ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটে বিশেষ শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৬ আগস্ট ২০১৭

ছায়ানটে বিশেষ শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর দশটি মানবসন্তানের মতো তারাও মেধাবী। একটু সুযোগ পেলে তারাও হতে পারে সৃজনশীল। অটিস্টিক পরিচয়কে ছাপিয়ে হয়ে এসব বিশেষ শিশুরা ধারণ করতে পারে শিল্পী পরিচয়কে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এমন বিশেষ শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় মুখরিত হলোÑ ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। উপস্থাপিত হলো, সঙ্গীতসহ তাদের নানামুখী পরিবেশনা। ছায়ানটের আয়োজনে অটিস্টিক শিশুদের প্রতিভা বিকাশের ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘সুরের জাদু রঙের জাদু’। প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে প্রতিভা আছে। এ বিষয়টা ভাবনায় নিয়ে বিশেষ শিশুদের বিকাশে ২০০৮ সাল থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে ছায়ানট। সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার বিশেষ শিশুদের চিত্রাঙ্গন ও সঙ্গীত শেখানো হয়। সুরের ভেতর দিয়ে, রং-তুলি মধ্য দিয়ে তারা ধীরে ধীরে কথা বলতে শেখে। শুধু কথা বলা হয়, তাদের বুদ্ধিরও বিকাশ হয়। পাশপাশি তারা গান ও ছবি আঁকা শেখে। ছায়ানটের এ কার্যক্রমের শিক্ষার্থী ২০ জন। তাদের অংশগ্রহণেই ছুটির দিনে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। আয়োজনের শুরুতে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা। বিশেষ শিশুদের বিশেষ যতœ ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়ার তাগিদ দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক বলেন, বিশেষ শিশুরা কোন না কোন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্ম নেয়। সমাজ তাদের অবহেলা করে, তাদের পরিবার ও সমাজের বোঝা মনে করে। এটা কোনভাবেই ঠিক নয়। কেননা যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে ওরা স্বাভাবিক মানুষের মতো সবকিছু পারে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ছায়ানটে বিশেষ শিশুদের জন্য কাজ করছেন ডাঃ লীডি হক। সঙ্গীত ও চিত্রকলার কাজ পরিচালনা করেন অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা। শুরুর দিকে ক্লাস নিতেন ড. সোহানা আহমেদ, শিল্পী আলী আক্তার শাহীন। ২০০৯ সাল থেকে গান শেখাচ্ছেন সুমন নরম্যান কাম্পু। ছবি আঁকা শেখাচ্ছেন শিল্পী লুবনা ইয়াসমীন বীথি এবং চারুকলার শিক্ষার্থী লায়লা ফজল হীরা। ডাঃ লীডি হক বলেন, অটিস্টিক শিশু মনোজগতের উন্নয়নে ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশে^র নানা দেশে সঙ্গীত ও শিল্পকলা এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে কাজ করছে। সঙ্গীত ও শিল্পকলা অস্থিরতা কমাতে পারে, মনোযোগ বাড়াতে পারে। সংবেদনশীলতার সমস্যার উন্নয়ন ঘটাতে পারে। ছড়া ও গানের মাধ্যমে কেউ কেউ কথা বলতে শিখেছে। সঙ্গীত ও চিত্রকলার মধ্য দিয়ে নিজের পছন্দ ও চাহিদা প্রকাশ করছে কেউ কেউ। এ পদ্ধতিতে কাজ করলে ওদের আত্মবিশ^াস গড়ে উঠবে। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সুমন নরম্যান কাম্পুর পরিচালনায় মঞ্চে উঠে একদল অটিস্টিক শিশু-কিশোর। শুরুতেই তারা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে শোনায় ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ এবং ‘ব্যর্থ প্রাণের আর্বজনা পুড়িয়ে ফেলে’ গান দুটি। তখন পাশেই ছিলেন অটিস্টিক শিশুদের মা-বাবারা। শিশু-কিশোররা গান গাইছে তা দেখে মা-বাবারা নির্মল আনন্দ প্রকাশ করে। সমবেত গান শেষে মঞ্চে উঠে কিশোর তিখন। সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে শোনায় রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গামাটির পথ’ গানটি। গান শেষে উপস্থিত দর্শকশ্রোতারা বিপুল করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। এরপর আবারও একক সঙ্গীত। গেয়ে শোনায় আদিত্য। শিশু আদিত্য পরিবেশন করে ‘ ও জোনাকি, কী সুখে ওই ডানা দুটি’ গানটি। তানভীর গেয়ে শোনায় ‘আমরা সবাই রাজা’। অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত বন্ধু নিশা ও ফাইজার উদ্দেশে বিশেষ শিশুরা গেয়ে শোনায় ‘লাল ঝুঁটি, কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না’। অনুষ্ঠানে সমবেত কণ্ঠে শিশু-কিশোরা গেয়ে শোনায় ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’. ‘প্রজাপতি প্রজাপতি’, ‘চল্ চল্ চল্ চল্’ ইত্যাদি গান। একক কণ্ঠে গান শোনায় অহনা, আজিমুশ^ান, হিরক, জারিফ, সৈকত, সাবাব, মারজুক, রায়হান, অনন্ত, দুরন্ত ও আদিল। বিশেষ শিশু-কিশোরদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। শর্ট ফিল্ম ফোরামের ৩১ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলন গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম। সময়ের বহমানতায় প্রতিষ্ঠার ৩১ বছর পূর্ণ করল সংগঠনটি। সাফল্যের সেই উদ্যাপনে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয়তলায় বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্টার অডিটোরিয়ামে প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আজ শনিবার দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুক্রবারের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনে কাটা হয় কেক। ছিল উন্মুক্ত আলোচনা ও সংগঠনের সদস্যদের স্মৃতিচারণা। এতে অংশ নেন শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেন রাজু, উপদেষ্টাম-লীর দুই সদস্য চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসিন মুরাদ ও জাহিদুর রহিম অঞ্জন, চলচ্চিত্র পরিচালক আকরাম খান প্রমুখ। আজ শনিবার দ্বিতীয়দিনের আয়োজন শুরু হবে বেলা ২টায়। এদিন থাকবে শুধুই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শিত হবে ১৯৮৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নির্মিত নির্বাচিত স্বলদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
×