ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁয় সড়ক সেতু ভেঙ্গে ক্ষতি এক শ’ কোটি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৮ আগস্ট ২০১৭

নওগাঁয় সড়ক সেতু ভেঙ্গে ক্ষতি এক শ’ কোটি

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ জেলায় চলতি বন্যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরাধীন রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ায় ১শ’ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) ক্ষতি হয়েছে ৬৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্ষতি সাধিত হয়েছে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। নওগাঁ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম বাদশাহ মিয়া বলেন, জেলায় এই দফতরাধীন মোট ১৩০টি সড়কের ১৭৮ দশমিক ৮১ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আত্রাই উপজেলায় ১৫টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬০ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, যার আর্থিক ক্ষতি ২৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বদলগাছি উপজেলায় ৯টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার রাস্তা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ধামইরহাট উপজেলায় ২৫ সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৫১ লাখ ৭ হাজার টাকা। মান্দা উপজেলায় ১৬ সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ৭২ দশমিক ২৬ কিলোমিটার রাস্তা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ৭১ লাখ ২ হাজার টাকা। মহাদেবপুর উপজেলায় ১২টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সদর উপজেলায় ১১টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ কিলোমিটার রাস্তা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। পতœীতলা উপজেলায় ৩ সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ০ দশমিক ২ কিলোমিটার, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২১ লাখ ৫ হাজার টাকা। নিয়ামতপুর উপজেলায় ৬টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ০ দশমিক ২ কিলোমিটার রাস্তা। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। রানীনগর উপজেলায় ১৯ সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭ দশমিক ৪২ কিলোমিটার, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং সাপাহার উপজেলায় ৪টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও জেলায় এলজিইডির অধীনে ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ১৯। এসবের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার টাকা বলে জানান তিনি। অপরদিকে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হামিদুল হক জানান, মেজর পিএমপি কর্মসূচীর আওতায় আত্রাই-সিংড়া সড়কে আত্রাই উপজেলার মালিপুকুর গ্রামসহ ৬ষ্ঠ হতে ১৪তম কিলোমিটারে সড়ক কাম বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নওগাঁ-আত্রাই-নাটোর সড়কে ছোট যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ৫টি স্পটে ১১৮ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। মান্দা-বাগমারা-আত্রাই সড়কে পাউবো’র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সড়কটি প্রশস্তকরণ উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত রয়েছে। পতœীতলা-সাপাহার-পোরশা সড়কে ৩৮তম ও ৩৯তম কিলোমিটারে পেভমেন্ট ও সোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা। বগুড়া-নওগাঁ-মহাদেবপুর-পতœীতলা-ধামইরহাট-জয়পুরহাট সড়কে নওগাঁ শহরের বাটার মোড় থেকে রুবীর মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত। এই সড়কটি আঞ্চলিক মহা-সড়কসমূহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পভুক্ত। জয়পুরহাট-আক্কেলপুর-বদলগাছি সড়কে বদলগাছি উপজেলার সেনপাড়া গ্রামে ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। নওগাঁ শহর বাইপাস সড়ক ২য় হতে ৬ষ্ঠ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকা। পূর্ব ঢাকা মোড়-আত্রাই সড়কে এ রাস্তার ৭ম কিলোমিটার বাগাচারা নামকস্থানে এবং ৮ম কিলোমিটার রানীনগর রেলস্টেশন মোড় সড়ক কাম বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা। ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষতি ৩৬ কোটি নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, এবারের বন্যায় জেলার অসংখ্য কাঁচা-পাকা রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারী ও স্থানীয়রা। আর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, সেতু ও কালভার্টের পরিসংখ্যান তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সংস্কারের কাজ চলছে। সম্প্রতি উজানের ঢল আর টানা বর্ষণে জেলার হরিপুর, রানীশংকৈল, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী ও সদর উপজেলায় ৪৬টি ইউনিয়নের সহস্রাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। ডুবে যায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। পানির স্রোতে ভেঙ্গে যায় সেতু ও কালভার্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় সাধারণ মানুষের চলাচলে ব্যাহত হয়। কিছু কিছু রাস্তা বেশি ভেঙ্গে যাওয়ায় কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে যেতে হয় গন্তব্যস্থলে। ফলে রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট দ্রুত সংস্কার করা না হলে স্থানীয়রাসহ সাধারণ মানুষ আরও বেশি দুর্ভোগের শিকার হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ঠাকুরগাঁও অফিস জানায়, এলজিইডি’র আওতায় ১ হাজার ৫২ কিলোমিটার পাকা রাস্তার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫, রানীশংকৈলে ৪, পীরগঞ্জে ১০, হরিপুরে ৯ ও বালিয়াডাঙ্গীতে ১৮ কিলোমিটার বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে তিন হাজার ৭০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৬১, রানীশংকৈলে ৩১, পীরগঞ্জে ৪১, হরিপুরে ৩৭ ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৫০ কিলোমিটার ক্ষতি হয়েছে। আর ছয় হাজার ২৮৯টি সেতু ও কালভার্টের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ সেতু, ২৩ কালভার্ট, রানীশংকৈলে ২ সেতু, ৭ কালভার্ট, পীরগঞ্জে ৫ সেতু, ১৯ কালভার্ট, হরিপুরে ৫ সেতু ১৬ কালভার্ট ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৪ সেতু ২১টি কালভার্ট বন্যার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে। দিনাজপুরে ৫৭২ কিসিড়কে ক্ষতি স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৃষ্ট স্মরণকালের বন্যায় জেলার প্রায় ৫৭২ কিলোমিটার সড়ক ভেঙ্গে গেছে। ফলে এসব সড়কের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। আসন্ন ঈদে অনেকের বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও কালভার্ট। এছাড়া ভেঙ্গে গেছে শহররক্ষা বাঁধসহ অন্যান্য অবকাঠামো যার ক্ষতির পরিমাণ আড়াইশ’ কোটি টাকা। দিনাজপুর সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম (সড়ক সার্কেল দিনাজপুর) জানান, জেলায় ১১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়কসহ ১৩টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার ও মেরামত করতে ১১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বন্যায় সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন ও ঘাঘড়া ক্যানেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো মিলে ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘাঘড়া ও গিরিজা ক্যানেলে অবৈধভাবে স্থাপনা ও দখলের কারণে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। এ দু’টি ক্যানেল দখলমুক্ত করা না হলে সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌরবাসীর বার বার দুর্ভোগ ও ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সরকারকে গচ্ছা দিতে হবে কোটি কোটি টাকা। মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তার কার্পেটিং, সিসি ও আরসিসি রাস্তা, এইচবিবি রাস্তার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার, আরসিসি ড্রেন ২২ কিলোমিটারসহ ব্রিজ, কালভার্ট সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দু’টি ক্যানেল দখলমুক্ত ও খনন করতে ৩৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। দিনাজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, জেলায় ২০৪ কিলোমিটার সড়ক, ৮০টি ব্রিজ ও চার শ’ স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯২ কোটি টাকা। এদিকে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, দিনাজপুরে ২০৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩১টি স্থানে ব্রিজের ২ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২২ কোটি ৭০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। নদীর তীর প্রতিরক্ষাবাঁধ ১৯ দশমিক ১৮ কিলোমিটার ভেঙ্গে ১৪ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও আউট নেট ১৫টি রেগুলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। এ সব পুনর্বাসন করতে ৩৯ কোটি ৫৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দিনাজপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে।
×