ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফসল না ওঠা পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৭ আগস্ট ২০১৭

ফসল না ওঠা পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে

সমুদ্র হক, মাহমুদুল আলম নয়ন ও আবু জাফর সাবু ॥ শনিবার সকল রাস্তা যেন এক হয়ে মিশে গেল যমুনা তীরের বগুড়া সারিয়াকান্দি ডিগ্রী কলেজ মাঠে। বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠান পরিণত হলোÑ জনসভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বললেন, নদীমাতৃক এ দেশে নৌকাই একমাত্র বাহন। আর নৌকা যখন ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশর মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। মানুষ কিছু পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বন্যাক্রান্ত কোন মানুষের খাদ্যের অভাব হবে না। যাদের বাড়িঘর নষ্ট হয়ে গেছে তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। কৃষকরা যাতে ফের ফসল উৎপাদন করতে পারে সে জন্য বীজ চারাসহ সকল উপকরণ দেয়া হবে। যে সকল শিক্ষার্থীদের বইপুস্তক বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের বইপুস্তক দেয়া হবে। তিনি জানান, খাদ্যের অভাব হবে না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে ১৫ লাখ টন খাদ্য আমদানি করা হয়েছে। চাল আমদানির শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন আগামী ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর একশততম জন্মদিনে সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। এর পরের বছর ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তিতে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে বগুড়া নগরী থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে যমুনা তীরের সারিয়াকান্দিতে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। কথা ছিল শেখ হাসিনা ডিগ্রী কলেজ মাঠে শুধু ত্রাণ বিতরণ করে বক্তব্য দেবেন। তবে চারদিকে থেকে বন্যার ঢলের মতো জনস্রোত শেষ পর্যন্ত ওই বিতরণ অনুষ্ঠানকে জনসভায় পরিণত করে। এর আগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে একইদিন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। গাইবান্ধায় ত্রাণ ও ধানের চারা বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বোরো ফসল চাষে পুনর্বাসন ও সহায়তা দেয়া হবে। এবারের বন্যায় কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে যেখানে কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়েছে সেখানে কৃষকদের চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হবে। এছাড়া প্রতিটি কৃষক যাতে এক বিঘা জমি চাষ করতে পারে সে জন্য তাদের কৃষি পুনর্বাসনের আওতায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে। এ দেশের মানুষ যাতে ভাল থাকে সে জন্য আমাদের সরকার সবসময় চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহাদার মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রীর সাদা ও নীল রঙের হেলিকপ্টার নির্ধারিত সময় বেলা আড়াইটায় পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অবতরণ করে। এরপর তিনি মোটরযোগে ত্রাণ বিতরণ স্থলে গিয়ে পৌঁছেন। চারদিকে তখন জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই দেশে বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হবে। এটাই স্বাভাবিক। এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ সব সময় প্রস্তুত থাকে। যেমন এবার বন্যা শুরুর সময় থেকেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ত্রাণ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়, সেনা দফতর, পুলিশসহ জরুরী সকল দফতর ২৪ ঘণ্টা খোলা ছিল। দুর্যোগে এ দেশের মানুষের যেন খাওয়ার কষ্ট না হয় তা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। তার সকল ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৩ সাল থেকে তিন বছর দেশে আগুন জ্বালিয়ে এ্যাসিড বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা করে দেশকে কি নারকীয় তা-বে পরিণত করেছিল। ওই দলটি ক্ষমতায় আসে ভোগের জন্য। তিনি জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতায় চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি যা দরকার সবই দেয়া হবে। ঘরহারা মানুষের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। বন্যার পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত সকল সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বন্যায় যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের সকল ধরনের ঋণ দেয়া হবে। এ ঋণ প্রদান অব্যাহত থাকবে। ক্ষতিগ্রস্তদের যাতে সুদ দিতে না হয় সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী সারিয়াকান্দিতে সুধী সমাজ ও বন্যা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। গাইবান্ধায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুঃখ কষ্ট নিরসনে বন্যা পুনর্বাসনে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। বন্যার পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত নদী ভাঙ্গনকবলিত, বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও কৃষকদের পুনর্বাসন কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। বন্যার পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত কৃষি ঋণের কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সুদ মওকুফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শনিবার গোবিন্দগঞ্জের বোয়ালিয়ার হেলিপ্যাডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবতরণ করেন ১০টার পর। এরপর তিনি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ পূর্বে তিনি বক্তব্য রাখেন। এরপর তিনি গাইবান্ধা জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী ও আমন ধানের চারা বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুধী সমাজ, বন্যা ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর বগুড়া যান প্রধানমন্ত্রী। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ও মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাড. কামরুল ইসলাম, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, যুবলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, ইউনুস আলী সরকার এমপি, গোলাম মোস্তফা এমপি, উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এমপি, গোবিন্দগঞ্জ পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাড. সৈয়দ-শামস-উল আলম হিরু, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চাল করেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।
×