ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটের স্মরণে সাম্যের কবি নজরুল

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ আগস্ট ২০১৭

ছায়ানটের স্মরণে সাম্যের কবি নজরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ রবিবার সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন শনিবার দ্রোহ ও প্রেমের কবিকে স্মরণ করল ছায়ানট। গানের সুরে ও কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হল জাতীয় কবিকে। সে আয়োজনে প্রকাশিত হল বৈচিত্র্যময় সুর-ঐশ^র্যের সম্মোহন আর অসাম্প্রদায়িক মানবতার বাণী উচ্চারণ। শরত সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে ব্যক্ত হয়েছে অশুভ হটিয়ে কল্যাণ কামনার বাণী। একক ও সম্মেলক সঙ্গীতের সঙ্গে আবৃত্তি ও পাঠের সমন্বয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠান। শব্দ-সুরের সুধা ছড়ানো মোহময় পরিবেশনা উপভোগে শ্রোতার আগমনে মিলনায়তন ছিল পরিপূর্ণ। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ছায়ানট শিল্পীদের মিলিত সুরে। সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির নির্মল শান্ত অচঞ্চল ধ্রুবজ্যোতি/ অশান্ত এ চিত কর রহ সমাহিত সদা আনন্দিত রাখো মতি’। তানভীর আহমেদের গানের সুরে ভেসে আসে পৃথিবী ছেড়ে কবির চলে যাওয়ার বেদনা। দরদমাখা কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘আমি যেদিন রইব না গো লইব চির বিদায়’। একক কণ্ঠে নবনীতা চক্রবর্তী গেয়ে শোনান ‘মহাকালের কোলে এসে’। মোহিত খান পরিবেশন করেন ‘মোর না মিটিতে আশা’, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি ‘ঘুমায়েছ ফুল পথের ধূলায়’, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ‘আমার বিফল পূজাঞ্জলি’, প্রমিতা দে ‘সাঁঝের পাখিরা ফিরিল কুলায়’, লতিফুন জুলিও ‘গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে’, রেজাউল করিম ‘সকরুণ নয়নে চাহ’, জান্নাত-ই-ফেরদৌসী লাকী ‘এ আঁখি জলে মোছা প্রিয়া’, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর’, সুমন মজুমদার ‘মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়’। আবৃত্তি করেন জারিফ ইকরাম। তিনি আবৃত্তি করেন ‘মনে রাখার দিন গিয়েছে’, মাহমুদা আখতার শোনান ‘নিত্য প্রবল হও’ ও রফিকুল ইসলাম। এছাড়া সম্মেলক কণ্ঠে শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘জয় আনন্দ ভৈরব ডমরু পিনাক-পাণি’, ‘ভুবনে আসিল অতিথি সুদূর’ ও ‘নীরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন। সব শেষে সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা’। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। আব্দুল মোমেনের ‘বাংলাদেশ ফরোয়ার্ড মার্চিং’ গ্রন্থের প্রকাশনা মাস ছয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রবন্ধ ও বক্তৃতা সংকলন ‘বাংলাদেশ মার্চিং ফরোয়ার্ড’ গ্রন্থটি। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বইটির প্রতিটি পাতায়। ২৪টি প্রবন্ধ, ১৭টি বক্তব্য এবং দুর্লভ ছবির সমাহার ঘটেছে গ্রন্থটিতে। বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হল শনিবার। বইটি প্রকাশ করেছে এনআরবি স্কলার্স পাবলিশার্স। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বইটি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আব্দুল মোমেনের কর্মময় জীবন সম্পর্কে আলোচনা করেন বিশিষ্টজনরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, এশিয়ান এইজ সম্পাদক সেলিম সামাদ ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত। এছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বড় ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ড. আব্দুল মোমেন ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে লেখা প্রবন্ধ, বিভিন্ন সময়ে দেয়া ভাষণের এ সঙ্কলনটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ লেখাগুলো সময়ের কথা বলে। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে যদি তার মতো করে লিখে প্রকাশ করতে পারে, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম এসব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারবে। বইটিতে দেশের উন্নয়নের নানা দিক সন্নিবেশিত হয়েছে। ড. মোমেন সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতিসংঘের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব পরিম-লে বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য কাজ করেছেন। আনিসুজ্জামান বলেন, এই বইটির পরিসর ছোট হলেও, ঐতিহাসিক পরিসর অনেক বড়। মুক্তিযুদ্ধ সময়কাল থেকে প্রায় বর্তমানকাল পর্যন্ত সময়কালের বর্ণনা এতে রয়েছে। সে সঙ্গে তার ব্যক্তিগত চেতনা সম্পর্কেও জানা যায়। সে সঙ্গে প্রতিটি পাতায় দেশের প্রতি তার ভালবাসা, দেশের মানুষের প্রতি তার কর্তব্য বোঝা যায়। এইচ টি ইমাম বলেন, ড. আব্দুল মোমেনের সময়কালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ ছিল। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অর্ধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরতে কাজ করেছেন। এ বইয়ে তার লেখা প্রবন্ধ ও বক্তৃতার পাশাপাশি অনেকগুলো সুন্দর ছবি রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। যারা জ্ঞানচর্চা করতে চায় তাদের জন্য বইটি চিন্তার নতুন খোরাক যোগাবে। অনুভূতি প্রকাশ করে আব্দুল মোমেন বলেন, এ বইয়ের অনেকগুলো প্রবন্ধ ২০০১ থেকে ২০০৮ সালের অরাজকতার মাঝে লেখা। সেগুলো বাংলাদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি, তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। এ বইয়ের পেছনে আমার অবদান কম। আমার এক অনুজপ্রতিম বন্ধু নিজে সংগ্রহ করে এ বইটি প্রকাশে সাহায্য করেছে।
×