ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লবণের দাম বাড়তি, কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ আগস্ট ২০১৭

লবণের দাম বাড়তি, কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানি সামনে রেখে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ট্যানারি মালিকরা। তারা বলছেন, এবার হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। ভাঙ্গা রাস্তাঘাটের জন্য হেমায়েতপুরে চামড়া নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় এবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রচ- অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আর এক্ষেত্রে চামড়া নষ্ট হওয়ার দায়দায়িত্ব ট্যানারি মালিকরা নেবে না। শনিবার কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) নেতারা তাদের এই আশঙ্কার কথা জানান। রাজধানীর ধানম-িতে সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএফএলএলএফইএর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দিলজান ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল প্রমুখ। মাহিন বলেন, চামড়া ছাড়ানোর ছয় ঘণ্টার মধ্যে পরিমাণমতো লবণ না দিলে চামড়ার পচন রোধ করা যাবে না। মাঝারি চামড়ার জন্য ৬ থেকে ৮ কেজি ও বড় চামড়ার জন্য ১০ থেকে ১২ কেজি লবণ দিতে হবে। চামড়ার গুণমান ভাল থাকলেই দাম ভাল পাওয়া যাবে। মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছর লবণের অভাবে প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়ার গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবারও লবণের দাম ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। তাই চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, সারা বছর এক বস্তা (৭৫ কেজি) লবণের দাম থাকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কোরবানি ঈদের আগে সেটি বেড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা হয়ে যায়। এবারও লবণের বস্তা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা হয়ে গেছে। সরকার ৫ লাখ টন লবণ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। সেটি যাতে সময়মতো আসে, সে বিষয়ে সরকারের তদারকি বাড়ানো উচিত। প্রসঙ্গত, লবণের সঙ্কট মেটাতে এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগে-ভাগেই ৫ লাখ টন লবণ আমদানির অনমুতি দিয়েছে। ঋণপত্র খোলার চল্লিশ দিনের মধ্যে সেই লবণ দেশে আনার নির্দেশ রয়েছে আমদানি-রফতানিকারক অধিদফতর। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে লবণ আনার জন্য মাদারভেসেল পাওয়া গেলেও দেশে লবণ খালাসে লাইটার জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে লাইটার জাহাজের জন্য সরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা বলছেন, জাহাজ পাওয়া না গেলে কোরবানি ঈদের আগে লবণ আনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে কোরবানির বাকি রয়েছে আর ছয়দিন। ছয়দিন পরেই বাড়তি অতিরিক্ত ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন হবে। এই বাস্তবতায় লবণের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সাভারের হেমায়েতপুর বাজার থেকে চামড়া শিল্পনগরী পর্যন্ত রাস্তাঘাট ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। শিল্পনগরীর ভেতরের সড়কের অবস্থাও শোচনীয়। ফলে কোরবানি ঈদের সময় কাঁচা চামড়াবাহী ট্রাক পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভাঙ্গা সড়কে একটি ট্রাক আটকে গেলে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হবে। এতে ট্রাকভর্তি চামড়া পচন ধরতে পারে, যা জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ঢাকা ও পাশ্বর্বর্তী এলাকার কাঁচা চামড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর হাজারীবাগে নিয়ে আসেন। তবে এবার হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকেরা চামড়া সংরক্ষণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তারপরও সমস্যা সমাধানে সরকার উদ্যোগ না নিলে ট্যানারি মালিকদের চেষ্টা সফল হবে না। সেক্ষেত্রে চামড়া নষ্ট হওয়ার দায়দায়িত্ব ট্যানারি মালিকরা নেবে না। শাহজালাল ট্যানারির স্বত্বাধিকারী শাহজালাল মজুমদার বলেন, হেমায়েতপুরে ইতোমধ্যে প্রায় ৭০টি ট্যানারি উৎপাদন শুরু করেছে। হাজারীবাগের চেয়ে হেমায়েতপুরে তাদের সক্ষমতা দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। তাই রাস্তাঘাট ঠিক থাকলে এবং পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস নিরবচ্ছিন্ন পাওয়া গেলে কোরবানির বিপুল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াকরণে কোন সমস্যা হবে না।
×