ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিতে বিটি প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৮ আগস্ট ২০১৭

কৃষিতে বিটি প্রযুক্তি

বর্তমান সরকারের উদার কৃষিনীতি ও বীজনীতির কারণে গত কয়েক বছরে দেশে এক ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে কৃষিখাতে। বুধবার ‘ডেভেলপিং দ্য সিড সেক্টর ইন বাংলাদেশ : হোয়াট রোলস ফর পলিসি’ শীর্ষক কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের আনুকূল্য ও উদারনীতির কারণেই কৃষকরা চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি, উচ্চ ফলনশীল তথা জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) বীজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়েছে। এর ফলে কৃষিখাতে ব্যাপক রূপান্তরসহ সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। দেশ এখন খাদ্যশস্য তথা ধান-চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাশাপাশি বিটি বেগুন ও অন্যবিধ শাকসবজিও উৎপন্ন হচ্ছে ব্যাপকভাবে। ডিজিটাল কৃষির মাধ্যমে বর্তমানে একেবারে বীজতলা থেকে শুরু করে সার, সেচ, কীটনাশক, আবহাওয়া, জলবায়ু, ফসল উৎপাদন, বাজার পরিস্থিতিসহ অন্যবিধ সমস্যা নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময়, পরামর্শ ও প্রতিকারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে। এর অনিবার্য ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষি ব্যবস্থাপনায়, সুফল পাচ্ছে কৃষক, সর্বোপরি বাড়ছে ফসল উৎপাদন। তার মানে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থা দেশের কৃষিতে প্রায় বিপ্লব নিয়ে এসেছে। আবহমানকাল ধরে প্রচলিত গবাদি পশুচালিত লাঙল-জোয়ালের দিন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। হাইব্রিড বীজ, জিএম বীজসহ আধুনিক চাষবাস পদ্ধতি ফসল, শাকসবজি, মৎস্য, পোল্ট্রি, ফলফলাদির উৎপাদন বাড়িয়েছে বহুগুণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। বগুড়ার সান্তাহারে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম সৌরশক্তিচালিত অত্যাধুনিক বহুতলবিশিষ্ট খাদ্যগুদাম। ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার টন। সরকারের পাশাপাশি এতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জাইকা। অত্যাধুনিক সাইলোটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে শুধু খাদ্যশস্য নয়, বরং শাকসবজি, ফলমূলসহ অন্যান্য উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্যও সংরক্ষণ করা যায়। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়; বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। সাড়ে ১২ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে জনসাধারণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও। এসবই ডিজিটাল কৃষির অবদান। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। এখন নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। গমের ঘাটতি এখনও আছে। এর পাশাপাশি ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাংস, দুধ, মাছ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন বাড়লেও মাছ, দুধ-মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনে বিপুল ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পটি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গণমুখী। মূলত, এর মাধ্যমেই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও সুষম খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। এজন্য ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। বরং চাই সুষ্ঠু, সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আধুনিক সমবায় প্রথাও সংযুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাহিদা ও যোগাননির্ভর ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থাপনা, বিটি বীজ ও বাজার ব্যবস্থা অপরিহার্য। সরকার সম্প্রতি দেশের সব খাদ্যগুদামকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রশংসনীয়। এর পাশাপাশি অত্যাবশ্যক অত্যাধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণের পাশাপাশি মানসম্মত খাদ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা। তা হলেই বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা।
×