ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৭ আগস্ট ২০১৭

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত...! কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ নয়নে মোর নাই তবু নিন্দ, মোর প্রাণে শুধু জাগে তোমার মদিনারই পথ। ইয়াসরিব! এককালের আরবের গোত্র দ্বন্দ্বে বিক্ষত অঞ্চল। হানাহানি আর পরস্পর অবিশ্বাসে যেখানে বসবাস করা রীতিমতো হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী হজরত মুহম্মদ (স) সেখানে হিজরত করেন। তিনি ইয়াসরিবে প্রতিষ্ঠিত করেন শান্তি ও পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ। মানুষ তার চতুর্দিকে সমবেত হতে থাকেন। তাঁর পুতঃ পরশে ইয়াসরিবে প্রাণস্পন্দন জাগে, দিন দিন কোলাহলময় হয়ে এক সময় ইয়াসরিব পরিণত হলো শহরে। নয়া নামেও ভূষিত হলো। ইয়াসরিব হলো মদিনাÑ মাদিনাতুর রাসূল বা রাসূলের (স) শহর। সেই থেকে দেশ-দেশান্তরের মুসলিম-অমুসলিমরা ছুটে এসেছে মদিনায়। হজরতের (স) ওফাতের পরেও এই শহরের আবেদন সমান থাকে। বরং যত মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে, ততই বাড়ছে মুসলমানদের ব্যস্ততা, রূপলাভ করেছে অযুত-কোটি মানুষের ভালবাসার তীর্থস্থান হিসেবে। কারণ এখানেই চিরশায়িত আছেন আমাদের সকলের প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (স)। এখানে শুয়ে আছেন তার প্রিয় সাহাবীগণ, ইসলামের মহান শহীদান। মহানবী (স) এখানকার একটি অংশকে বেহেশতের টুকরা বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, মা-বাইনা ক্ববরী ওয়া মিম্বারী রাওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ্- আমার মাজার এবং আমার মিম্বরের মাঝখানে বেহেশতের অন্যতম বাগান। সে হিসেবে ইয়াসরিব হলো মদিনা আর মদিনা হলো মুমিনদের কাছে বেহেশতের নমুনা। সাত সাগর তেরো নদী সাঁতরে সকল উম্মতে মুহম্মদির পরম লক্ষ্য থাকে সে পুণ্যভূমিতে যাওয়ার এবং হজরতের (স) মাজার জিয়ারত ও সেখানে নামাজ আদায় করার। মদিনায় নবীর মসজিদে নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে এক রাকাত নামাজ আদায় করবে সে ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সাওয়াব পাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করবে, তার জন্য শেষ বিচারের দিন সুপারিশ করা আমার জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।’ তিনি আরও সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে, ‘যে ব্যক্তি হজ করে গেল অথচ আমার কবর জিয়ারতে এলো না সে প্রকারান্তরে আমার সঙ্গে গোস্তাকি করে গেল। তাই হাজীদের কাছে কা’বার আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে মদিনা জিয়ারতও অন্যতম কর্মসূচী থাকে। এর মাধ্যমে তারা অর্জন করে হজরতের (স) সে পুতঃ সুসংবাদ, পরকালে শাফায়ত পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ, পায় অফুরন্ত সাওয়াব ও মোবারক আসহাবে কেরামের স্মৃতিবিজড়িত নানা নিদর্শনের পরিচয়। সে সৌভাগ্যপ্রাপ্তির স্বাক্ষর হাজীদের দিতে হবে স্ব স্ব দেশে ফিরে এসে, স্ব স্ব সামাজিক পরিবেশে পবিত্র ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্মৃতি প্রচার করে। পরিশেষে ফরিয়াদ করি, সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানের নসিব হোক মাদিনা আল মুনাওয়ারার সে স্বর্গীয় পরিবেশে নিজকে অন্তত একবার অবগাহনের।
×