অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ওষুধ শিল্পে ইন্দোনেশিয়া বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ওষুধ উৎপাদন ও পরবর্তীতে দেশে নিয়ে তা বাজারজাতকরণ করবে দেশটির উদ্যোক্তারা। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারে শীঘ্রই ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট মি. জোকো উইদোদো বাংলাদেশ সফরে আসবেন। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই প্রতিনিধিদল আগামী অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনষ্ঠিতব্য ৩২তম ট্রেড এক্সপো’তে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া দেশটির অনুরোধে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা যায় কি না সে বিষয়েও তাদের প্রস্তাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সোমবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিসেস রিনা সোয়েমারনো এফবিসিসিআই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ওই সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের ইকোনোমিক কাউন্সিলর মিস ইনগ্রিড রোজালিনাও আলোচনায় অংশ নেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল এবং আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু ‘আসিয়ান’-এর প্রবেশদ্বার তাই বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া যৌথভাবে এ ভৌগলিক অবস্থানের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। গত দুই বছরে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের উদার বিনিয়োগ নীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি সরকারের প্রতিষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড)’-এ ইন্দোনেশিয়ার জন্য এক্সক্লুসিভ ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। আর এসব বাস্তবায়নে বাংলাদেশের বেসরকারী খাতের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।
ওই সময় ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত এদেশের ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়ার উদ্যোক্তারা এখানকার ওষুধ শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন। আর একারণে ওষুধ শিল্পে তারা বিনিয়োগ করতে চান।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ইন্দোনেশিয়ায় রফতানি করে এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ১১০৭ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যগুলো হচ্ছে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম- টেক্সটাইল এবং নিটওয়্যার। আর ইন্দোনেশিয়া থেকে মুলত টেক্সটাইল সামগ্রী এবং খনিজ দ্রব্য আমদানি করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে ৯০টির বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছে। সিংগভাগ ওষুধ যাচ্ছে আফ্রিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে। দেশে উধীয়মান যে কয়টি শিল্পখাত রয়েছে তার মধ্যে প্রথম সারিতেই রয়েছে ওষুধের নাম। এলডিসি দেশ হিসেবে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মেধাস্বত্ব আইনের বাইরে বিশ্বের যেকোন দেশে ওষুধ রফতানির সুযোগ পাবে। গত বছর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিসেস রিনা সোয়েমারনো ঢাকা ও জাকার্তার মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে বিশ্বের ১৬তম বৃহৎ অর্থনীতি এবং জি-২০-এর অন্যতম সদস্য। বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া যেহেতু এশিয়ার দুটি নিকটতম দেশ, এবং দু’দেশই উন্নয়নশীল পর্যায়ে রয়েছে, তাই দেশ দুটির পারস্পরিক স্বার্থে একসাথে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইন্দোনেশিয়ার অনুকূলে থাকলেও ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী বলে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন। বাংলাদেশ যেহেতু ওষুধ শিল্পে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রফতানি করছে, তাই রাষ্ট্রদূত ঔষধ শিল্পে বাংলাদেশের সাথে যৌথ বিনিয়োগেরও আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়া যেহেতু বাংলাদেশীদের জন্য ‘ফ্রিভিসা’ চালু করেছে তাই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের কাছে ইন্দোনেশীয়দের জন্যও একইরকম ব্যবস্থা অনুরোধ জানান। এছাড়াও রাষ্ট্রদূত দ্রুততম সময়ে ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি মি. জোকো উইদোদো এবছরেরই কোন এক সময় বাংলাদেশ সফরে আসবেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: