ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিমান অবশেষে সব হজযাত্রীকেই পাঠাতে পারল

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৮ আগস্ট ২০১৭

বিমান অবশেষে সব হজযাত্রীকেই পাঠাতে পারল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই শেষ পর্যন্ত সব হজযাত্রীকে জেদ্দা পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমান মোট ৬৪ হাজার ৪৪৮ জন হজযাত্রী বহন করেছে। এতে বিমান নিজ কোটার ৬৩ হাজার ৫শ’ হজযাত্রীর বাইরেও সৌদিয়ার অতিরিক্ত যাত্রী জেদ্দায় পাঠিয়েছে। বিমানের সর্বশেষ ফ্লাইট রবিবার দিবাগত রাত তিনটায় ছাড়ার সব প্রস্তুতি শেষ করা হয় এ রিপোর্ট লেখার সময়। অন্যদিকে আজ সোমবার রাত সাড়ে দশটায় সৌদিয়ার সর্বশেষ হজফ্লাইট অপারেটের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে এবারের প্রথম পর্বের হজফ্লাইট। গতরাত তিনটা পর্যন্ত ঢাকা থেকে বিমান ও সৌদিয়ার মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৪৯৮ হজযাত্রী পাঠানো হয় জেদ্দায়। এদিকে হজ এজেন্সির সংগঠন হাব জানিয়েছে-ভিসা হওয়া একজন যাত্রীও বাদ যাবে না। সবাইকেই পাঠানো হবে হজে। কাজেই প্রতারিত হজযাত্রীর থাকারও আশঙ্কা নেই। যদিও ইকো নামের একটি এজেন্সির মাত্র ২১ জনের টিকেট নিয়ে ঝামেলা গতরাত পর্যন্ত মিটেনি। তবে এবার যারাই হজ নিয়ে নয়ছয় করেছে তাদের সবাইকে কঠোর শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করে আগামীতে এজেন্সির সংখ্যা কমিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ধর্মবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি বিএইচ হারুণ। শনিবার সন্ধ্যায় সৌদি আরব থেকে অতিরিক্ত ৮টি শ্লট পাওয়ার পর মাত্র ৪টি ফ্লাইট অপারেট করেই বিমানের নিজ কোটার সব যাত্রী বহন করে ফেলে বিমান। রবিবারও বিমান ৫টি ফ্লাইট অপারেট করা হয়। একই সঙ্গে সৌদিয়ারও ছিল ৯টি ফ্লাইট। এটাই ছিল একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক হজযাত্রী পাঠানোর রেকর্ড। বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর বিপুলসংখ্যক হজযাত্রী পাঠানো ছিল আসলেই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এজেন্সিগুলোর গড়িমসির কারণে একের পর এক ২৫ শ্লট বাতিল হওয়ায় বিমানকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু বিমান অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শেষ মুহূর্তে শনিবার অতিরিক্ত শ্লট আরও দুদিন সময়ের জন্য অনুমোদন পেলেও রবিবারই সব যাত্রী পাঠাতে সক্ষম হয় বিমান। এতে বিমান নিজস্ব কোটার বাইরে সৌদিয়ার কোটা থেকে অতিরিক্ত ১১ শত যাত্রী বহন করার সক্ষমতা দেখিয়েছে। এখানেই বিমানের সফলতা। এ দিকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন রবিবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের ফ্লাইটে হজযাত্রীদের বিদায়ী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিমানের শেষ ফ্লাইটটি রাত তিনটায় সিডিউলভুক্ত থাকলেও তিনি সন্ধ্যার ফ্লাইটের যাত্রীদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান। এ সময় তাদের তিনি সব যাত্রী পাঠাতে সক্ষম হওয়ায় হজযাত্রীদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দোয়া প্রার্থনা করেন। আল্লাহর মেহমানদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিমান সচেষ্ট থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী মেনন। আজ চলতি হজফ্লাইটের প্রথম পর্ব শেষ হলেও ঠিক কত হজযাত্রী প্রতারণার শিকার হয়েছেন তার কোন পরিসংখ্যান জানাতে পারেনি হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম। বলেছেন, শেষ ফ্লাইটের যাত্রী সংখ্যা না দেখে এটা বলা যাবে না। কারণ হজ ফ্লাইট শুরু থেকে আপনারা মিডিয়ায় লিখেছেন, ৭০ হাজার ভিসা অনিশ্চিত, পরে সেটা নেমে এলো ৪০ হাজারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাদের কাগজপত্র বৈধ তাদের সবারই ভিসা হয়েছে। এরপর অভিযোগ উঠতে থাকে ভিসা থাকা সত্ত্বেও কয়েক হাজার হজে যেতে পারবে না টিকেটের অভাবে। আজ সকালে দেখা গেছে সবারই টিকেট সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। হয়ত বাকি থাকতে পারে ২০/২৩ জন। তাদেরও শেষ ফ্লাইটে পাঠানোর ব্যবস্থা চলছে। এদিকে হজ নীতিমালায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন। তিনি বলেন, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সব হাজীকেই সৌদি আরবে পাঠানো। ইতোমধ্যে হজযাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। কোন যাত্রী যদি প্রতারিত হন, তবে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। হজ কার্যক্রম শেষে অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রবিবার বিকেলে রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে সাংবাদিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। বজলুল হক হারুন বলেন, দেশে এত হজ এজেন্সির প্রয়োজন আছে কিনা, সেটি মূল্যায়নের সময় এখন এসেছে। আমি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করব। এছাড়া, হজ কার্যক্রমে মধ্যস্বত্বভোগী কারা আছেন, কাদের মাধ্যমে হাজীরা টাকা দিচ্ছেন-তাদের তালিকা মন্ত্রণালয় ও হাবের কাছে থাকতে হবে। এসব বিষয় নজরদারিতে রাখলে আর ঝামেলায় পড়তে হবে না। হজ কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রসঙ্গে বজলুল হক হারুন বলেন, আগের বছরগুলোর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নিয়ম করেছিলাম, উড়োজাহাজ ভাড়ার টাকা এজেন্সির কাছে থাকবে না, ব্যাংকে জমা হবে। কিছু ব্যাংকের এ বিষয়ে গাফিলতি ছিল, আমরা সমাধান করেছি। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই দিন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে হজ এজেন্সিস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম অভিযোগ করেন-ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রী প্রতি ৩০০ টাকা প্রশিক্ষণের জন্য নেয়। এ বছর এই খাতে ৩ কোটি ৮০ লাখ নিয়েছে। বিনিময়ে কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।এভাবে তাদের অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকারী ব্যবস্থাপনায় যারা হজে যান, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যে ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে, তা ফান্ডেই আছে অপচয় হয়নি। আর যারা বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজে যাচ্ছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া কথা। আগামীতে এ বিষয়ে আমরা আরও বেশি সতর্ক থাকব। এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের করা উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তসলিম বলেন, ভিসা থাকা সব হজযাত্রীকে হজে পাঠানো হবে। ভিসা সংগ্রহের পরও হজযাত্রীদের ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে না যেসব এজেন্সি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের কপাল পুড়বে। জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এবারও বিভিন্ন হজ এজেন্সির বিরদ্ধে নানা অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তাদের গাফিলতির কারণে অনেকের হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই হজ অব্যবস্থাপনার জন্য সরকারকে দোষারোপ করা হয় সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সৌদি আরব, হজ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে। হাব মহাসচিব হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য ৬টি কারণ উল্লেখ করেন শাহাদাত হোসাইন তসলিম। তিনি বলেন, ‘হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার জন্য অনেকেই হাবকে দায়ী করেছিলেন। হজ ফ্লাইট বাতিলের কারণগুলো হলো, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মোয়াল্লেম ফি প্রদান করা, সৌদি সরকার কর্তৃক আকস্মিকভাবে ২ হাজার সৌদি রিয়াল চার্জ ধার্য করা, শুরু থেকে ই-ভিসা প্রিন্টিংয়ের জটিলতা, ৯১ হজ এজেন্সির সময় মতো মোয়াল্লেম না পাওয়া, মদিনায় ৮ দিনের থাকার বিধান মানার কারণে ফ্লাইটের তারিখ পছন্দের বাধ্যবাধকতা এবং শুরুর দিকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধি। এসব বিষয় এবারে হজযাত্রায় প্রভাব ফেলে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ এজেন্সির দায়িত্ব হজযাত্রীদের সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া। ৪২-৪৫ দিনের আগের প্যাকেজে আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থাসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করা। হজ নীতমালার কোথাও এজেন্সিদের বলা হয়নি যে এজেন্সিগুলো তাদের হজযাত্রীদের প্রথম দিকে, মাঝের দিকে বা শেষের দিকে নিয়ে যেতে হবে। হজ যাত্রীদের আসা যাওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সৌদি আরবের আইন অনুসারে। তাই হজ ফ্লাইটের সিডিউল নির্ধারণ উচিত এই সৌদি আরবের বাধ্যবাধকতা আমলে নিয়ে। ফ্লাইট সিডিউল নির্ধারণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে চাইলেও তথ্য গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহ দেখা যায়নি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হজ প্যাকেজ নির্ধারিত বিমান ভাড়ার থেকে হজ ফ্লাইটের সন্ধিক্ষণে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। এটও হজযাত্রী সঙ্কটের একটি কারণ। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে এ সমস্যা নিরসন করা হয়।’
×