ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরবানির ঈদ এলেও মার্কেট শপিংমল ফাঁকা, বিক্রি নেই

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ আগস্ট ২০১৭

কোরবানির ঈদ এলেও মার্কেট শপিংমল ফাঁকা, বিক্রি নেই

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ঈদ-উল-আযহার মাত্র ছয় দিন বাকি। ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলো বাহারি সাজে সাজলেও ক্রেতা তেমন নেই। এবার বিপণিবিতানগুলোর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। নেই কোন ভিড়-বাট্টা। নেই বেচাকেনার হাঁকডাক। দফায় দফায় বন্যা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে ঈদের বাজারে নেই আনন্দের হাওয়া। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়েও এবারের ঈদে বিক্রি খারাপ বলে জানান দোকানিরা। ক্রেতারা বলছেন, কোরবানির ঈদে পশু কেনায় বাজেট বেশি থাকায় পোশাক-আশাকে বরাদ্দ কম। তবে ঈদের দু’-তিন দিন আগে থেকে ক্রেতা সমাগম বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। শনিবার বিকেল ৩টায় বসুন্ধরা সিটি শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পণ্যে পর্যাপ্ত ছাড় দেয়া হলেও কেনাকাটা জমে ওঠেনি। এনডি ফ্যাশন হাউস তখন পর্যন্ত একটি পাঞ্জাবি বউনি করতে পারেনি। অথচ সকাল ১০টা থেকে খুলে বসে আছে। এ অবস্থা শুধু একটি দোকানে নয়, বেশিরভাগ দোকানেরই একই অবস্থা। তবে শিশুদের পোশাক, জুতা ও প্রসাধনসামগ্রীর দোকানে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যদিও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দিয়ে পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। কিন্তু মার্কেটে ক্রেতার সমাগম তেমন নেই। বেশিরভাগ বিপণিবিতানে বিক্রেতাদের গল্প করেই সময় কাটাতে দেখা গেছে। বসুন্ধরা সিটিতে মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন মৌরী মরিয়ম। তিনি জানান, কোরবানির ঈদে নিজেদের জন্য পোশাক কেনেন না বললেই চলে। তবে বাচ্চারা বায়না ধরে তাই না কিনে উপায় নেই। পোশাক না কিনলেও নিজের জন্য কসমেটিকস, জুতাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনবেন তিনি। রাজধানীর আগারগাঁও থেকে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে এসেছিলেন আজাদ কবীর। ঈদের জন্য কী কেনাকাটা করলেন- জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, কেনাকাটার উদ্দেশ্যে না এলেও যদি কিছু পছন্দ হয় তবে কিনব। কোরবানির ঈদে তো গরু কেনাই আসল। এনডি ফ্যাশনের এক বিক্রেতা জনকণ্ঠকে জানান, রমজানের ঈদে যে বেচাবিক্রি হয় তার তিনভাগের একভাগও কোরবানির ঈদে হয় না। এবারে দফায় দফায় যে বৃষ্টি হচ্ছে, এতে অনেক ক্রেতা তাদের সময়মতো মার্কেটে আসতে পারছেন না। সঙ্গে মাসের শেষ সময়। তবে ঈদের তিন দিন আগে থেকে ভাল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন ওই বিক্রেতা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের সিলভার রেইন, মেনজ ক্লাব, ক্যাটস আই, ইসটেসি, ওয়েসটেকসসহ বেশ কয়েকটি ছেলেদের পোশাকের শোরুমে গিয়ে দেখা গেল ক্রেতাদের সংখ্যা হাতেগোনা। এসব দোকানের বিক্রয় কর্মকর্তারা জানালেন, অনেকেই আসছেন পাঞ্জাবি কিনতে। তবে রোজার ঈদের চেয়ে কম বেচাকেনা হচ্ছে। যদিও শার্ট, টিশার্ট ও পাঞ্জাবিতে মূল্য ছাড় দেয়া হচ্ছে। তবুও ক্রেতা সমাগম কম। সাধারণ সময়ে যে বেচাবিক্রি হয়, তেমনই হচ্ছে। অন্যদিকে তুলনামূলক কম দামের পোশাকের সমারোহের জন্য পরিচিত সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, চাঁদনি চক, ধানম-ি হকার্স, চন্দ্রিমা, গাউছিয়া মার্কেটে ক্রেতা সমাগম কিছুটা বেশি। ক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠেছে এসব মার্কেট। চাঁদনি চক মার্কেটে সপরিবারে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, মার্কেটে ভিড় তেমন একটা মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, চাঁদনি চকে একটু দামাদামি করে কম দরে পোশাক পাওয়া যায়। আর পছন্দমতো অনেক কিছু কেনা যায়। নিউমার্কেটের জুতা ও কসমেটিকস বিক্রেতা আরিফ জনকণ্ঠকে জানান, বৃষ্টির কারণে বেচাবিক্রিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ক্রেতা কম আসে। শুক্রবার ছুটির দিন সত্ত্বেও বৃষ্টির কারণে ক্রেতা কম ছিল। তবে এই ঈদে কসমেটিকস ও জুতা ভালই বিক্রি হচ্ছে। নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। মার্কেটে সব সময়ই পুলিশ থাকে। চাঁদনি চকে কসমেটিকসের দোকানে দাঁড়িয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসছে। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য আগেভাগেই ঈদের টুকটাক কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন তারা। রাজধানীর অন্যান্য মার্কেটের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও একই চিত্র জানা গেছে। মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটার ক্রেতা বেশি। এছাড়া জুতা, কসমেটিকস, শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদ আরও ঘনিয়ে এলে বিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা বিক্রেতাদের।
×