ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিকলীতে ঘোড়াউত্রা নদী খনন ড্রেজিংয়ে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২৮ আগস্ট ২০১৭

নিকলীতে ঘোড়াউত্রা নদী খনন ড্রেজিংয়ে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ ॥ জেলার হাওড় অধ্যুষিত নিকলী উপজেলায় গোড়াদিঘা জলমহালস্থ ঘোড়াউত্রা নদী ড্রেজিং কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নদীর বালি নদীতেই ফেলে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার পাঁয়তারা করছে নিয়োজিত টিকাদার। এছাড়াও সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া গোড়াদিঘা জলমহালের ইজারাদাগণ মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বারবার অবহিত করা হলেও অদ্যবধি এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহণ কর্তৃক ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর একটি স্মারকে ৪৫ কোটি ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায় ভৈরব-ছাতক নৌপথ (লট-৪) এর ড্রেজিং প্রকল্পের কাজটি পায় ‘আকুয়া মেরিন ড্রেজিং লিমিটেড নামে ঠিকাদার। প্রকল্পটি সিলেট জেলার ছাতকসহ কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ জেলার সাথে নৌ যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখতে ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথ খনন কাজ শুরু করে। বিগত ২০১৫ সাল থেকে থেমে থেমে ড্রেজিং কাজ করছে এবং চলতি বছরের ৩ জুলাই হতে ঘোড়াউত্রা নদী পথে পুরোদমে ড্রেজিংয়ের কাজ চালিয়ে আসছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রনালয়ের দেয় ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ওই ঠিকাদার কোম্পানী নদী খনন কাজ না করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে ড্রাম্পিং করে বালি নিরাপদ দূরত্বে ফেলার কথা থাকলেও কেবল খরচ বাঁচাতে ওই ঠিকাদার কোম্পানী লোক দেখানো নামে ড্রেজার দিয়ে নদীর বালি নদীতেই ফেলছেন। ফলে নদীর দু’পাড়ের ও তীরবর্তী এলাকায় হাজারো একর ফসলি জমি বালিতে ভরাট হয়ে উর্বরতা হারাচ্ছে। এমনকি বিশাল জলমহালে বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত মাছের ঘেরে বালি ফেলায় মাছ সংরক্ষণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে স্থানীয় জলমহাল ইজারাদার ইসলামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড অসহায় ও গরীব মৎজীবীদের গত তিন বছর ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। টেংগুরিয়া গ্রামের কৃষক ইউপি সদস্য সমেশ আলী, পূর্ব টেংগুরিয়া গ্রামের কৃষক হানিফ মিয়া ও গোড়াদিঘা গ্রামের কৃষক বকুল মিয়াসহ আরো বেশ কয়েকজর মৎস্যজীবী অভিযোগ করে জানান, নদীতে ভাসমান বালি ফেলার কারনে গত তিন বছর ধরে কোনো ফসল ফলাতে পারছে না। আগে যে কানি ক্ষেতে ৫০ থেকে ৭০ মন ধান পেতাম এখন সে ক্ষেতে ২০ থেকে ২৫ মন ধান পাই। ইসলামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের কাছ থেকে লীজ নিয়েছি। এতে প্রতি বছর এ জলমহালে ইজারা মূল্য বাবদ ৩৭ লাখ টাকা সরকারের খাতে জমা দিতে হচ্ছে এবং মাছ সংরক্ষণের জন্য বাঁশ কাটা, খাবার ও পাহারাদার বাবদ আরো প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু প্রথম দু’বছর মাছ চাষ করার পর থেকেই তৃতীয় বছর মাছ আহরণের সময় কোনো নোটিশ ছাড়াই জলমহালের উপর দিয়ে ড্রেজিং কাজ শুরু করেন ঠিকাদার ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হলেও অদ্যবধি এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। যদি আগামীতেও কাজ চলে তাহলে অনেকে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই এর প্রতিকারের জন্য অসহায় দেনাগ্রস্ত সাধারণ মৎস্যজীবীরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে আকুয়া মেরিন ড্রেজিং লিমিটেডের ঠিকাদার কর্তৃক নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ইকবাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতি মেনেই ড্রেজিং কাজ চালানো হচ্ছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের কথা বলেন বলে এ প্রতিবেদকের ফোন কেটে দেন।
×