ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নানামুখী চাপ উপেক্ষা করে তদন্ত চালান সাবেক সিবিআই কর্মকর্তা

‘রক গুরু’ জালে জড়ালেন যেভাবে

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৭ আগস্ট ২০১৭

‘রক গুরু’ জালে জড়ালেন যেভাবে

ভারতের ‘রক গুরু’ খ্যাত গুরমিত রাম রহিম সিং-কে ধর্ষণ মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় শুক্রবার গ্রেফতারের পর একজন অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই কর্মকর্তা জানান, এ মামলার তদন্ত চলাকালে কি পাহাড়সম বাধা তাকে অতিক্রম করতে হয়েছিল। মুলিনজা নারায়ণন নামে এ কর্মকর্তা বলেন, নিজ দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক ও ধনাঢ্য প্রভাবশালীদের নানামুখী চাপ উপেক্ষা করে এ তদন্ত কাজ পরিচালনা করা তার কাছে কঠিন বলে প্রতীয়মান হয়েছিল মুলিনজা নারায়ণন, সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) একজন নিবেদিত প্রাণ চৌকস অফিসার ছিলেন। এ বিভাগের তিনিই একমাত্র কর্মকর্তা যিনি নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতা বলে একজন সাব-ইন্সপেক্টর থেকে জয়েন্ট ডিরেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। মুলিনজা ৩৮ বছরের কর্মজীবন শেষে ২০০৯ সালে অবসরে যান। মুলিনজা নারায়ণন তার মেধার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯২ সালে শ্রেষ্ঠ পুলিশ পদক এবং ১৯৯৯ সালে রাষ্ট্রপতি পদকে ভূষিত হন। পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাতকারে মুলিনজা নারায়ণন বলেন, ২০০২ সালের ১২ ডিসেম্বর এ ধর্ষণ মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পর একদিন অপ্রত্যাশিতভাবে একজন উর্ধতন সিবিআই কর্মকর্তা আমার অফিস কক্ষে এসে মামলাটি ক্লোজ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে আমাকে কোন ধরনের তৎপরতা না চালানোর কথাও বলেন। নারায়ণন বলেন, একটি ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দেয়ার জন্য একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার অতি উৎসাহী তৎপরতা আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে কৌতূহলি করে তোলে এবং আমি এ বিষয়ে তদন্তের গভীরতায় যেতে মনস্থির করে ফেলি। কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে গিয়ে প্রথমেই ধর্ষিতা দুই নারীর নাম পরিচয় উদঘাটনে জটিলতার সম্মুখীন হই। কারণ, রকগুরু রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা বেনামী চিঠিতে বলেছিল, তারা ‘ভেরা সাচ্চা সৌদা’ সদর দফতরে তাদের আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত সিং কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন। এই বেনামী চিঠির সূত্র ধরে একজনকে পাওয়া গেলেও অপরজনের সন্ধান পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৯ সালে এবং এ তিন বছরের মধ্যে ধর্ষিতা মেয়েটি গুরুবাবার আশ্রম ত্যাগ করে অন্য আরেকজনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। তার সন্ধান পাওয়ার পর তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের গুরমিত সিংয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদানে রাজি করতে আমাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি মেয়েটির সঙ্গে তার পিতার মতো একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। অবশেষে মেয়েটি শুধু ঘটনার আনুপূর্বিক বিবরণই দেয়নি, সে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গিয়ে হলফনামা সহকারে এর বর্ণনা দেয়। আমি আঁটঘাট বেঁধে এ কাজগুলো করেছিলাম এ জন্য, পরবর্তী সময়ে যাতে কেউ সাক্ষ্যদানের কাগজপত্র সরিয়ে ফেলে মামলাটি ভিত্তিহীন প্রমাণ না করতে পারে। কিন্তু আমার সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড়ের এসব তৎপরতা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় ক্ষমতাসীন দল ও বাইরের অনেক ধনিক গোষ্ঠী ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দেয়ার জন্য আমার ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। আমার দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তারা যারা আমাকে আগে থেকেই জানতেন তারা এবার আমার অধস্তনদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে অনুরোধ জানায় যাতে আমি গুরমিত সিংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ বন্ধ করে দেই। কিন্তু তাদের কথায় কান না দিয়ে আমি গুরমিত সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে মনস্থির করে ফেলি। নারায়ণন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় গুরমিত সিংকে বেশ ‘উদ্বিগ্ন’ মনে হচ্ছিল। তিনি আমার কথার কোন সরাসরি জবাব দিতে পারছিলেন না বরং একজন আধ্যাত্মিক ‘গুরুবাবা’র মতো আচরণ করছিলেন। কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম, তিনি এ জঘন্য অপরাধের অপরাধী। পিটিআই।
×