ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইজারার শর্ত মানা হচ্ছে না রাজধানীতে আগেভাগেই কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ আগস্ট ২০১৭

ইজারার শর্ত মানা হচ্ছে না রাজধানীতে আগেভাগেই কোরবানির পশুর হাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে রাজধানীতে পশুর হাট বসানোর কথা। কিন্তু কোনরকম নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে ইতোমধ্যে হাটগুলোতে পশু উঠাতে শুরু করেছেন ইজারাদাররা। যদিও দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইজারার শর্ত অনুযায়ী আগে থেকে হাটের প্রস্তুতি চলতে পারে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে হাট বসানোর সুযোগ নেই। এদিকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলীতে আশানুরূপ পশু এলেও এখনও ক্রেতাশূন্য। বিক্রেতারা জানালেন, ক্রেতারা আসছেন, ঘুরে ফিরে দেখছেন। কেউবা দরদাম করছেন। তারা জানালেন, এই হাটে সাধারণত কোরবানির ঈদের তিনদিন আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। সরেজমিনে বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র ঈদ-উল আযহা সামনে রেখে রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। হাটগুলোর প্রবেশমুখে সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি বাঁশের খুঁটি ও তার দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়েছে পশু রাখার জন্য। পোস্টারের পাশাপাশি পশু বিক্রির জন্য মাইকেও জোরেশোরে চালানো হচ্ছে প্রচার, লিফলেট বিতরণ চলছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলি ছাড়িয়ে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কের দেয়ালে দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে পশুর হাটের প্রচারের পোস্টার। বাদ যায়নি অভ্যন্তরীণ পরিবহনগুলোও। বাস-ট্রাকেও লাগানো হয়েছে পশুর হাটের পোস্টার। ইজারাদাররা পশু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করেছেন এরই মধ্যে। পশুর বেপারিদের থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী হাট বসানোর নির্ধারিত সময় হতে এখনও বেশ কয়েকদিন বাকি থাকলেও তর সয়নি ইজারাদারদের। দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় সবক’টিতেই বিক্রির জন্য পশু উঠানো হয়েছে। তবে জমে উঠেনি বেচা-কেনা। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে কোরবানির পশুর হাট বসানোর কথা। ঈদের দিনসহ মোট চার দিন। সেই হিসাবে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে অস্থায়ী পশুর হাট বসার কথা। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইজারাদারদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা মানতে নারাজ ইজারাদাররা। তারা বলছেন, আগাম হাট না বসালে দূরদূরান্ত থেকে আসা পশুর বেপারিরা বিপাকে পড়বেন। একসঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে পশু আসা শুরু করলে ঢাকা শহর অচল হয়ে যাবে। পশুগুলো সুশৃঙ্খলভাবে রাখাও মুশকিল হবে। মহাসড়কে যানজট হবে তীব্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদ বলেন, নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে হাটে বেচাকেনা শুরু করা যাবে। তবে নির্ধারিত এ সময়ের আগেই হাটে পশু উঠানো হচ্ছে জেনেছি। কিন্তু লোকবলের স্বল্পতার কারণে সব সময় সঠিক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে কর্পোরেশন আন্তরিক রয়েছে। গুরুতর কোন অসঙ্গতি দেখা গেলে সেখানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। শনিবার গাবতলীর পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গরু বেঁধে নিয়ে যাওয়ার জন্য দড়ি ও গরুকে সাজানোর জন্য নানা রকমের কাগজের ফুলের দোকানও বসেছে এ হাটে। এছাড়া হাটের মূল ফটকের পাশেই বিভিন্ন ধরনের ঘাস, খড় বিক্রি করা হচ্ছে। যশোর থেকে গাবতলীর হাটে গরু নিয়ে আসা জামাল উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, শুক্রবার বিকেলে কয়েকজন মিলে ১৬টি গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। শনিবার মধ্যরাতের দিকে হাটে পৌঁছেছেন। সকালে ট্রাক থেকে গরু নামিয়ে রেখে তারা সকাল থেকে বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং গরুগুলোকেও বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। জানালেন, হাটে আশানুরূপ ক্রেতা নেই। সে কারণে গরুগুলোকে বিশ্রামে রেখে তরতাজা করে তুলছেন। ওই ব্যবসায়ী আরও জানান, কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদের সময় ঢাকায় গরু বিক্রি করতে আসেন তারা। একাধিক ব্যবসায়ীকে দেখা গেল, তারা হাঁড়ি-পাতিল, চাল-ডাল ইত্যাদি নিয়ে হাটে এসেছেন। জানালেন, ঈদের এখনও কয়েক দিন বাকি। তাই এ আয়োজন। গাবতলী হাটের ভেতরে হাসিলঘরের পাশে কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা শরীফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, নিজের বাড়িতেই তার ছোট একটি ছাগলের খামার রয়েছে। প্রতিবছরই ঈদের সময় নিজের খামারের ছাগল নিয়ে ঢাকায় আসেন বিক্রির জন্য। এ বছর হাটে নয়টি ছাগল নিয়ে এসেছেন। শরীফ হোসেন জানান, প্রতি বছর গাবতলীর পশুর হাটে বিক্রেতা আসার পর পশু রাখার জায়গা নির্ধারিত হয়। এ বছর ঈদের হাটে পশু রাখার জায়গা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ হয়নি। এ কারণে ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আর তাঁর ছেলে গিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ছাগল রাখার ব্যবস্থা করতে। গাবতলীর পশুর হাটের মূল ফটকের পাশেই বিভিন্ন ধরনের ঘাস, খড় বিক্রি করা হচ্ছে। ঘাস বিক্রি করতে আসা হামেদ আলী জানালেন, এই হাটে সারা বছরই ঘাস বিক্রি করেন তিনি। তবে কোরবানির ঈদে হাটে গরু-ছাগল বেশি আসে, তাই তার বিক্রিও বেশ ভাল হয়। এক আঁটি ঘাস পাঁচ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। তবে হাট পুরোদমে শুরু হলে এ ঘাসের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন ১০ টাকায় বিক্রি করবেন এক আঁটি ঘাস। এদিকে গাবতলী হাটের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে থেকে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে দুটি অস্থায়ী কন্ট্রোলরুমও। গাবতলী পশুর হাটের সভাপতি মজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই যেন কোন প্রতারণার শিকার না হন, সে কারণেই এসব নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×