ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে বোমা বিস্ফোরণে নিহতের বাড়িতে আহাজারি

প্রকাশিত: ০১:১০, ২৮ আগস্ট ২০১৭

ময়মনসিংহে বোমা বিস্ফোরণে নিহতের বাড়িতে আহাজারি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ পরিবারের ওপর রাগ করে গত ৫মাস আগে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায় ময়মনসিংহের ভালুকায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গি নাটোর সদর উপজেলার চকআমহাটি এলাকার আলম প্রামানিক (৩০)। এরপর থেকে তার আর কোন সন্ধান মেলেনি। গত ২৪ আগস্ট ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর এলাকার একটি আধা-পাকা বাড়িতে বোমা বিস্ফোরনে নিহত হয় সে। এরপর বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ। নিহত আলম প্রামানিক নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজের পিয়ন ও চকআমহাটি এলাকার আবুল কালামের ছেলে। তবে নিহত জঙ্গী আলম প্রামানিকের মরদেহ তার পরিবার গ্রহন করবে কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পস্ট করে কিছুই বলেনি তার পরিবার। জঙ্গী আলম প্রামানিকের পরিবার জানায়, গত এপ্রিল মাসে পিতা আবুল কালামের কাছে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ক্রয় করার জন্য একলাখ টাকা দাবী করে জঙ্গী আলম প্রামানিক। কিন্তু তার পিতা দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বকৃতি জানায়। এরপর পরিবারের ওপর রাগ করে স্ত্রী পারভিন বেগম (২৫) এবং দুই সন্তান ইয়ামিন (৯) এবং ইসমাইল (৬) কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঢাকার উদ্দ্যেশে চলে যায়। এরপর থেকেই তার সাথে তার পরিবারের লোকজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সোমবার সকালে জঙ্গী আলম প্রামানিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু মানুষের জটলা। পরে গণমাধ্যম কর্মী এবং পুলিশের কাছে বোমা বিস্ফোরনে ছেলে নিহত হওয়ার খবর পেয়ে আহাজারিতে ভেঙ্গে পড়েন তার পরিবার। ছুটে আসেন আশপাশের প্রতিবেশীরা। এলাকায় শান্ত স্বভাবের হিসেবে পরিচিত ছিল আলমের। তবে আলম জঙ্গীবাদের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে এটা বিশ্বাস করতে পারছেনা তার পরিবার এবং এলাকাবাসীরা। এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে জঙ্গী আলম প্রামানিকের পিতা আবুল কালাম ও মা আম্বিয়া বেগম বলেন, গত ৫মাস আগে ছেলে আলম তার কাছে একলাখ টাকা দাবী করে। কিন্তু গরীবের সংসারে এত টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তার ছেলে আলম রাগ করে বলে, যেদিন সে একলাখ টাকা জোগাড় করতে পারবে সেদিন সে বাড়ি ফিরবে। এই বলেই স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দ্যোশে বের হয়। এরপর আলমের সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছেলে নিখোঁজের পর তিনি থানায় জিডিও করেন। পরে সোমবার সকালে পুলিশ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তিনি ছেলে নিহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তবে তার লাশ গ্রহন করবেন কিনা সে বিষয়ে তাৎক্ষনিক তিনি কিছু জানাননি। এদিকে, নিখোঁজ ছেলের সন্ধানের জন্য চলতি বছরের ৬ জুলাই নাটোর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে জঙ্গী আলম প্রামানিকের পিতা আবুল কালাম। জিডির তদন্তও করে পুলিশ। কিন্তু আলমের কোন অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি তারা। জিডির বিষয়ে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, আলম প্রামানিক নিখোঁজ হওয়ার পর তার পিতা থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে, সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে। তদন্ত করতে গিয়ে সে কোথায় অবস্থান করছে তার বিষয়ে কোন নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যার কারণে তাকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। এদিকে, জঙ্গী আলম প্রামানিকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে গতকাল দুপুরে তার বাড়িতে যান জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাহাবুব আলম। সেখানে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এবিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাহাবুব আলম বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশ তার বাড়িতে গিয়ে কিছু তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তথ্য ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের সাথে এখানকার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে।
×