ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

’২১ সালের মধ্যে সবাই আসছে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৬ আগস্ট ২০১৭

’২১ সালের মধ্যে সবাই আসছে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায়

ফিরোজ মান্না ॥ দেশের সব মানুষকে ২০২১ সালের মধ্যে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে জনগণের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুযোগ-সুবিধা। এ জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘বাংলাগভনেট ও ইনফো সরকার-২’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উপজেলাকে ফাইবার অপটিক কেবলের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। বাংলাগভনেট ও ইনফো সরকারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে সব ইউনিয়নকে সংযুক্ত করতে ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের কাজ চলছে। হাতে নেয়া হয়েছে ‘স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ নামের আরও একটি প্রকল্প। এ ছাড়া দুর্গম এলাকাকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ‘কানেক্ট বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ অল্প দিনের মধ্যে শুরু হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, দেশের সব মানুষকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সরকার বেশ কয়েক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলো ২০২১ সালের আগেই শেষ হবে। সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ইনফো সরকার-৩। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের সব ইউনিয়নকে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে এক হাজার ৪ ইউনিয়নে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এর আগে ইনফো সরকার-২ নামের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ উপজেলা ফাইবার কেবলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। তবে কিছু উপজেলা দুর্গম হওয়ায় নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এগুলোকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে কানেক্ট বাংলাদেশ নামের একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় ‘ওয়ারলেস’ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হবে। দেশের কোন মানুষ যেন ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইন্টারনেট এখন মানুষের অধিকারের মধ্যে চলে এসেছে। এই সুবিধা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে আরও কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাঈদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ঘোষণার পর সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আগামী বছরে এ সংখ্যা বেড়ে ৬০ শতাংশে চলে যাবে। আর ২০২১ সালে হবে শতভাগ। আমরা এ জন্য নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে উদ্ভাবনগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। স্টার্টআপদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতাসহ মনিটরিং করা, তাদেরকে বৈশ্বিক পরিম-লে পৌঁছে দেয়াও আমাদের উদ্দেশ্য। এ জন্য ইনোভেশন ডিজাইন এ্যান্ড এন্টারপ্রেনিউরশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, দেশে গত কয়েক বছরে কয়েকটি আইসিটি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলাগুলো থেকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের কাছ থেকে জ্ঞান ভাগ করে নিতে পেরেছেন। এর ফলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা সমৃদ্ধ হয়েছেন। আমাদের উদ্দেশ্য প্রযুক্তি সেবা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি, তরুণদের অংশগ্র্রহণ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ ও উদ্যোক্তা তৈরি করা। দেশে গত বছর পাঁচ লাখ ল্যাপটপ, তিন কোটি মোবাইল, ৬০ লাখ স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে। এক্ষেত্রে আমদানির পরিবর্তে উৎপাদন ও এ্যাসেমব্লিং করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। ল্যাপটপ, মোবাইল উৎপাদনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এগুলো এ পার্কে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আমরা শুধু সফটও্যয়ার তৈরি করতে চাই না। হার্ডওয়্যার তৈরি করতে চাই। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেয়া হচ্ছে সহযোগিতা। সরকারের সহযোগিতায় এই খাত সমৃদ্ধ হচ্ছে। দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সূত্র জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করছে। চীন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ১৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহযোগিতা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পরে এটাই সবচেয়ে বড় অর্থ সহযোগিতা পেয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। চীনের এই টাকা দিয়ে ‘টিয়ার-৪ ডেটা সেন্টার’ স্থাপনের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সরকারের ‘ইনফো সরকার-৩’, ‘এস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্পের লোন এ্যাগ্রিমেন্টও অনুমোদন দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে চীন কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করে দেয়ারও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনের পরে কোরিয়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে। কোরিয়া মহেশখালি দ্বীপকে ‘ডিজিটাল দ্বীপ’ করে দিচ্ছে। আরও কয়েকটি দেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সবার আগে গোটা দেশকে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা।
×