ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যক্তিগত নয়, দলগত সাফল্যই মূল লক্ষ্য তামিমের

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ আগস্ট ২০১৭

ব্যক্তিগত নয়, দলগত সাফল্যই মূল লক্ষ্য তামিমের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রাতটা পেরোলেই মাঠে গড়াবে বল। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সব ক্রিকেটারেরই নতুন অভিজ্ঞতা হবে। এর আগে বর্তমান বাংলাদেশ দলের কেউ অসিদের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলেননি। এমন একটি ম্যাচে ক্যারিয়ারের নতুন এক মাইলফলক ছুঁতে চলেছেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। কিন্তু সেটাকে শুধুই একটা সংখ্যা বলেই মনে করছেন তিনি। কারণ ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের সাফল্য আনতে দারুণ কোন নৈপুণ্য দেখাতেই বেশি মনোযোগী তামিম। দাবি করলেন দলগতভাবে বাংলাদেশ সবগুলো ম্যাচেই জয়ের প্রত্যাশা নিয়েই নামবে। তিনি জানালেন দুই টেস্টেই জেতার চেষ্টাও করবে দল। শুক্রবার দুপুরে অনুশীলনের আগে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে। তারপর থেকে নিজেকে একজন অপরিহার্য ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান ও সেঞ্চুরির মালিক তামিম। এখন ৫০তম টেস্টে নামার অপেক্ষায় আছেন তিনি। কিন্তু ক্যারিয়ার শুরুর পর কখনও চিন্তাই করেননি এত টেস্ট খেলা হবে। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘সত্যি কথা কোন সংখ্যা মাথায় ছিল না- কতগুলো ম্যাচ খেলব বা এতগুলো ম্যাচ খেলব। যখন টেস্ট ক্রিকেট শুরু করি বা আমার অভিষেক হয় তখন মাথায় এটা ছিল যত লম্বা সময় বাংলাদেশের হয়ে খেলা যায়। ওটাই লক্ষ্য ছিল। একটা সময়ও মনে হচ্ছিল আমরা যেভাবে টেস্ট খেলছি তাতে ৫০টা টেস্ট খেলতে পারব কিনা তা নিয়েই সন্দেহ হচ্ছিল। এখন আমাদের অনেক ক্রিকেট বেড়েছে। টেস্ট বেশি খেলছি আগের তুলনায়। এখন থেকে যাদের অভিষেক হবে তাদের জন্য সংখ্যা নির্ধারণ সহজ হবে আমাদের চেয়ে।’ ৯ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর টেস্ট ম্যাচের অর্ধশতক হচ্ছে তামিমের। কিন্তু নিজের এই অর্জনের চেয়ে নিজের নৈপুণ্যে দলের জন্য অবদান রাখাই মূল লক্ষ্য বলে জানালেন তিনি। তামিম বলেন, ‘বাড়তি কোন রোমাঞ্চ নেই। ৫০তম টেস্ট একটি বিশেষ উপলক্ষ। আমার পারফর্মেন্স বা দলের নৈপুণ্য দিয়ে এটাকে আরও বিশেষ করা যায় কিনা ওই লক্ষ্য থাকছে। এটা ভাল একটি অর্জন। আমি আর সাকিব ৫০তম টেস্ট খেলতে যাচ্ছি। দিন শেষে এখানে মনে রাখার মতো কোন পারফর্মেন্স, ফল যদি না হয় তখন এটা শুধুই একটা সংখ্যা হয়ে থাকবে। আমি আমার দিক থেকে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব। সাকিবও তাই।’ বাংলাদেশ দল দীর্ঘ বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলেছে এতদিন। যে কারণে দল হিসেবেও খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি দল। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ১৭ বছরে মাত্র ১০০ টেস্ট খেলেছে তারা। কিন্তু এখন দল হিসেবে মর্যাদা বেড়েছে টাইগারদের। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘যদি শেষ দুই বছর দেখেন এই সময়ে আমরা খুব ভালর দিকে এগোচ্ছে। সামনে যদি আরও এক বছরের কথা চিন্তা করেন সেখানেও কিন্তু আমরা ৬/৭টা টেস্ট খেলব। এটা ইতিবাচক লক্ষণ আমাদের জন্য। এই ফরমেটে আমাদের এখনও অনেক উন্নতির বাকি আছে। আমার মনে হয় আগামী দেড় বছর সঠিক সময় যেখানে আমরা নিজেদের একটা ভাল টেস্ট দল হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’ তামিম এবং বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ওপর দল এখন অনেক বেশিই নির্ভরশীল। কিন্তু তামিম মনে করেন বাংলাদেশ দল ১১ জন খেলোয়াড়ের ওপরই নির্ভর করে এগোয়। এছাড়া এই টেস্ট সিরিজে শুধু বাংলাদেশী স্পিনারদের নিয়ে কথা হলেও এ ওপেনার দাবি করেন বাংলাদেশের পেসারদের ওপরও যথেষ্ট আস্থা রাখে। বিশেষ করে মুস্তাফিজুর রহমানের ওপর নির্ভরতার কথা জানান তামিম। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় স্পিন নিয়ে আমরা সবাই কথা বলছি। ওরাও স্পিন নিয়ে বেশ কথা বলছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের স্কোরকার্ড যদি দেখেন ওদের সেরা পেসাররা কিন্তু উইকেট পেয়েছিল। আমরা শুধু স্পিন নিয়ে যে চিন্তা করছি তা না। আমরা একটা ব্যাপার জানি, আমরা অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে খেলছি যারা খুব পেশাদার আর দারুণ একটা দল। ওদের সঙ্গে ভাল করতে হলে পেস বলেন, স্পিন বলেন- সব ভাল করে সামলাতে হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের যদি ভাল খেলতে হয়, রান করতে হয় ওদের সবধরনের বোলিংয়ের বিরুদ্ধেই রান করতে হবে। আমাদের যদি এগিয়ে থাকতে হয় তাহলে তাদের খুব ভাল বল করতে হবে। বিশেষ করে সাকিব, মুস্তাফিজ, মিরাজের। ওরাই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোলার। ওরা যদি ভাল পারফর্মেন্স করতে পারে তাহলে অবশ্যই আমরা এগিয়ে থাকতে পারব।’ অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম মারকুটে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে দুর্দান্ত ও সফল একজন ব্যাটসম্যান মনে করেন তামিম। তাকে দ্রুত আউট করাই লক্ষ্য থাকবে টাইগারদের এবং এছাড়াও বিশ্বমানের কয়েকজন ব্যাটসম্যান আছে তাদের বিরুদ্ধেও পরিকল্পনা আঁটছে দল। দলের লক্ষ্য নিয়ে তামিম বলেন, ‘আমার মনে হয় ২-০ করতে হলে আগে ছোট ছোট ব্যাপারগুলো ঠিকভাবে করতে হবে। ২-০ বলে দিব আর হয়ে যাবে তাও না। যে দলই জিতুক, আমি সবসময়ই বলছি প্রতিটি সেশন, প্রতিটি বল লড়াই করতে হবে। সবসময়ই একটা কথা বলে আসছি মাঠে বাস্তবায়ন করতে হবে। যে দল মাঠে ভালভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে তাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। দিন শেষে আমরা দল হিসেবে চেষ্টা করব যেন দুটি টেস্টই জিতি। যখন নামব, আমরা চিন্তাই করব যে জেতার জন্য নামছি।’
×