ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্ক সবসময় তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে

কে এই ‘রকস্টার বাবা’ রাম রহিম সিং

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৭ আগস্ট ২০১৭

কে এই ‘রকস্টার বাবা’ রাম রহিম সিং

ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে শুক্রবার হরিয়ানার একটি আদালত ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছে, যা নিয়ে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে রীতিমতো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কথিত এ ধর্মগুরুর পুরো নাম গুরমিত রাম রহিম সিং (৫০)। সংক্ষেপে রাম রহিম নামেই পরিচিত। ১৯৬৭ সালের ১৫ আগস্ট রাজস্থানের গঙ্গানগর জেলার গুরুসর মোদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন। ব্যক্তি জীবনে রাম রহিম তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক। ভারতে যে ৩৬ জন ব্যক্তি জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান, রাম রহিম তাদের মধ্যে অন্যতম। হরিয়ানা-পাঞ্জাবে অন্তত ৫ লাখ প্রত্যক্ষ ভক্ত আছে গুরমিত রাম রহিমের। তাদের দাবি, সারা বিশ্বে রাম রহিমের ছয় কোটি ভক্ত আছে। তবে বিতর্ক সব সময় রাম রহিমকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে। তিনি নিজেও অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি ডেরা সাচ্চা সৌদা নামের একটি সম্প্রদায়ের নেতা। হরিয়ানার সিরসায় তার হাইটেক আশ্রম। সবসময় তাকে ঘিরে থাকে সশস্ত্র ব্যক্তিগত রক্ষী বাহিনী। শিখ, হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলেই তৈরি হয়েছে তার ধর্মীয় সম্প্রদায়। ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। শাহ মস্তানা নামের এক ধর্মগুরু এর পত্তন করেন। বর্তমান প্রধান গুরমিত সিং ১৯৯০ সালে সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের ভার নেন। তিনি একাধারে ধর্ম প্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, সিনেমার নায়ক ও পরিচালক। অনেকগুলো চলচ্চিত্র তিনি তৈরি করিয়েছেন। সেই সব ছবিতে নিজেই নানা রকম স্টান্টও দেখিয়েছেন তিনি। হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচ্চা সৌদা আশ্রমের প্রাঙ্গণে নিয়মিত বসে পপ কনসার্ট। সেখানে ডেরার প্রধান গুরমিত সিং নিজেই গান করেন। তার তুমুল জনপ্রিয় গান হচ্ছে, ইউ আর মাই লাভ। চাকচিক্যময় পোশাক পরে গানের ভিডিওতে পারফর্ম করার জন্য অনেকে তাকে ‘রকস্টার বাবা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি তিনটি সিনেমা তৈরি করেছেন যেগুলো অনেক বিতর্কের পর কয়েকটি ভারতীয় ভাষায় মুক্তি পায়। এমএসজি: মেসেঞ্জার অব গড’ সিরিজের যে সিনেমাগুলোতে রাম রহিম নিজেই নায়ক গুরুজির অভিনয় করেছেন সেই সিনেমা দেখতে এসে কয়েক হাজার গাড়ির কনভয় বেশ কয়েকবার দিল্লীর কাছের গুরগাঁও এলাকা অচল করে দেয়। শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্তি ॥ ১৯৯৮ সালে বেগু গ্রামের এক শিশু ডেরার জিপে চাপা পড়ে মারা যায়। এতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ডেরার বিরোধ শুরু হয়। সেই খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের ধমক ও হুমকি দেয়া হয়। পরে ডেরা সাচ্চা সৌদা ও সাংবাদিকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির মিটমাট হয়। যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ॥ ২০০২ সালের মে মাসে ডেরা সাচ্চা সৌদার এক নারী ভক্ত গুরমিত রাম রহিমের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেনামী চিঠি পাঠান। সেই চিঠির একটি প্রতিলিপি পাঞ্জাব-হরিয়ানার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছেও পাঠান ওই নারী ভক্ত। দুই মাসের মধ্যেই ডেরা সাচ্চা সৌদার পরিচালন সমিতির এক সদস্য রণজিৎ সিং খুন হন। পরিচালন সমিতির সদস্যরা সন্দেহ করেন, রণজিৎ আশ্রমের সাধ্বী তার বোনকে দিয়ে ওই বেনামী চিঠি লিখিয়েছিলেন। সাংবাদিক হত্যা ॥ ২০০২ সালে সিরসা থেকে প্রকাশিত সান্ধ্য দৈনিক ‘পুরা সচ’ (সম্পূর্ণ সত্য) পত্রিকার সম্পাদক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে তার বাড়ির সামনেই গুলি করা হয়। সাংবাদিকরা বিভিন্ন জায়গায় ধরনা প্রদর্শন করতে থাকেন। এক মাস পরে, দিল্লীর একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ছত্রপতির। আবারও পাঞ্জাব-হরিয়ানার হাইকোর্ট সাংবাদিক ছত্রপতি ও রণজিৎ সিং হত্যার মামলা দুটি একত্র করে সিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিরোধ ॥ ২০০৭ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় যে, গুরমিত এমন পোশাক পরেছেন যেগুলো দশম শিখ ধর্মগুরু গোবিন্দ সিংয়ের পোশাকের মতো। শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা এ জন্য বিক্ষোভ করেন ও তার কুশপুতুল দাহ করেন। শিখ সম্প্রদায়ের এক বিক্ষোভে গুলি চালানো হয়। ওই গুলিতে এক শিখ যুবক মারা যায়। শিখ সম্প্রদায় গুরমিতের গ্রেফতারির দাবিতে আন্দোলন করেন। তখন থেকেই ডেরা প্রধান গুরমিত পাঞ্জাব প্রদেশে নিষিদ্ধ হন। বিচারককে হুমকি ॥ দুটি হত্যা ও ধর্ষণের মামলার তদন্ত করে সিবিআই যখন গুরমিত রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তখন বিচারক তাকে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন ২০০৭ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে। ওই বিশেষ আদালতের বিচারককে হুমকি চিঠি দেয়া হয়। সাবেক ম্যানেজারকে গুম-খুন ॥ ২০১০ সালে ডেরার সাবেক সন্ন্যাসী রামকুমার বিষ্ণোই হাইকোর্টের কাছে অভিযোগ জানান, আশ্রমের সাবেক ম্যানেজার ফকির চাঁদকে গুম-খুন করা হয়েছে। ডেরা প্রধান রাম রহিমই ওই গুম-খুনের আদেশ দিয়েছেন। আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়ার পর ডেরা সমর্থকরা পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানে ব্যাপক হাঙ্গামা চালায়, সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করে, বহু বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। ডেরার সাধুদের নপুংসক করা ॥ হংসরাজ চৌহান নামের এক ব্যক্তি ২০১২ সালে হাইকোর্টে মামলা করেন, ডেরা প্রধান রাম রহিমের নির্দেশে আশ্রমের চার শ’ সাধুকে নপুংসক করা হয়েছে। -বিবিসি ও এনডিটিভি।
×