরুর দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
×