সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩.১৭ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা দিয়ে দেশের ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় দেশে আমদানির পরিমাণ কমেছে। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এর আগে গত বছরের নবেম্বরে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। এরপর ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়নে আসতে সময় লাগল ৭ মাস।
গত বছরের ২১ জুন রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৯৮৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। গত মে মাসের শেষ দিনে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২২৪ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রিজার্ভ। বিদেশী মুদ্রার সঞ্চায়ন ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এলে ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো আকুর আমদানি বিল বকেয়া রাখতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ বছরের মাথায় সেই রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এই হিসাবে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়েছে ৩২ গুণ। সাম্প্রতিক সময়ে রফতানি আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রফতানি হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। এদিকে চলতি অর্থবছরের দশ মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৭৩৭ কোটি ডলার। এ হিসেবে প্রতি মাসে আমদানি ব্যয় ৩৭৩ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, তৈরি পোশাক রফতানির ইতিবাচক ধারাবাহিকতা এবং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাঠানো মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যের দাম কম থাকায় আমদানি ব্যয় কমে গেছে। ফলে রিজার্ভ থেকে কম ব্যয় হয়েছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নতুন এ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর মতে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নির্ভর করে বিদেশী মুদ্রার নোট, বিদেশী ব্যাংকে মজুদ, সরকারের ঋণ, স্বর্ণের মজুদ ইত্যাদির ওপর। বিদেশী মুদ্রার এই মজুদের ওপর নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনীতি, মুদ্রার বিনিময় হার ও বিশ্ব বাণিজ্যে দেশটির অবস্থান। বৈদেশিক মুদ্রার বড় মজুদ একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রাখে এবং গঠনমূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে।