ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সালিশে অপমান সইতে না পেরে সাতক্ষীরায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৭ আগস্ট ২০১৭

সালিশে অপমান সইতে না পেরে সাতক্ষীরায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে প্রাইভেট শিক্ষকের সঙ্গে ঘরের মধ্যে আটক রেখে সালিশ বেঠকে জরিমানা করায় আত্মহত্যা করেছে এক স্কুলছাত্রী। সালিশে গালাগাল করে ওই শিক্ষকের কাছে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করায় নবম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গাছের ডালে ঝুলে আত্মহত্যা করে। শনিবার ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত স্কুলছাত্রীর নাম রিমা খাতুন (১৫)। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রি জাকির আলী খাঁর মেয়ে ও বল্লী বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সাইকেল মিস্ত্রি জাকির আলী খাঁর স্ত্রী ফজিলা খাতুন জানান, তার মেয়ে রিমা ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে রেজাউল ইসলামের কাছে প্রাইভেট পড়তো। নাতনির আর্শিবাদ উপলক্ষে একমাস আগে রিমাকে নিয়ে স্বামীসহ তিনি তালা উপজেলার বালিয়াদহ গ্রামে জামাতা মোঃ নাসিরউদ্দিনের বাড়িতে যান। সন্ধ্যার আগে রিমাকে বাড়িতে পাঠানো হয়। ঘরে রিমা একাই থাকতো। ওইদিন গভীর রাতে তার চাচা শ্বশুর আনছার আলী খাঁর ছেলে আমতলা খানজাহান আলী দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র মহব্বত আলী (১৭) কৌশলে ঘরে ঢুকে রিমাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে রিমার চিৎকারে মহব্বত পালিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি চাচা শ্বশুর ও চাচি শাশুড়িকে অবহিত করেন। এতে চাচা শ্বশুর ও মহব্বত ক্ষুব্ধ ছিল। ফজিলা খাতুন জানান, শুক্রবার সকালে তিনি স্বামীর সঙ্গে বড় জামাইয়ের বাড়িতে যান। সন্ধ্যার পর প্রাইভেট শিক্ষক রেজাউল ইসলাম পড়ানোর জন্য তাদের বাড়িতে আসেন। পড়ানোর একপর্যায়ে আনছার খাঁ ও তার ছেলে মহব্বত ওই ঘরের দরজায় শিকল তুলে দিয়ে মোবাইলে লোকজন জড়ো করে। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাদের খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে তারা রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফেরেন। রেজাউলের বাবা ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুল বারী, বড় ভাই হাফিজুল ইসলাম ও ঝাউডাঙা ইউপির সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন তাদের বাড়িতে আসে এরপর চাচা শ্বশুর হযরত আলীর বাড়ির উঠানে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। সালিশে রিমা ও রেজাউলকে গালাগাল করা হয়। সালিশে প্রাইভেট শিক্ষক বিবাহিত তাই বিয়ে দেয়ার বিষয়টি বাদ দিয়ে মেয়ের বিয়ের জন্য রেজাউলের বাবা আব্দুল বারীর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বেলাল হোসেন ও মিজানুর রহমান। একপর্যায়ে আগামী সোমবার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের কাছে ১৫ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে রেজাউলকে ছেড়ে দেয়া হয়। শনিবার বাড়ির উঠানের একটি আমগাছের ডালে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ডালের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রিমাকে দেখতে পাওয়া যায়। পুলিশ দুপুর ১২টার দিকে রিমার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ফজিলা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, প্রতিশোধ নিতে আনছার খাঁ ও তার ছেলে মহব্বত পরিকল্পিতভাবে রেজাউল রিমাকে পড়ানোর সময় বাইরে থেকে ঘরের শিকল তুলে দিয়ে লোকজন ডাকে। এরপর সালিশ বৈঠকে গালাগাল ও জরিমানার অপমান সহ্য করতে না পেরে রিমা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য আনছার খাঁ ও মহব্বতকে দায়ী করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
×