ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে কেনাকাটা

ইলেকট্রনিক্স পণ্যের শো রুমে উপচেপড়া ভিড়, ফ্রিজের কদর বেশি

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৮ আগস্ট ২০১৭

ইলেকট্রনিক্স পণ্যের শো রুমে উপচেপড়া ভিড়, ফ্রিজের কদর বেশি

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ আর মাত্র কয়েকদিন পরই কোরবানির ঈদ। শেষ মুহূর্তে তাই ক্রেতারা পছন্দের ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনতে ছুটছেন বিভিন্ন শোরুমে। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সব সময়ই বেড়ে যায় রেফ্রিজারেটর (ফ্রিজ) ও ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজের বেচাকেনা। কোরবানির পশুর মাংস সংরক্ষণের জন্য মূলত এ সময়ে ফ্রিজের বাড়তি চাহিদা দেখা দেয়। রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ এখন আর বিলাসী পণ্য নয় বরং জীবনযাপনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের শোরুমগুলোতে শুধু ফ্রিজ কিংবা ডিপ ফ্রিজই নয় বরং টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনারসহ অন্যান্য পণ্যও কিনছেন ক্রেতারা। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশী-বিদেশী নানা ব্র্যান্ডে চলছে অফারের হিড়িক। নগদ মূল্যছাড়সহ এক এক প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন অফার দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। আর তাইতো বিভিন্ন শোরুমে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বিক্রেতারা জানালেন, বিক্রির চাপ থাকবে চাঁদরাত পর্যন্ত। রাজধানীতে ফ্রিজের প্রধান বাজার স্টেডিয়াম মার্কেট, কাওরানবাজার, বিজয় সরণি, মালিবাগ ও মুগদার বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স শোরুমে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে ছুটছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানালেন-ওয়ালটন, মাইওয়ান, যমুনা, মিনিস্টার, মার্সেলের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি হিটাচি, সিঙ্গার, এলজি, ওয়ার্লপুল, কংকা, এ্যারিস্টন, স্যামসাং, হায়েস, হায়ার, শার্পসহ আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বেশ বিক্রি হচ্ছে। রবিবার দুপুরে রাজধানীর বিজয় সরণির ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে ঘুরে দেখা গেল, এলজি বাটারফ্লাই, সিঙ্গার, ওয়ালটন, কঙ্কাসহ বিভিন্ন শোরুমে রয়েছে ক্রেতাদের সমাগম। প্রায় সবারই নজর ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজের ওপর। মিরপুর-১০ নং থেকে সিঙ্গারের শোরুমে আমজাদ হোসেন এসেছেন তার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে। উদ্দেশ্য একটি ডিপ ফ্রিজ কিনবেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানালেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষেই ডিপ ফ্রিজ কিনতে আসা। এছাড়া শুনলাম ঈদ উপলক্ষে সিঙ্গারের ফ্রিজগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যছাড়। তাই চলে আসলাম কিনতে। তবে এসব পণ্যের বাজার এখন দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। বিশেষ করে দেশে তৈরি ওয়ালটন এবং মার্সেল ব্র্যান্ডের ফ্রিজগুলোতে ডিপ অংশ অনেক বড়। যা আমদানি করা ফ্রিজে নেই। বড় ডিপ হওয়ার কারণে দুটি ফ্রিজ কেনার পরিবর্তে একটি ফ্রিজ কেনাকেই লাভজনক মনে করছেন ক্রেতারা। এ বিষয়ে বিজয় সরণির ওয়ালটন শোরুমের ব্যবস্থাপক আরিফ দেওয়ান জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি ক্রেতাদের মধ্যে বড় ডিপের ফ্রিজ কেনার প্রবণতা বেড়েছে। আর বড় ডিপের ফ্রিজ মানেই ওয়ালটন। কারণ আমদানি করা ফ্রিজের ডিপ অংশ থাকে অনেক ছোট। ফলে মাছ মাংস রাখার জন্য আলাদা করে ডিপ ফ্রিজ কেনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওয়ালটন ফ্রিজের ডিপ অনেক বড় হওয়ায় ওয়ালটনের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। তাই অফার দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে ৩০০ ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে র‌্যাংগসের বিজয় সরণি শোরুম। এই শোরুমের ইনচার্জ (সিটিপি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে ফ্রিজে ৭-২০ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স। ডিপ ফ্রিজের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ৩৬ হাজার টাকার ফ্রিজ রয়েছে এই শোরুমে। এছাড়া সাধারণ ফ্রিজের মধ্যে ২২ থেকে সর্বোচ্চ ৯৬ হাজার টাকা দামের ফ্রিজ রয়েছে। এই ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক ক্রেতাই মুখিয়ে থাকেন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিভিন্ন অফারের জন্য। আয়েশা বেগম ফার্মগেটের পূর্ব রাজাবাজার থেকে এসেছেন ভিশন ব্র্যান্ডের শোরুমে। তিনি ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনার কিনবেন বলে জনকণ্ঠকে জানালেন। তবে ভিশনই কেন? উত্তরে আয়েশা বললেন, ‘ঈদ উপলক্ষে এ ব্র্যান্ডের পণ্যে ৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এবার ফ্রিজের নতুন আটটি মডেল এসেছে। সবগুলোরই রং ও ডিজাইন নজরকাড়া। আমি এর মধ্যেই একটি কিনেছি ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে। এখন এসি (এয়ার কন্ডিশনার) দেখছি। যদি সম্ভব হয় তবে কিনে নিয়ে যাব। ঈদ উপলক্ষে স্যামসাংয়ের সব পণ্যেই চলছে ৫০০ থেকে ১৭শ টাকার নগদ মূল্যছাড়। এছাড়া মোটরসাইকেল, এলইডি টিভিসহ বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ থাকছে। স্যামসাংয়ের ২১৫ থেকে ৬০০ লিটারের ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে। যার দাম নেয়া হচ্ছে ৪০ হাজার থেকে দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। এছাড়া ইলেক্ট্রা ব্র্যান্ডের ১০০ থেকে ৩০০ লিটার ডিপ ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৭ হাজার থেকে ৩৭ হাজার টাকায়। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে সার্প ব্র্যান্ডেরও রয়েছে ক্রেতা চাহিদা। তবে এ ব্র্যান্ডের কোন পণ্যে অফার দেয়া হচ্ছে না এ ঈদে। সার্প ব্র্যান্ডের ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে ১৯৬ থেকে ৭০০ লিটার পর্যন্ত। দাম পড়বে ৪০ হাজার থেকে এক লাখ ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে। ১২০ থেকে ৪৯২ লিটারের ডিপ ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। মাইক্রো ওভেন, আইসক্রিম কার্টনসহ হোম ডেলিভারি ফ্রি। অন্যদিকে ঈদ-উল আযহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ইলেকট্রনিক্স মার্কেটের বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করলেও ভিন্ন রূপ দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেটে। কোরবানি উপলক্ষে ফ্রিজসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রি বাড়লেও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন এ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এএফসি অনূর্ধ-১৬ নারী ফুটবল খেলার কারণে বিক্রি একেবারেই নেই। যেদিন স্টেডিয়ামে খেলা হয় সেদিনই মার্কেট বন্ধ থাকে। মার্কেট খোলার পরও স্বাভাবিক বিক্রি হচ্ছে না। বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর্স ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, সারা বছর দেশে ১২ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়। যার প্রায় ৩০ শতাংশই বিক্রি হয় কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে।
×