ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অসিদের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২৮ আগস্ট ২০১৭

অসিদের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ অস্ট্রেলিয়া শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ স্পিনাররা। সাকিব-তামিমের দুর্দান্ত জুটির আগে ও পরে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটা খুব ভাল হয়নি। কিন্তু এরপর সাকিব ও মিরাজ মিলে যেভাবে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানদের স্পিন জাদু দেখালেন, তাতে প্রথমদিনটি বাংলাদেশেরই হয়ে গেল। প্রথম ইনিংসে খুব বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুতে পেসার পেট কামিন্সের গতি ও পরে স্পিনার নাথান লিয়ন ও এ্যাস্টন এ্যাগারের স্পিনে ২৬০ রানের বেশি করতে পারেনি মুশফিক বাহিনী। ৫০তম টেস্ট খেলার মাইলফলকের দিন সাকিব (৮৪) ও তামিম (৭১) মিলে যদি ১৫৫ রানের জুটি গড়তে না পারতেন, তাহলে ব্যাটিংয়ে আরও বাজে অবস্থা হতো। এই রান নিয়েই অসিদের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন স্পিনাররা। ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ১৮ রান করে বাংলাদেশের চেয়ে প্রথম দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ২৪২ রানে পিছিয়েও আছে। সাকিব ও মিরাজ মিলে আতঙ্ক তৈরি করে ফেলেছেন। তাইজুল ইসলাম তো এখনও বোলিংয়েই আসেননি। ওপেনার রেনশ (৬*) ও স্মিথ (৩*) ব্যাটিংয়ে আছেন। স্মিথ এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানও। কিন্তু যেভাবে বল ঘুরছে, তাতে স্মিথই কী আর সেইভাবে হাল ধরতে পারবেন? আজ দ্বিতীয় দিনে যদি খেলার শুরু থেকেই উইকেটে টার্ন মিলে, তাহলে তো অস্ট্রেলিয়ার বারোটাই বেজে যাবে। প্রথমদিনে যে অবস্থা ধরা দিয়েছে, একদিন যেতেই তো অসিদের হারানোর সম্ভাবনার কথাই সবার মুখে মুখে। গত বছর অক্টোবরে ইংল্যান্ডকে তো একইভাবে স্পিন ভেল্কি দেখিয়ে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই স্মৃতি যেন সবারই মনে পড়ছে। অবশ্য এটিও মাথায় রাখতে হবে। অসিদের দ্রুত যদি অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ, তাহলে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল করতে হবে। না হলে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ঘুরেও দাঁড়াতে পারে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট যে স্পিন ভেল্কি দেখাবে, তা সবারই জানা ছিল। এমনই স্পিন জাদু মিলল, একদিনে পড়া ১৩ উইকেটের মধ্যে ৯ উইকেটই স্পিনাররা দখল করে নিলেন। দিনে ৯ ওভার খেলার সুযোগ পেলেন স্মিথরা। তাতেই ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছেন অসি ব্যাটসম্যানরা। অস্ট্রেলিয়া যে ১৪ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়েছে, ওয়ার্নার (৮), খাজা (১) ও লিয়ন আউট হয়েছেন, ২টিই স্পিনারদের দখলে গেছে। ওয়ার্নারকে মিরাজ ও লিয়নকে সাকিব আউট করেছেন। খাজা হয়েছেন রানআউট। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানদের দেখেই মনে হচ্ছিল, তারা আতঙ্কিত। শফিউলের পেসটা ঠিকঠাক মতো তারা খেল ছিলেন। কিন্তু স্পিন আসতেই যেন ভয়ে চোখ বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। এই অবস্থা আজও জারি থাকলেই হয়। দ্বিতীয় দিনটিও নিজেদের করে নিতে পারবে বাংলাদেশ। আর টেস্টে দুইদিন একটি দল নিজেদের করে নিতে পারলে, জয় পাওয়া তো সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং শুরুর আগে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও অবশ্য কুপোকাত হয়েছেন। ১০ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে বাংলাদেশ। সৌম্য, ইমরুল, সাব্বির শুরুতেই আউট হয়ে যান। এ তিন ব্যাটসম্যানেরই উইকেট নেন পেসার পেট কামিন্স। কিন্তু এরপর যে ৭ উইকেট গেছে বাংলাদেশের, সবকটি অসি স্পিনারদের দখলে গেছে। লিয়ন ও এ্যাগার ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। পার্টটাইম স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নিয়েছেন এক উইকেট। ম্যাক্সওয়েলই আসল কাজের কাজটি করেছেন। ১০ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর তামিম-সাকিব মিলে দলকে ১৬৫ রানে নিয়ে যান। এমন সময়ে এই জুটিটি ভাঙ্গেন ম্যাক্সওয়েলই। এরপর তো বাকি ৬ উইকেটে ৯৫ রান যোগ করতে পারে বাংলাদেশ। তামিম ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফসেঞ্চুরি করে এগিয়ে যেতে থাকেন। ৭১ রানের পর আর এগিয়ে যেতে পারেন না। তামিমের আউটের পর সাকিবও আর বেশি দূর যেতে পারেননি। সেঞ্চুরি থেকে ১৬ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে যান সাকিব। লিয়ন আউট করেন সাকিবকে। এরপর মুশফিক, নাসির, মিরাজ, শফিউলরা মিলে দলকে আড়াই শ’ রানের উপরে পৌঁছান। এই রানই দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সামনে যেন পাহাড়সম মনে হচ্ছে। লিয়নের কথাতে তাই মনে হয়েছে। লিয়ন মেনে নিয়েছেন, দিনটি বাংলাদেশের। তিনি বলেছেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশই এগিয়ে। তবে স্পিনারদের বিপক্ষে স্মিথ, রেনশ, হ্যান্ডসকোম্ব, ম্যাক্সওয়েলরা যদি চাপকে সামাল দিতে পারেন, তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশাও দেখছেন। সাকিব তো ম্যাচ পাঁচদিনে যাবে না, সেই আলামতই পাচ্ছেন। বলেছেন, এ মুহূর্তে ড্রাইভিং সিটে আছে বাংলাদেশই। বাংলাদেশের লক্ষ্যই ছিল প্রথম ইনিংসে ২৫০ রান করা। এরপর স্মিথবাহিনীর উপর চাপ তৈরি করা। সেই চাপ তৈরি করেও ফেলা গেছে। এখন সাকিবের আশা, যত দ্রুত সম্ভব অস্ট্রেলিয়ার হাতে থাকা ৭ উইকেট তুলে নেয়া। তাহলে দ্বিতীয় দিনটিও নিজেদের করে নেয়া যাবে। যেমনটি রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটি নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
×