ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় গবেষণায় তথ্য

কীটনাশকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৭ আগস্ট ২০১৭

কীটনাশকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ কীটনাশক ক্রয় থেকে শুরু করে ছিটানো, ছিটানোর সময় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, ছিটানোর পরপরই কৃষি জমিতে প্রবেশ, উন্মুক্ত জলাশয়ে ছিটানোর যন্ত্র ধোয়া, কীটনাশকের পাত্রের বহুমুখী ব্যবহার, বিক্ষিপ্তভাবে কীটনাশক ছিটানো, কীটনাশক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ না থাকা প্রভৃতি কারণে ও কীটনাশকের দীর্ঘমেয়াদী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আর এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য । বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত এক গবেষণায় সাতক্ষীরায় এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও লোকজ আয়োজিত ‘কীটনাশক ব্যবহার ও এর ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস এ্যান্ড ডায়ালগে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। মিট দ্য প্রেসে জানানো হয়, সাতক্ষীরার ৬০০ কৃষকের উপর পরিচালিত ওই গবেষণায় উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৩৪ ভাগ কৃষক কীটনাশক ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৫৩ ভাগ কৃষক ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা, ডায়াবেটিস, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়া, শোনার সমস্যা, কিডনির সমস্যাসহ নানা রোগ আক্রান্ত। গবেষণায় বলা হয়েছে, গবেষণাধীন কৃষকরা দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কীটনাশক মিশ্রিত খাবার খেয়ে, কীটনাশক স্প্রে করার পরপরই হাত বা শরীর না ধুয়ে খাবার খেয়ে, পানি দূষণের মাধ্যমে, প্রতিবেশীর ব্যবহৃত কীটনাশক থেকে ও গ্রাউন্ড স্প্রেসহ নানাভাবে কীটনাশক দ্বারা আক্রান্ত হন। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, স্প্রে করার সময় উত্তরদাতাদের মধ্যে ৭৫ ভাগ কৃষকের উপর সরাসরি কীটনাশক ছিটকে পড়েছে এবং কৃষি ক্ষেত থেকে এক কিলোমিটারের চেয়ে কম দূরত্বে বসবাস করে ৮৭ ভাগ কৃষক। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৪ ভাগ কৃষক কখনই কীটনাশক ছিটানোর সময় প্রতিরোধমূলক পোশাক পরেন না। গবেষণায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় ৬ দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো- কীটনাশক ক্রয়, ব্যবহার, সংরক্ষণ ও সেটি নষ্ট করার সময় ব্যক্তিগত সাবধানতার পাশাপাশি পরিবেশও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- সেবিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, কীটনাশকের পাত্রগুলো পরিবারের অন্যান্য কাজে ব্যবহার না করে পরিবেশসম্মত উপায়ে নষ্ট করা এবং স্ব স্ব কোম্পানিকে এই দায়িত্ব নিয়ে যারা খালিপাত্র ফেরত দেবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা, কীটনাশক যাতে কৃষিকাজ ব্যতীত অন্য কাজে ব্যবহার করা না হয় সে বিষয়ে সকলকে সচেতন করা, সর্বোপরি উৎপাদনকারী, ভোক্তা ও সরকারের কৃষি বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টাতেই কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে মাটির ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব। লোকজের নির্বাহী পরিচালক দেব প্রসাদ সরকারের সভাপতিত্বে গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন বারসিক ইনস্টিটিউট অব এ্যাপ্লাইড স্ট্যাডিজের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম ও শেখ তানজির আহমেদ।
×