ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

ধর্মের ব্যবহারমুক্ত হোক নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৮ আগস্ট ২০১৭

ধর্মের ব্যবহারমুক্ত হোক নির্বাচন

নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রস্তাব রেখেছেন, নির্বাচনে যাতে ধর্মকে ব্যবহার না করা হয়। নির্বাচন কমিশন ধর্মের নামে ভোট চাওয়ার বিষয়ে কোন মতামত তুলে ধরেনি। অথচ বিষয়টি নিয়ে ইসির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ থাকা বাঞ্ছনীয়। নির্বাচন একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রক্রিয়া। এখানে ধর্মের কোন স্থান নেই। তাই ধর্ম-বর্ণ এমনকি জাতের বা সম্প্রদায়ের নামে ভোট চাওয়া যায় না। সংবিধান দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে ঘোষণা দিয়েছে। ব্যক্তির মৌলিক অধিকার থেকে শুরু করে নাগরিক সুরক্ষার যাবতীয় রক্ষাকবচ সংবিধানের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে। ভোট নিয়ে মানুষের মত ও সমর্থনের অধিকারের ক্ষেত্রও স্পষ্ট বলা আছে। কিন্তু এ দেশে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যতগুলো সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিতে কোন না কোন ইস্যু প্রভাব ফেলেছে। কাজকর্ম ধর্মনিরপেক্ষভাবে করা উচিত। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া মূলত অধর্মেরই কাজ। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার পরও ভোটে তার ব্যবহার ন্যায়ানুগ নয়। ধর্ম প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত আচরণের বিষয়। ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে নাÑএমনটাই প্রচলিত। তেমনি নির্বাচনেও ধর্মকে কোন অবস্থাতেই ব্যবহার করা যায় না। রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম অঙ্গ যেহেতু নির্বাচন এবং নির্বাচনের মাধ্যমেই যেহেতু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় নির্বাচিত সরকারের ওপর, তাই রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতাকে সুরক্ষিত করতে হলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আগে ধর্মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা জরুরী। বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক হলেও সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্বাচনে ধর্মকে ব্যবহার করে অশুভ পরিস্থিতির সৃষ্টি এবং বিষবাষ্পের বিস্তার ঘটায়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ডাক্তার বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার পুত্র টেলিভিশনের ‘সøট’ এর মধ্যে প্রতিটি ভোটেই সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ধর্মের ইস্যু। ধর্ম বিষয়টি নিয়ে যত উদাহরণ এবং আবেগের তুফান তোলা যায়, তা বুঝি অন্য কোন ইস্যুতেও হয় না। ইতিহাস ও ঘটনা পরম্পরা বলছে, ধর্মীয় সুড়সুড়ি অনেক বেশি কাজে লাগান রাজনৈতিক ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রার্থীরা। এমনকি দলের নির্বাচনী প্রচার সভায় মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য মঞ্চে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা বা পীর হিসেবে পরিচিতদের হাজির করান প্রার্থীরা। আবার প্রার্থী হয়েও প্রথমেই ছুটে যান ধর্মীয় মাজারে বা পীরের কাছে। উন্নয়নের ইস্যুকে ছেড়ে ভোটারদের কাছে ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা হয়। যে কারণে দেখা যায়, নির্বাচনী প্রচার শুরু হয় সিলেটের হযরত শাহজালালের (রঃ) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে। অথচ সংবিধানের অন্যতম মূলমন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ অক্ষুণœ রেখেই ভোট চাওয়া সঙ্গত। প্রার্থীদেরও নিজেদের ভেড়া নিয়ে ধর্মকে বর্ম করে যে বিষোদগার প্রচার করেছেন তা ছিল সম্প্রদায়িকতার নিকৃষ্ট নমুনা। ধর্মগ্রন্থ হাতে নিয়ে মিথ্যাচারের যে কসুর ‘বাপ-বেটা’ মিলে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন, তা সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক ছিল না। আর সামরিক জান্তা এরশাদ আরেক কাঠি সরস। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিতে সুড়সুড়ি দিয়ে তাকে ভোট না দিলে ‘ইসলাম শেষ হয়ে যাবে’ বলে মিথ্যাচারকে প্রশ্রয় দিয়েছেন শুধু নয়, ক্ষমতা পাকাপোক্ত রাখার জন্য রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তিত করে। তারও আগে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা জিয়া সংবিধান থেকে অন্যতম মূলমন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত চার মূলনীতিকে সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছিলেন, তাতে ধর্মনিরপেক্ষতা বিদ্যমান ছিল। তিনি ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ শুধু নয় তার চর্চাও বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা দখলকারীরা রাজদ- হাতে নিয়ে গলা হাঁকিয়ে চিৎকার করতে থাকে, দেশে ধর্মনাশ হচ্ছে। নিজেরা ধর্মকর্মের ধারে কাছে না গেলেও ধর্মীয় লেবাসকে সামনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পিছপা হননি। আর বিএনপি নেত্রী তো যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক দল জামায়াতকে বক্ষপুটে ধরে রেখে ধর্মের জিগির তুলে আসছেন সব সময়ই। মিথ্যায় আকীর্ণ তার বক্তব্যগুলো এখনও মানুষের কানে বাজে। ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে।’ মার্কা নিম্ন রুচির ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলতে সিদ্ধহস্ত বেগম জিয়া এখনও ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করছেন। একাত্তর সালের ভয়াবহ ধর্মীয় অপব্যবহারের অভিজ্ঞতার পরেও যে জাতি হাজার হাজার ধর্ম ব্যবসায়ী, ভ-, মোনাফেক এবং মূর্খ বিদ্বানদের দুধ কলা খাইয়ে প্রতিপালন করে, সে জাতির চেতন সহজে ফিরে আসার নয়। তাই জাতিকে অনেক দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতার পথ বেয়ে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু ভ- মোনাফেকদের ভাবশিষ্যরা ধর্মকে তাদের ব্যবসার পুঁজিরূপে ব্যবহার করছে এখনও। তারা পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নিষেধ অমান্য করে ধর্মীয় বাণীকে তাদের হীন চক্রান্ত সিদ্ধির প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি জোড়াজুড়ি ধর্মগ্রন্থে নিষিদ্ধ থাকলেও তারা তা অনুসরণ করে না। মাঝে মাঝে দেশহিতৈষীরা ধর্মরক্ষার জন্য হৈ চৈ করে দাঙ্গা বাধাতে কসুর করেনি। ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থকে বিকৃত করে সঙ্কীর্ণ ক্ষেত্রে বেঁধে দিতে সব সময় সচেষ্ট। তারা ধর্ম থেকে রাজনীতির পূর্ণাঙ্গ পৃথকীকরণের বদলে রাষ্ট্রের কার্যকলাপে সব ধর্মের ধর্মবিশ্বাসের ওপর সমানভাবে হস্তক্ষেপের সুযোগ চালু করতে চায়। কিন্তু সেক্যুলারিজমের অর্থ তা নয়। ব্যক্তির ধর্মাচরণ করা বা না করার অধিকার রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যকলাপে ধর্মের অনুপ্রবেশ বন্ধ করাও কর্তব্য। কিন্তু বাংলাদেশ এই অবস্থা থেকে যোজন যোজন দূরত্বে আজ। বরং ধর্মরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ত্রাসে পরিণত হয়েছে এ দেশে। যে কারণে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ধর্মকে সামনে রেখে প্রার্থীরা অনেক অপকর্মকে চাপা দিতে চায়। তারা অবশ্যই জানে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশালে তা বিপজ্জনক হয় বৈকি। কিন্তু জেনেশুনেও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে অনায়াসে। রাষ্ট্র যদি নিজের চৌহদ্দীর মধ্যে ধর্মকে ঢোকার সুযোগ করে দেয়, তার কী পরিণতির হতে পারে, তার উদাহরণ প্রতিবেশী ভারতে অহরহ দেখা যায়। শাহাবানু মামলায় সুপ্রীমকোর্টের রায় খারিজ করা আর রাম মন্দিরের তালা খুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে রাজীব গান্ধীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কতটা পূরণ হয়েছিল, তা কেউ মনে রাখেনি। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ও দেশজুড়ে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক হিংসার পটভূমি তৈরি করেছিল, তা কেউ ভুলতে পারেনি। এখনকার ভারত পরিস্থিতি তো সর্বজনবিদিত। ধর্মের নামে ভোট চাওয়া আত্মঘাতী প্রথা হলেও তা থেকে সরে আসার লক্ষণ দেখা যায় না এই উপমহাদেশে। রাজনীতিকদের পক্ষে বা দায়িত্বশীল সরকারপ্রধানের পক্ষে ধর্মব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবত করা সম্ভব হলেও তা হয়নি বাংলাদেশে। বরং ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতার মসনদে আসীন হতে দেখা গেছে এ দেশে। উপমহাদেশে রাজনীতি জাতপাত সম্প্রদায় ও ধর্মকে ব্যবহার করে আবর্তিত হয়ে আসছে। দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের কথা বলা হলেও অনেক রাজনৈতিক দল ভোটের সময় প্রচারে সচেতনভাবে ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নিয়ে খেলে থাকে। ভাষণে ও বক্তৃতায় সরাসরি মন্তব্যও করে। বিষয়টিতে নির্বাচন কমিশন নজর রাখে না। কোন অভিযোগ আসুক বা না আসুক ইসি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। অবশ্য বক্তাকে সতর্ক করা বা ভর্ৎসনা করা ছাড়া ইসির এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের খুব বেশি ক্ষমতা থাকার কথা নয়। অথচ বিধান হওয়া উচিত এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর পদ বাতিল। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাইলে প্রার্থী পদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ইসিকে প্রদান করা সঙ্গত। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। দলগুলোর ধর্ম ও সম্প্রদায়ের অঙ্ককে অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই বলা যায়। যুগান্তকারী রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রীমকোর্ট গত ১ জানুয়ারি- ধর্ম, জাতপাত বা ভাষার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া যাবে না। যদি তা করা হয় তবে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। আদালত বলেছে, ধর্মীয় বিষয়ের মতো ব্যক্তিগত বিষয় প্রতিটি মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। সেখানে হস্তক্ষেপ হতে পারে না। ধর্মবাদী বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলতেই পারেন ধর্ম সমাজেরই অঙ্গ। ধর্ম সংবিধানের বিরোধী কিছু নয়। অতএব রাজনীতি ও নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ধর্মকে ব্যবহার নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত নয়। এটা গান্ধীর ভারতের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, স্বাধীনতার সত্তর বছর পর এসে ধর্ম ও জাতের নামে ভোট চাওয়ার প্রবণতা রুখতে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। রাজনীতির নীতিগত আদর্শ হলো, মানুষ যেখানে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, সেখানে তাকে আপন অধিকারে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। মানুষের পরিচয় একমাত্র মানুষ হিসেবেই। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হিসেবে নয়। বিশেষ কোন ধর্মাবলম্বী হওয়া অতি সহজ। কিন্তু মানুষ হওয়া বড় কঠিন। ধর্ম আচার-প্রচারের জিনিস নয়, আচরণের জিনিস। ধর্মের নামে মুখোশ পরা মানুষগুলো যথার্থ ধর্মবোধের অভাবে বিশ্বময় নিত্যদিন অসৎ কর্ম করে বেড়াচ্ছে, খুনখারাবি পর্যন্ত করছে। একাত্তরের বাংলাদেশ শুধু নয়। এখনকার জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদীরাও একই কাজ করছে। ধর্মীয় মৌলবাদ প্রশ্রয় পেলে মানুষের ইতিহাস বর্বরতার দিকেই মোড় নেয়। ধর্মীয় মৌলবাদ অতি দুর্লক্ষণ। রাজনীতিকরা যখন কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দিতে থাকে, তখন বুঝতে হয়, অধর্মের যুগ এসেছে। বাক্যে চিন্তায় কর্মে এরা যুক্তির অনুশাসন মেনে চলে না। ভোটের বাজারে সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য ধর্মকে পুঁজি করে মাঠে নামার ঘটনা এ উপমহাদেশে পুরনো। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের পরিণতি এমনটাই হয়। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ধর্মীয় আতিশয্যকে রাজনীতিতে প্রশ্রয়দান কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। রাজনীতিতে স্থূল বিষয় থাকতে পারে, কিন্তু ধর্মে নয়। তাই ভোটের রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে আনা ধর্মের অবমাননার মধ্যেই পড়ে। অযাচিতভাবে ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করা হয়। এক ধর্মের লোকদের গালি দিয়ে আরেক ধর্মের লোকদের উস্কে দেয়া বিপজ্জনক। এই রূপ ভুরি ভুরি ঘটনা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ধর্মে ধর্মে বিরোধ এবং যুদ্ধবিগ্রহ আগেও অনেক ঘটেছে। আর সেসব ঘটেছে ধর্মান্ধতার ফলে। এ যুগের ধর্মীয় রাজনীতি অন্ধতাজাত নয়, মতলবীদের কুমতলবের সৃষ্টি। সব দেখেশুনে ভেবেচিন্তেই করা হয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলে কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটতে পারে বাংলাদেশবাসীসহ উপমহাদেশবাসী তার ভুক্তভোগী। ধর্ম এবং রাজনীতিতে জট পাকিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতিকরা বুঝে নিয়েছে যে, সমাজদেহের সব চাইতে স্পর্শকাতর অর্থাৎ দুর্বলতম দিকটি হলো ধর্ম। কোন বিষয়ের প্রতি সমাজকে উন্মুখ বা বিমুখ করে তুলতে হলে আবেদন জানাতে হবে ওই দুর্বল স্থানটিতে অর্থাৎ মানুষের ধর্মবিশ্বাসের কাছে। এককালে অশিক্ষিত জনগণের ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে দুর্বল ও অসহায়কে শোষণ করেছে সমাজের উচ্চশ্রেণীভুক্ত এবং বিত্তশালী ব্যক্তিরা। এ যুগে সেই সুযোগটি পুরো মাত্রায় নেয় ধর্মকে পুঁজি করা রাজনীতিকরা। ধর্মের নামে গোড়াতেই উপমহাদেশটি ভেঙ্গে প্রথমে দুই ভাগ হয়েছে। পরে ধর্মের নামে গণহত্যা চালানো হয় এই বাংলাদেশে। ধর্মের অপব্যবহার হলেই সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিম-লে সঙ্কট তৈরি হয়। ধর্মের নামে অধর্ম, রাজনীতির নামে দুর্নীতি, শিক্ষার নামে অশিক্ষা-কুশিক্ষা দুনিয়ার আবহাওয়াকে বিষাক্ত করে তোলে। সাম্প্রদায়িকতাসহ অন্যান্য অশুভকে তাড়িয়ে দেশে পরিবর্তন আনতে হলে, ধর্মের নামে যারা বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে দ্বিধাহীনভাবে। গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের প্রস্তাবটিকে ইসি বিবেচনা করবে দেশ ও জাতির স্বার্থেই শুধু নয়, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রয়োজনেও। এক বছর পর সংসদ নির্বাচন, সেই নির্বাচনে কোনভাবেই ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না-এমন পদক্ষেপ দেশের জন্য মঙ্গল।
×