ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার ভারতেই দাবি

ফারাক্কা বাঁধ তুলে দাও

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৮ আগস্ট ২০১৭

ফারাক্কা বাঁধ তুলে দাও

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশ ও ভারতে বন্যার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করে ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেয়ার জন্য অভিমত প্রকাশ করেছেন ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ভারতের উত্তরাঞ্চলের বন্যার জন্য ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করছেন তারা। ফারাক্কা বাঁধের প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখতে বিহার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরাও চলমান বন্যার অন্যতম কারণ হিসেবে ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও নেপালেও বন্যা চলছে। সূত্র জানায়, ভারতের বিহারে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যেই শতাধিক লোক মারা গেছেন। বিহার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার কারণ হিসেবে বরাবরই ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করা হচ্ছে। কেননা ফারাক্কা বাঁধের কারণেই উজান থেকে আসা পানি দ্রুত নামতে পারছে না বলে বিহার সরকারের অভিযোগ। বিহারের রাজ্য সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারতের পানি বিশেষজ্ঞরা ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেয়ার সুপারিশ করেছেন। ভারতের বেশ কয়েকজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ফারাক্কা বাঁধের কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই ব্যারাজ তৈরি করা হয়েছিল তার কোনটাই এখন অর্জিত হচ্ছে না। এটির কারণে গঙ্গা দূষিত এবং ভরাট হয়ে ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। নদীর অববাহিকায় বছর বছর বন্যার কারণে দুর্ভোগ বাড়ছে। ভারতের ‘জলমানব’ হিসেবে খ্যাত ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজয়ী রাজেন্দ্র সিং ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে ফেলার সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধ হলো বিহারের কাছে অশুভ। এটা একটা অভিশাপ। এটাকে সরানোর প্রয়োজন। যতক্ষণ তা না হচ্ছে, ততক্ষণ এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। রাজেন্দ্র সিং বলেছেন, এতদিন ফারাক্কার কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিকগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি, পরিবেশগত দিক থেকে শুরু করে এর সাংস্কৃতিক, প্রাকৃতিক, ধর্মীয় দিকগুলোও খতিয়ে দেখা দরকার। ভারতের পানি বিশেষজ্ঞ হিমাংশু থাক্কার বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধের কার্যকারিতা বলতে এখন কিছুই নেই। সেচ থেকে শুরু করে বিদ্যুত, পানি সরবরাহ, অথবা বন্দরের নাব্য রক্ষা কোন কাজেই আসছে না ফারাক্কা। ফারাক্কার প্রয়োজনীয়তার পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সাধারণত প্রত্যেক বাঁধের কার্যকারিতা ২০ বছর পর পর পর্যালোচনা করে দেখা হয়। ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরি করার পর ৪২ বছর হয়ে গেলেও এটার কার্যকারিতা নিয়ে কোন পর্যালোচনা হয়নি। ফারাক্কা যতদিন থাকবে, ততদিন গঙ্গার গতি থমকে যাবেই। হিমাংশু থাক্কার বলেছেন, ফারাক্কা পর্যালোচনার জন্য যে কমিটি হবে সেটাতে কেন্দ্রের পাশাপাশি বিহার পশ্চিমবঙ্গসহ গঙ্গার অববাহিকার সব রাজ্য প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই পর্যালোচনার মধ্যে ফারাক্কা বাঁধের সামাজিক ও জনজীবনে কি প্রভাব পড়ছে সেসব বিষয়ে ও এর যৌক্তিকতা নিরূপণে ব্যয় কার্যকারিতার অন্য ইস্যুগুলোর সঙ্গে রাখতে হবে। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি বিহার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান হয়েছেন ভারতের সুপ্রীমকোর্টের সাবেক বিচারপতি গোপাল গোদা। এই কমিটি ফারাক্কা বাঁধের প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। প্রতিবেদনটি বিহার রাজ্য সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করা হবে। কমিটির প্রধান গোপাল গোদা বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণেই বন্যা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই বাঁধের জন্য পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্যই গঠিত কমিটি কাজ করছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন সমস্যার জন্য ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করে আসছেন। তিনি ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবিও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, আগে যেসব পলি নদীর প্রবাহে ভেসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ত, এখন ফারাক্কার কারণে সেটাই নদীর বুকে জমা হয়ে বন্যা ডেকে আনছে। তাই আমি ১০ বছর ধরে বলে আসছি, এই পলি ব্যবস্থাপনা না করলে বিহার কিছুতেই বন্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে না। বিহারে প্রতিবছরের বন্যার জন্য তার সরকার প্রধানত ফারাক্কা ব্যারাজকেই দায়ী করেছে। বিহারের পঞ্চমবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলেছেন, আমরা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোন পয়সা চাই না, কিন্তু চাই কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের সংস্থাগুলো এসে দেখুক কীভাবে এই পলি সরানো যায়। এর একটা রাস্তা হতে পারে ফারাক্কা বাঁধটাই হটিয়ে দেয়া। আর আপনাদের কাছে বিকল্প কোন প্রস্তাব থাকলে সেটাও অনুসরণ করে দেখা যেতে পারে। উল্লেখ্য, চলমান বন্যার কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার ফলে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন ১৪০ জন নাগরিক। নেপালেও প্রায় শতাধিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ভারতের বিহার, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের একাংশে বন্যা চলছে। এছাড়াও দেশটির আরও বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
×