ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি চলছে

গরু খোঁজা শুরু, সুদৃশ্য তোরণ, মাইকে ব্যাপক প্রচার

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২৮ আগস্ট ২০১৭

গরু খোঁজা শুরু, সুদৃশ্য তোরণ, মাইকে ব্যাপক প্রচার

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ গরু খোঁজা শুরু হয়ে গেছে। কোরবানির ঈদের বাকি এখনও এক সপ্তাহ। তাতে কী? দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকভর্তি হয়ে গরু আসছে। মহিষ ছাগল ভেড়া চাই? মরুভূমির উট? সবই পাওয়া যাচ্ছে রাজধানী শহর ঢাকায়। স্থায়ী হাট গাবতলী তো আছেই, চালু হয়ে গেছে বেশকিছু অস্থায়ী হাট। এসব হাট ঘুরে খোঁজা হচ্ছে পছন্দের কোরবানির পশু। ক্রেতারা দরদাম বোঝার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার দেখতে গিয়ে কিনে ফেলছেন। এভাবে কোরবানির ঈদের একটা আবহ মোটামুটি সৃষ্টি হয়ে গেছে। ঈদ-উল-আযহা সামনে রেখে রাজধানীর ২৩ স্থানে চালু হচ্ছে কোরবানির পশুর হাট। স্থায়ী হাটটি গাবতলী। বাকি ২২টি অস্থায়ী। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯টি হাট চালুর প্রক্রিয়া চলছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবে ১৩টি হাট। গত কয়েকদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জোরেশোরেই চলছে কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে বেশকিছু অস্থায়ী হাট বসে গেছে। হাটগুলোর প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ। ব্যানারে পোস্টারে চলছে প্রচার। পাড়া-মহল্লার অলিগলি ছাড়িয়ে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কের দেয়ালে দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে পশুর হাটের প্রচারের পোস্টার। বাদ যায়নি অভ্যন্তরীণ পরিবহনগুলোও। বাস-ট্রাকেও লাগানো হয়েছে পশুর হাটের পোস্টার। আর মাইকের কথা তো বলাই বাহুল্য, বিরাট গরু-ছাগলের হাট...। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কানে আসছে কথাগুলো। ইজারাদাররা পশু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করেছেন এরই মধ্যে। পশুর বেপারীদের থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী হাট বসানোর নির্ধারিত সময় এখনও বেশ কয়েকদিন বাকি থাকলেও তর সয়নি ইজারাদারদের। দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় সবকটিতেই বিক্রির জন্য পশু ওঠানো হয়েছে। গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে বেশ জমজমাট পরিবেশ। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ হাটের পরিধি আরও বাড়ছে। এরই মাঝে সব ধরনের পশু এখানে ওঠানো হয়েছে। প্রধান আকর্ষণ অবশ্য গরু। যথারীতি গরু নিয়েই বেশি আগ্রহ ক্রেতার। যশোর থেকে গরু নিয়ে এসেছেন জামাল উদ্দিন। এ ব্যবসায়ী জানান, শুক্রবার বিকেলে কয়েকজন মিলে ১৬টি গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। শনিবার মধ্যরাতের দিকে হাটে পৌঁছেছেন। ট্রাক থেকে গরু নামিয়ে রেখে তারা সকাল থেকে বিশ্রাম নিচ্ছেন। গরুগুলোকেও বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কুষ্টিয়া থেকে মোঃ এখলাস তিনটি বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। একটি আনুমানিক চার মণ ওজনের। বিক্রেতা জানালেন, এ গরুটির জন্ম তার খামারেই। নিজেই লালন-পালন করেছেন। দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। এত দাম কেন- জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, নিজের পালা এ গরুটি এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে পারবেন না। গাবতলী হাটে এখলাস যেখানে বসে আছেন, সেখান থেকে কিছু দূরে বসেছেন কুষ্টিয়া থেকে আসা বিক্রেতা সেকান্দার। তার গরুটিও প্রায় একই মাপের। রং লাল। তিনি গরুটির দাম হাঁকালেন দুই লাখ টাকা। সেকান্দার বলেন, আমি এ গরুটি ১০ মাস আগে ৭২ হাজার টাকায় কিনেছি। লালন-পালন ও খাওয়া-দাওয়ায় খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আমি খুব কমই লাভ চাচ্ছি। ছোট গুরুর দাম আরও যেন বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। বেপারী মকবুল হোসেন বলেন, তার কাছে দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের দুটি গরু আছে। দুটি গরু তিনি এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় ছেড়ে দেবেন। এত দাম কেন- জানতে চাইলে বলেন, ‘পোষাইতাছে না। তাই দাম চাইতাছি।’ হাটের অন্য বিক্রেতারা বলেন, তারা ক্রেতাদের মনোভাব বুঝতে চাইছেন। গাবতলীর পশুর হাটের মূল ফটকের পাশেই বিভিন্ন ধরনের ঘাস, খড় বিক্রি করা হচ্ছে। ঘাস বিক্রি করতে আসা হামেদ আলী জানান, এ হাটে সারাবছরই ঘাস বিক্রি করেন তিনি। তবে কোরবানির ঈদে হাটে গরু-ছাগল বেশি আসে, তাই তার বিক্রিও বেশ ভাল হয়। এক আঁটি ঘাস পাঁচ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। তবে হাট পুরোদমে শুরু হলে এ ঘাসের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন ১০ টাকায় বিক্রি করবেন এক আঁটি ঘাস। এদিকে গাবতলী হাটের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে দুটি অস্থায়ী কন্ট্রোলরুমও। গাবতলী পশুর হাটের সভাপতি মজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই যেন কোন প্রতারণার শিকার না হন, সে কারণেই এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×