ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহারশি থেকে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে সেতু

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ আগস্ট ২০১৭

মহারশি থেকে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে সেতু

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ২৭ আগস্ট ॥ ঝিনাইগাতী সীমান্তে কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না মহারশি নদী থেকে অনুমোদনহীন অবৈধ বালু উত্তোলন। সন্ধ্যাকুড়া সীমান্ত সড়কে নির্মিত সেতুর কাছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র বসিয়ে দিনে-রাতে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পড়েছে সেই সেতু ও নদীর পাড়সহ আশপাশের আবাদি জমি। জানা যায়, উপজেলার মহারশি নদীর ওপর নলকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া সীমান্ত সড়কে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ‘গ্রেটার ময়মনসিংহ প্রজেক্টের’ (জিএমপি) আওতায় ৩ কোটি ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৬০.১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে ওই সেতুটি নির্মাণ করে এলজিইডি। কিন্তু প্রায় ৭/৮ বছর যাবত একটি সংঘবদ্ধ চক্র সেতুর দক্ষিণ ও উত্তর পাশে আনুমানিক ৩শ’ গজ দূরে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র বসিয়ে সেই নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কোন অনুমতির প্রয়োজন পড়ছে না তাদের। এভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করা হলেও কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না। বালু উত্তোলনের কারণে সৃষ্ট সমস্যার প্রেক্ষাপটে কখনও কেউ প্রতিবাদ করলেও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়। সরেজমিনে গেলে কথা হয় সেতুর পাশের গুমড়া গ্রামের যুবক এমদাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে মহারশি নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে সেতুর বীমের ব্যাজের নি¤œাংশ মাটি শূন্য হয়ে পড়েছে। নদীর পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং আশপাশের আবাদি জমিগুলোতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মহারশি নদীর ওপর সীমান্ত সড়কে নির্মিত ওই সেতুর দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩শ’ গজ দূরে ৫টি ও সেতুর উত্তর পাশে প্রায় ৬৫০ গজ দূরে ১১টি খনন যন্ত্র বসানো হয়েছে। সেতুর দক্ষিণ পাশে বালু ব্যবসায়ী হেলাল শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খনন যন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। আর ৬ শ্রমিক বালু স্তূপ থেকে ট্রাকে বালু ভরছে। বালু উত্তোলন করার কোন অনুমতি আছে কি-না, জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী হেলাল বলেন, বালু উত্তোলনে অনুমতি আছে কিনা তা আমার জানা নেই। এ স্থানে ৫টি খনন যন্ত্র দিয়ে আমিসহ হাশেম, কালাম আরও ২ জন সামিউল ফকিরের অধীনে বালু উত্তোলন করি। আবার সেতুর উত্তর পাশে প্রায় ৩শ’ গজ দূরে ব্যবসায়ী জাফর বালু উত্তোলন করছেন। সেতুর কাছাকাছি এভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড়সহ সেতুর ক্ষতি হচ্ছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে জাফর আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলেন, ওই দেখেন সেতু কই, আর মেশিন কই। সেতু থেকে ১ হাজার গজ দূরে মেশিন বসিয়ে পাইপ দিয়ে বালু এখানে আনা হচ্ছে। অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই যেভাবে তুলছে, আমিও ওইভাবেই বালু উত্তোলন করছি। উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হক বলেন, এভাবে মহারশি নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ওই সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে সন্ধ্যাকুড়া সেতুর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৪টি খনন যন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় বালু উত্তোলন বন্ধে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
×