ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে ৫ লক্ষধিক মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ

প্রকাশিত: ০১:৪৪, ২৬ আগস্ট ২০১৭

রংপুরে ৫ লক্ষধিক মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ স্মরণকালের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় ৪ শতাধিক গ্রামের ৫ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জেলায় ৫ শতাধিক ল্যট্রিন ও ৬শতাধিক নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় মানুষ, পশুপাখির খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ঘাঘট, যমুন্বেশী ও করতোয়া নদী ভাঙ্গনে রংপুর সিটি কর্পোরেশন, সদর উপজেলা, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, বদরগজ্ঞ উপজেলার ৭৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৩৭টি ইউনিয়নের ৪ শতাধিক গ্রামের ৫ লক্ষাধিক মানুষ বন্যার পানিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলার বন্যা কবলিত চতরা, চৈত্রকল, টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপাড়া, ফুয়াদপুর, ১৪নং ফুয়াদপুর, চন্ডিদুয়ার, লামাঘাষিপুর, চক ভ্যাকা, গোয়ালবাড়ি, বদনা পাড়া, কাটা দুয়ার,জল মহল, বাইটকামারী, হলদিবাড়ি, গাংদুয়ার, ফরিদপুর, খান শ্যামপুর, কুমারপুর, সুরানন্দপুর, শিমুলবাড়ি, মেরির পাড়া, ধর্মদাসপুর, রামনাথপুর , দূর্গাপুর গ্রামের কোন কোন স্থানে হাঁটু, কোমর ও বুক এবং অথৈ পানি এখনও রয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও ব্রীজ-কালভার্ট, পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘর-বারান্দায় স্থান নিয়েছে মানুষ, গরু ছাগল। বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। নৌকা আর কলা গাছের ভেলায় চলাচল করতে হচ্ছে ওই ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বন্যার্তদের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষ জানান, পানিবন্দি মানুষদের সরকারী সাহায়্য সার্ধমত দেয়া হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া, আলমবিদিতর, লক্ষিটারী, কোলকোন্দ, লোহানী, গজঘন্টাসহ সদর ইউনিয়নের জয়রাম ওঝা, শংকরদহ, চর ইশোরকুল, গান্নারপাড় , চর মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা, হাজিপাড়াসহ অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এদের অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গৃহপালিত পশু-পাখিসহ পার্শ্ববর্তী উচু জায়গায় ও তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিষয়ে লক্ষীটারী ইউ.পি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তার ইউনিয়নের চর শংকরদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমানে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে হুমকির মূখে রয়েছে। এছাড়াও ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের কাচনা, শাহপাড়া, হাড়িয়ারকুটি ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী, মামুন পাড়া, সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট, চিলাপাক, আলমপুর ইউনিয়নের মধুরামপুর, তেঁতুলতলা, চাকলা এবং কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম। ওই সব পানিবন্দি দুস্থ ও অসহায় মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন। কাশিয়াবাড়ী এলাকার পানিবন্দি আজিজার রহমান, রিমু বালা, জয়ন্তী বালা, অতুল চন্দ্র জানান, গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় তারা ঘরে বসে আছেন। হাতে কাজকর্ম না থাকায় ঘরে কোনো খাবার ছিল না। এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি। কাউনিয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্গত এলাকার মানুষের দূর্ভোগ কমেনি। কোন কোন বাড়িতে হাটু থেকে কোমার পর্যন্ত পানি রয়েছে। ৪ ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ ১৭টি গ্রামে চলছে খাদ্য সংকট। সেই সাথে বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। টেপামধুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান নদীর পানি বৃদ্ধিপেয়ে ইতি মেধ্য বেশ কিছু গ্রামে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান ইতি মধ্যে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রাম গুলোতে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে ও সাথে সাথে নদীর ভাঙ্গনও শুরু হয়েছে। বন্যায় পীরগাছা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ের বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পানির নীচে তলিয়ে গেছে , উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ইট, সিমেন্ট,পাথর দিয়েও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তররের পরিসংখানে জেলায় ৫ শতাধিক ল্যট্রিন ও ৬শতাধিক নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ কারণেই মানুষ ও পশুপাখির বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৭৪ হাজার ৫০৫টি। এসব পরিবারেরর মোট সদস্য প্রায় ৩ লাখ ২২ হাজার ৫২৫ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সরকারিভাবে জেলা প্রশসানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬০ টন চাল ও ৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় জরুরী চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও এখনো তা মেলেনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচারক স ম আশরাফ আলী বলেন, রংপুর জেলায় ৩৬ হাজার ২০০ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত ও ১ হাজার ৩১৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আরও ত্রাণ সরবরাহের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পত্র দেওয়া হয়েছে। এ বারের বন্যায় ফসল, গবাদিপশু, মৎস্য, বসতবাড়ি, ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
×